বিশ্ব

চীনের উহান এখন ভুতুড়ে শহর

চীনের-উহান-এখন-ভুতুড়ে-শহর
সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ। এ শহরে ঢোকা কিংবা বের হওয়া নিষিদ্ধ। উহানসহ কয়েকটি শহরে ঘরবন্দী জীবন কাটাচ্ছেন কোটিরও বেশি মানুষ

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ঠেকাতে চীনের উহান, হুবেইসহ ১৩টি শহর পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন ৪ কোটিরও বেশি মানুষ। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন, বন্ধ বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা সব। সবচেয়ে করুণ দশা উহানের। এ যেন ভুতুড়ে শহর…

 

পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন, শহরবাসী যেন গৃহবন্দী ।। চীনের উহান এখন ভুতুড়ে শহর …ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল চীনের উহান শহরে স্থানীয় সরকার বাস, ট্রেন, বিমান সব বন্ধ করে দিয়েছে। দোকানপাট বন্ধ…

পরিজন, বন্ধু, সহকর্মী- প্রতিদিন মিলছে কারও না কারও করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের খবর। কেউ কেউ মারা যাচ্ছেন। মৃত্যু আতঙ্ক সব সময়। ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ। স্কুল-কলেজ, কর্মপ্রতিষ্ঠান, কারখানা সব বন্ধ। ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল চীনের উহান শহরে স্থানীয় সরকার বাস, ট্রেন, বিমান সব বন্ধ করে দিয়েছে। দোকানপাট বন্ধ। মাস্কপরা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে শীতকালীন ছুটি। ফলে ক্যাস্পাস ফাঁকা, উহান শহরটা একদম জনশূন্য। আতঙ্ক এবং উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে সবার মাঝে। রাস্তায় নেই গাড়ি। বাজারও বন্ধ। শহর ছেড়ে কেউ বাইরে যেতে পারছেন না। ফিরতে পারছেন না নিজ দেশে। বিমানবন্দর বন্ধ। কত দিন এভাবে থাকতে হবে তা জানে না কেউ। চীনের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ কয়েকটি দেশ, বিমান পরিবহন সংস্থা। চীনের সঙ্গে যখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের এমন চিত্র তখন উহান, হুবেই প্রদেশের ছবি আর বলে দিতে হয় না। ঘরের ভিতর বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন সবাই। শহর ছেড়ে কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। শপিংমল বন্ধ, বাইরে নেই গণপরিবহন। রাস্তা পুরো ফাঁকা। কোটি মানুষের পথচলা যে শহর উহান, তা যেন এখন ভুতুড়ে শহর। জানুয়ারির ২৩ তারিখ থেকে এই সংকটের শুরু উহানে। উহান শহরকে কার্যত কোয়ারেনটাইন করে রাখা হয় তখন থেকে। উহানের সঙ্গে পুরো চীনের বিমান ও রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই রকম নির্দেশনা জারি করা হয় হুবেই প্রদেশের জিয়ান্তাও ও চিবি শহরের জন্য। মাত্র দুই দিন পরেই করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা আঁচ করতে পারে  চীন। উহান, জিয়ান্তাও, চিবি শহরের পাশাপাশি হুবেই প্রদেশের আরও ১৩ শহরকে ‘লকডডাউন’ করে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে করে ৪  কোটি ১০ লাখ মানুষ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। চীনের সব জনপ্রিয় ভ্রমণ কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে সম্পূর্ণ হুবেই প্রদেশকে লকডডাউন করে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে চীনে নববর্ষের সব আয়োজনও স্থগিত করা হয়। বাড়ানো হয় নববর্ষের ছুটি। পাশাপাশি হংকংয়ে করোনাভাইরাস আতঙ্কে নববর্ষের উৎসব স্থগিত এবং চীনের মূল ভূখন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় ওই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। জানুয়ারির ৩০ তারিখ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা জারি করে। করোনাভাইরাস চীনের মূল ভূখন্ডের প্রত্যেকটি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

 

জানালা খুলে কখনো গান, কখনো চিৎকার

ফুরাচ্ছে খাবার, মৃত্যু আতঙ্ক

 এক দিন যেন এক বছরের সমান

উহানসহ হুবেই প্রদেশের সাতটি রাজ্যে এখন একেকটি দিন যেন এক বছরের সমান দীর্ঘ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ভয় তো রয়েছেই সঙ্গে গৃহবন্দী জীবন তাদের দুঃসময়ের চরম রূপ দেখাচ্ছে। কারও সঙ্গে দেখাও করতে আসছে না কেউ। ঘরে বসে শুধু খবর শোনা আর পরিজনের স্বাস্থ্যের খোঁজ, উৎকণ্ঠায় দিন পার করতে হচ্ছে। ঘরে যা খাবার ছিল তাও শেষের পথে অনেকের। যাদের আর দিন চলছেই না তারা বাইরে বেরোলেই বারবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্যে পড়ছেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ঘরে এসে স্বাস্থ্যের খোঁজ নিচ্ছেন নিয়মিত। বাইরে বেরোলে মুখে মাস্ক চাই। মাস্ক না পরলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। স্বাস্থ্য বার্তা প্রচার হচ্ছে টেলিভিশন, রেডিওতে। গৃহবন্দী জীবন কাটছে সবার। ঘর ছেড়ে বাইরে বেরোতে না পারায় দম বন্ধ লাগা দশা উহানবাসীর। বারান্দায় দাঁড়াচ্ছেন কেউ। করোনাভাইরাস যখন উহানে ছড়িয়ে পড়ে তখন চীনে নতুন চন্দ্রবছরের উৎসব হওয়ার কথা। সবাই নতুন কাপড় কিনেছেন। বিশ্বের নানা প্রান্তে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। প্রতি বছর এ দিনটিতে চীনারা পরিবারের কাছে ফিরে যান। পরিবারের সদস্যদের জন্য থাকে উপহার। কিন্তু এবার সব মাটি হয়ে গেল। উহানের বাসিন্দারা  নিজের ফ্ল্যাট থেকেও বের হননি। ঘরের জানালায় দাঁড়িয়ে ঘরে আলো জ্বেলে সমস্বরে উহানের মঙ্গল কামনায় সেøাগান দিলেন। বুকে সাহস রাখার গান গাইলেন। এক ভবন থেকে আরেক ভবনে এমন গান যেমন সুরে সুরে চলছিল তখন কেউ কেউ চিৎকার করেন বেদনায়, কান্নায়। একটি বাড়ির জানালা থেকে এমন চিৎকার শুরু হওয়ার পর পাশর্^বর্তী বাড়িগুলোর বাসিন্দারাও চিৎকার করতে শুরু করে। গোটা ব্লকের চিৎকার শুনে অন্য ব্লকের বাসিন্দারাও জানালার পাশে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে সাহস জোগানোর জন্য।

 

এই সেই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস

চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে গত ডিসেম্বরে ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয়। এরপর তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ জোনাথন বল বলছেন, ‘এটা কোনো একটা প্রাণীর শরীর থেকে এসেছে।’ করোনাভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্ক আছে চীনের উহানের দক্ষিণ সমুদ্রের খাবারের পাইকারি বাজারের সঙ্গে।  রোগটির কোনো প্রতিষেধক নেই। তবে চীনের একদল চিকিৎসকের দাবি, ভাইরাসটি নির্মূলে যে নতুন ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছেন তাতে তারা সফল হয়েছেন। চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন শিনহুয়া নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীদের এ দাবি প্রকাশিত হয়েছে।

 

চীনের হুবেই প্রদেশের হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড়। হাসপাতালগুলোতে পা ফেলার জায়গাও নেই। মৃতের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। টানা চিকিৎসা দিতে গিয়ে খাওয়া, ঘুম কিংবা এক মুহূর্ত বিশ্রামেরও সুযোগ মিলছে না চিকিৎসকদের। ক্লান্তি আর মৃত্যুর মিছিল দেখে ভেঙে পড়ছেন চিকিৎসকরাও

হাসপাতালে ভিড়, মৃত্যুর মিছিল, টানা কাজে কাঁদছেন চিকিৎসকরা

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনের হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। শহরের সব হাসপাতালেই রোগীর ভিড়। কোথাও পা ফেলার জায়গা  নেই। প্রতিদিন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধে নেমেছেন চীনের চিকিৎসকরা। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের দম ফেলারও সময় নেই। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে চীনের চিকিৎসকদের। উহানে নজিরবিহীন পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। তারা বিশ্রাম ছাড়াই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছেন। নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়েই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। অনেকে টানা ২৮-৩০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করছেন। এরই মধ্যে দেশটিতে জাতীয় বীরের মর্যাদা পেয়েছেন তারা। এক চিকিৎসক বিজনেস ইনসাইডারকে বলেছেন, ‘হাসপাতালগুলো রোগীতে ভরে গেছে। হাজার হাজার রোগী হাসপাতালগুলোতে ভর্তি আছেন। আমি কখনো হাসপাতালে একসঙ্গে এত রোগী দেখিনি।’ রোগীদের শরীর থেকে যেন এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য পুরো শরীর ঢাকা পোশাক এবং মাস্ক পরে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে তাদের। এই পোশাক বার বার খোলাটাও বেশ কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বার বার পোশাক বদলাতে রাজি নন তারা। অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে, রাতে ঘুমানোর জন্য বাড়ি যাওয়ার সুযোগ মিলছে না। ফলে বাধ্য হয়ে হাসপাতালের চেয়ার, বেঞ্চ এমনকি মেঝেতেও ঘুমিয়ে নিচ্ছেন অনেক চিকিৎসক। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, টানা কাজের চাপ আর ক্লান্তিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেক চিকিৎসক। অনেকেই চিৎকার করছেন এবং কেঁদে যাচ্ছেন।

 

ড্রোন দিয়ে নজরদারি, রাস্তায় পড়ে আছে মরদেহ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখতে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করছে চীন। যে শহরগুলোতে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে সেখানে ড্রোন দিয়ে নজরদারি শুরু করেছে তারা। ভাইরাসের সংক্রমণ  ঠেকাতে কথা বলতে সক্ষম ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। যেসব নাগরিক মাস্ক পরেননি এবং নিষেধাজ্ঞা না মেনে ঘরের বাইরে বেরিয়েছেন তাকে বকা দিয়ে সতর্ক করছে এই ড্রোনগুলো। তারা রাস্তায় বের হওয়া নাগরিকদের ছবি তুলে সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়ে দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। কাউকে মাস্ক পরা অবস্থায় না পেলেই সতর্কবাণী করছে ড্রোন। নাগরিকদের সতর্ক করে ড্রোন বলছে, ‘তাড়াতাড়ি মাস্ক পরো।’ করোনাভাইরাস ঠেকানোর অংশ হিসেবে ওষুধ ছিটিয়ে দিতেও চীন ড্রোন ব্যবহার করছে। পুরো শহরজুড়ে এই ড্রোন দিয়ে পরিচ্ছন্নতার কাজও করা হচ্ছে।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত কারও কাছে ঘেঁষতে নিষেধ করছেন চিকিৎসকরা। এই পরিস্থিতিতে চীনের উহান শহরে এক বৃদ্ধের মরদেহ পড়ে থাকলেও তার কাছে যায়নি কেউ। এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুখে মাস্ক পরিহিত এক ব্যক্তির লাশ রাস্তায় পড়ে আছে। বয়স আনুমানিক ৬০। তার এক হাতে রয়েছে বাজারের ব্যাগ। তার মৃত্যু করোনাভাইরাস থেকেই হয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দূর দিয়ে দুই-একজন মানুষ হেঁটে গেলেও কেউ লাশের কাছে যাওয়ার সাহস করছেন না। উহানে ফুটপাথে পথচারীর সংখ্যা হাতেগোনা। আবার যারা পাশ দিয়ে যাচ্ছেন কেউ ভয়েও কাছে যাচ্ছেন না। উহান শহরের পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ এই ছবি তারই প্রমাণ। একটি জরুরি পরিসেবার গাড়ি আসার আগ পর্যন্ত মরদেহটি এভাবেই পড়েছিল। পরে সুরক্ষামূলক জামা পরিহিত চিকিৎসাকর্মীরা মরদেহটি গাড়িতে তুলে নেয়। একটি বন্ধ ফার্নিচার দোকানের সামনের ফুটপাথে পড়েছিল মরদেহটি।

 

উহানের আকাশে এ কীসের ধোঁয়া

গত সোমবার সকাল। উহানসহ হুবেইয়ের সাতটি শহরের আকাশ ছেয়ে যায় হলদে কুয়াশায়। এ কীসের ধোঁয়া- প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায়নি কেউ। নগরবাসী ঘুম ভেঙে এমন ধোঁয়া দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ঘরের জানালা বন্ধ করে দেন। শিশু ও বিশেষ করে যাদের শ্বাসতন্ত্রের রোগ রয়েছে তাদের ঘরে অবস্থান করার পরামর্শ দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে স্থানীয় জিনহুয়া সংবাদমাধ্যম। এ ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে যায় নেতিবাচক একটি গুজব। কেউ কেউ বলতে শুরু করেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের দেহাবশেষ পোড়ানোর কারণেই এমন ধোঁয়ায় আকাশ ছেঁয়ে গেছে!  এই খবরের সত্যতা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। জিনহুয়া তাদের খবরে বলে, ধারণা করা হচ্ছে, কোনো রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগা ও অন্য কিছু পোড়ানোর কারণে এমন ধোঁয়া বের হতে পারে। এ ছাড়া কোনো কৃষক হয়তো তার শস্য খেতে পুড়িয়েছেন, যে কারণে এ ধোঁয়া সৃষ্টি হয়েছে।

 

জীবন্ত প্রাণী কেনাবেচার যে বাজার নিয়ে হইচই

উহানকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুরোপুরি নিশ্চিত না হলেও উহানের একটি অবৈধ সামুদ্রিক প্রাণী, জীবন্ত পশু-প্রাণীর একটি বাজার থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বাজারটি রয়েছে হোয়ানান অঞ্চলে। করোনা ভাইরাসের কথা সর্বপ্রথম জানান, উহানের এই চিকিৎসক ডা. লি। গত ডিসেম্বরে তিনি খেয়াল করলেন- যেসব নতুন রোগী জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন তাদের উপসর্গগুলোর মধ্যে অদ্ভুত একটা মিল রয়েছে ২০০৩ সালের মহামারী সার্স রোগের উপসর্গের মতো। তিনি এও দেখলেন, আক্রান্ত রোগীদের সবাই উহান সিটির হোয়ানান বাজারের আশপাশের যেখানে সাপ, বাদুড়, শিয়াল, কুকুর ইত্যাদি হিংস্র প্রাণীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খাবারের জন্য বিক্রি হয়। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে চীন সব প্রজাতির বন্যপ্রাণীর উৎপাদন, পরিবহন ও বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সেই বাজারটিও বন্ধ করে দেয়।

 

সেই চিকিৎসকেরও মৃত্যু করোনা ভাইরাসে

চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. লি করোনাভাইরাস নিয়ে গত বছর প্রথম সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিলেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে পুলিশ গুজব ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছিল। পরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে তার কাছে ক্ষমা চায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি এই চিকিৎসকও মারা যান করোনাভাইরাসে।

 

ভাইরাসের মতোই ছড়াচ্ছে গুজব

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী। চীনের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত সর্বত্রই এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের থাবা বসেছে। ভাইরাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে নানা গুজব। কীভাবে এই ভাইরাস ছড়াল, কারা ছড়াল এসব নিয়ে তো নানা মত আছেই। সঙ্গে অপপ্রচার তো রয়েছেই। এসব গুজব অহেতুক আতঙ্ক ছড়াচ্ছে মানুষের মধ্যে। নামসর্বস্ব কিছু অনলাইন পোর্টাল, ফেসবুক-টুইটারে এই গুজব বেশি ছড়াচ্ছে এক শ্রেণির মানুষ। করোনাভাইরাস নিয়ে ছড়ানো গুজবের মধ্যে রয়েছে- চীন জীবাণু অস্ত্র বানাতে গিয়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানায় এক ইসরায়েলি গোয়েন্দা। কিন্তু এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসরায়েল। আরেকটি গুজব ছিল, চীনের বিদঘুটে খাদ্যাভ্যাসে থাকা বাদুড়ের স্যুপ-সামুদ্রিক সাপ থেকে এটি ছড়িয়েছে। বাদুড়ের স্যুপ খাওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেটি আসলে চীনে ধারণ করা হয়নি। এটিও গুজব। করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি এর চিকিৎসাপদ্ধতি ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়েও বিস্তর গুজবের ডালপালা মেলছে। এ ধরনের গুজবে অহেতুক আতঙ্কিত না হয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুরক্ষা গাইডলাইন মেনে চলা উচিত।

 

 

উহানসহ অন্তত চারটি শহরের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে চীন। রাস্তায় ব্যারিকেড ফেলা হয়েছে। এ রাস্তা দেখে কে বলবে, এক কোটি মানুষের বসবাস এ নগরে?


 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বন্ধ করে রেখেছে রেলস্টেশন। একই দৃশ্য এয়ারপোর্টে। কেউ বাইরে বেরোলেই পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে তিনি রোগাক্রান্ত কিনা।


 

শহরের প্রতিটি রাস্তা, ফুটপাথ ধুয়ে পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে। পথে কাউকে দেখলে তাকেও জীবাণুনাশক ছিটিয়ে রোগ সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে।


 

উহানসহ অন্তত দুটি শহরে ১০ দিনের ব্যবধানে তৈরি হয়েছে তিনটি হাসপাতাল। তবু রোগীর সংকুলান হচ্ছে না। প্রতিদিনই হাজার হাজার রোগী ভর্তি হচ্ছে।


 

শহরে গাড়ি, বাজার সব বন্ধ। খাবার বা কোনো কিছু কেনার দরকার হলে কিছুই করার নেই। রোগাক্রান্ত হওয়ার ভয়ে কেউ কারও সঙ্গে দেখাও করছেন না।  চীনের উহান এখন ভুতুড়ে শহর …

আরও পড়ুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ                                 

কানাডার সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 − 3 =