দেশের সংবাদ ফিচার্ড

বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র

নিউইয়র্ক টাইমসের মন্তব্য প্রতিবেদন  বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র শিক্ষা নিতে পারে বলে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। ‘হোট ক্যান বাইডেন’স প্ল্যান ডু ফর পোভার্টি? লুক টু বাংলাদেশ’ শিরোনামে নিকোলাস ক্রিস্টোফের লেখা এ মন্তব্য প্রতিবেদনটি বুধবার প্রকাশিত হয়েছে।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশ তার সবচেয়ে অব্যবহৃত সম্পদ দরিদ্রদের পেছনে বিনিয়োগ করেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রান্তিকরা ও অনুৎপাদনশীলরা সবচেয়ে বেশি নজরে পড়েছেন। কারণ, এখান থেকেই সবচেয়ে বেশি রিটার্ন আসতে পারে।

একই কথা সত্য হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও। আমরা আমাদের বিলিয়নিয়ারদের কাছ থেকে অধিক পরিমাণ উৎপাদনশীলতা কমিয়ে আনতে যাচ্ছি না।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে সাতটি শিশুর মধ্যে একজন শিশু, যারা অর্থের অভাবে হাইস্কুলের গ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন করতে পারে না-যদি আমরা তাদের সাহায্য করতে পারি, তাহলে এ দেশটি ব্যাপক সুবিধা পাবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এ কারণেই জো বাইডেন শিশুদের দারিদ্র্য দূর করার উদ্যোগ নিয়েছেন। হয়তো তিনি সেটা পারবেন। এজন্যই এটা কেন্দ্রীয় ইস্যু হয়ে উঠেছে। রিফান্ডেবল চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিট স্থায়ীভাবে সৃষ্টি করা উচিত।

বাংলাদেশ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রান্তিক পর্যায়ে থাকা শিশুদের পেছনে বিনিয়োগ শুধুই সহানুভূতি জানানো নয়। একই সঙ্গে তা জাতিকে মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহায্য করে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে নৈতিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে কলঙ্কিত একটি বিষয় হলো-ইতিহাসে এ দেশটি সব থেকে ধনী ও সবচেয়ে শক্তিধর। তা সত্ত্বেও শিশুদের দারিদ্র্যের লেভেল এখানে আশ্চর্যজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বুধবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের রেসকিউ প্ল্যান চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সেই কলঙ্ক মুছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে শিশু দারিদ্র্য দ্রুত হ্রাস করবে।

কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষণায় বলা হয়েছে, যদি এসব পদক্ষেপ স্থায়ী হয়, তাহলে শিশু দারিদ্র্য অর্ধেক কমে যেতে পারে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সোশ্যাল সিকিউরিটির মাধ্যমে যেমনটা করেছিলেন, তার সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে শিশুদের উন্নতি ঘটাতে পারেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

এটা মার্কিন নীতির এক বিপ্লবের প্রতিনিধিত্ব করে এবং বিলম্বে স্বীকার করে নেওয়া হয় যে, দরিদ্র শিশুদের জন্য অর্থ বিনিয়োগের দায়িত্ব আছে সমাজের সবার।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গণহত্যা, অশান্ত অবস্থা ও দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে ৫০ বছর আগে এ মাসে জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের।

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ সব ছবি দেখে তখনকার বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার তলাবিহীন ঝুড়ি বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তার এ উক্তি ব্যাপকভাবে আলোচিত-সমালোচিত হয়।

এতে এ উক্তি বিখ্যাত হয়ে ওঠে। তিনি আসলে দেশটির তখনকার আশাহীনতাকে বোঝাতে চেয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে একটি ঘূর্ণিঝড়ে কমপক্ষে এক লাখ মানুষ মারা যান।

ওই পরিস্থিতি কভার করে আমি দ্য টাইমসে একটি হতাশাজনক লেখা লিখেছিলাম। তাতে বলেছিলাম, দেশটি প্রথমত দুর্ভাগা। আমি সঠিক ছিলাম এ জন্য যে, শুধু জলবায়ু পরিবর্তন নয়, বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।

কিন্তু সর্বোতভাবে আমার সেইসব হতাশা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তারপর থেকে প্রায় তিন দশক ধরে বাংলাদেশ ব্যতিক্রমী অগ্রগতি অর্জন করেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার অবিচ্ছিন্নভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের মতে, বর্তমান করোনা মহামারির আগে চার বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রতিবছরে বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৭ থেকে ৮ ভাগ। এটা ছিল চীনের চেয়েও দ্রুত প্রবৃদ্ধির গতি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গড় আয়ুষ্কাল এখন ৭২ বছর। মিসিসিপির ১০টি কাউন্টিসহ যুক্তরাষ্ট্রের অল্প কয়েকটি জায়গার চেয়ে বাংলাদেশের এ গড় আয়ুষ্কাল বেশি।

বাংলাদেশ হয়তো একসময় হতাশার রূপ ধারণ করেছিল। কিন্তু কীভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করতে হয়, তা বিশ্বকে শিখাতে বাংলাদেশের কাছে যথেষ্ট কিছু আছে।

বাংলাদেশে এ গোপন রহস্য কী? এর উত্তর হলো শিক্ষা ও বালিকারা। আশির দশকের শুরুতে এক-তৃতীয়াংশেরও কম বাংলাদেশি স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করতেন।

বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা ছিল বিরল। অর্থনীতিতে তাদের অবদান ছিল উপেক্ষিত। কিন্তু তারপর সরকার ও নাগরিক সংগঠনগুলো নারীদের শিক্ষাসহ শিক্ষাকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ নেয়।

বর্তমানে বাংলাদেশের শতকরা ৯৮ ভাগ শিশু স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে। আরও বিস্ময়কর খবর হলো-এখানে ঐতিহাসিকভাবে লিঙ্গবৈষম্য আছে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে এখন হাইস্কুলগুলোয় ছেলেদের তুলনায় মেয়ের সংখ্যা বেশি।

বাংলাদেশে এবং বিশ্বে অন্যান্য স্থানে ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশি প্রফেসর ড. মুহম্মদ ইউনূস। তিনি আমাকে বলেছেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে নাটকীয় যে জিনিসটি ঘটেছে তা হলো, নারীদের মর্যাদার পরিবর্তন।

এর শুরু হয়েছে সবচেয়ে দরিদ্র নারীদের থেকে। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছেন ড. মুহম্মদ ইউনূস। এটা নারীদেরকে উদ্যোক্তা হিসাবে গড়ে তুলেছে।

বাংলাদেশ যেহেতু নারীদের শিক্ষিত ও ক্ষমতাবান করেছে, এতে ওইসব নারী বাংলাদেশের অর্থনীতির স্তম্ভ হয়ে উঠেছেন। দেশটির গার্মেন্ট কারখানাগুলো নারীদের উন্নত সুবিধা দিয়েছে।

এখন আপনি যে শার্ট পরছেন, তা হয়তো তাদের কেউ একজন বানিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে চীনের পরেই বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তৈরি পোশাকের রপ্তানিকারক এখন বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশকে একটি উৎসাহমূলক কাহিনি হিসাবে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক। ১৫ বছরে এ দেশটি থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে তুলে আনা হয়েছে।

শিশুদের অপুষ্টিতে ভোগার হার ১৯৯১ সাল থেকে প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে এই হার ভারতের চেয়েও কম।

আপনি পাঠক হিসাবে হয়তো মাথা ঝাঁকাচ্ছেন ও মনে মনে বলছেন-অতিমাত্রায় জনসংখ্যার দেশটি অগ্রগতিকে আগের অবস্থায় নিয়ে যাবে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশি নারীদের এখন গড়ে দুটি করে সন্তান আছে। আগে এ সংখ্যা ছিল ৭।

-যুগান্তর

সংবাদটি শেয়ার করুন