কমলগঞ্জের ছয়চিরি দিঘীর পাড়ে ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ১নং রহিমপুর ইউনিয়নের ছয়চিরী দিঘীর পারে দুইশতাধিক বছরের অধিক ঐতিহাসিক চড়ক পূজা ও মেলা বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে হাজার হাজার দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে সমাপ্ত হয়েছে।
সুপ্রাচীন ঐতিহ্যে লালিত মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ১নং রহিমপুর ইউনিয়নের ছয়চিরি দিঘীর পাড়ে সনাতনী পুঞ্জিকা মতে প্রতিবছরের চৈত্র সংক্রান্তিতে ২দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে চড়ক পূজা উৎসব। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। চড়ক পূজা উপলক্ষে বসে বিশাল মেলা। মেলায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বিভিন্ন রকমারী পণ্যের শোভা পায়।
জানা যায়, চড়ক পূজা উৎসবের ১০/১২ দিন পূর্ব থেকে বিভিন্ন এলাকার পূজারীর মধ্যে ৪০/৫০ জন সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষিত হয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিব-গৌরী সহ নৃত্যগীত সহকারে অংশ নেন। এ ক’দিন তারা পবিত্রতার সহিত সন্যাস ব্রত পালন করে নিরামিষ ভোজি থাকেন।
ছয়চিরি দিঘীর পাড়ে ভক্তরা নৃত্য করার জন্য কলাগাছ ও বাঁশের খুটি বেষ্টিত মন্ডলী তৈরী করে। পূজার প্রথম দিন নিশি রাতে তান্ত্রিক মন্ত্র ধারা কাচ পড়া দিয়ে জলন্ত ছাইয়ের উপর মানুষরুপি কালী সেজে নৃত্য করেন। অন্য ভক্তগণ নৃত্যের তালে তালে, ছন্দে ছন্দে ঢোলক, কাশি, করতাল বাজিয়ে থাকেন। এসময় দর্শনার্থীরা জয়ধ্বনি এবং নারীদের কন্ঠে হুলুদ ধ্বনি দিতে থাকেন।
কালীকাঁচ শেষ হওয়ার পর সকালে পূজারীরা পূজা করে পান বাটা দিয়ে চড়ক গাছকে নিমন্ত্রণ জানানো হলে পার্শ্ববর্তী দিঘী থেকে ভেসে উঠে ১০০ ফুট লম্বা চড়ক গাছ। এ গাছের চুড়া থেকে মাচা পর্যন্ত চারটি পাখার মতো করে বাধা হয় চারটি মোটা বাঁশ এবং তাতে যুক্ত করা হয় মোটা লম্বা রশি।
১৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকেল বেলা ভক্তরা মন্ডলীতে বিশাল দা দিয়ে নৃত্য, শিবের নৃত্য ও কালীর নৃত্য দেখানো হয়। নৃত্য শেষে ঐতিহাসিক ছয়চিরি দিঘীতে স্নান করে ভক্তদেরকে লোহার শিকড় শরীরের বিভিন্ন অংশে গাঁথা হয়। বিশেষ করে জিহ্নবা ও গলায় গেঁথে দেয়া হয়। এসময় নৃত্যের তালে তালে চড়ক গাছ ঘুরানো হয়। দেবতার পূজা-অর্চনা শেষে অপরাহ্নে মূল সন্ন্যাসী ৪ জন ভক্তের পিঠে লোহার দু’টি করে বিরাট আকৃতির বড়শি গেঁথে রশিতে বেঁধে ঝুলিয়ে চড়ক গাছ ঘুরানো হয়। এ সময়ে দর্শনার্থীদের অনেকে বাতাসা আর কলা উপরের দিকে উড়িয়ে দেন আর দর্শনার্থীরা তা কুড়িয়ে নেন।
১৫ এপ্রিল শুক্রবার ফেরা চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন দেবতার পূজা অর্চনা করা হবে। ঐতিহ্যবাহী ছয়চিরি দিঘীর চার পাড়ের মধ্যে দিঘীর পূর্বপাড়ে ১টি, উত্তর পাড়ে ১টি এবং দক্ষিন পাড়ে ২টি চড়ক গাছ স্থাপন করে পূজা অনুষ্ঠিত হয়।। করোনার কারণে গত ২ বছর ছয়চিরী দিঘীর পারে চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হয়নি। তান্ত্রিক মন্ত্রের ধারা বিভিন্ন অলৌকিক ধর্মীয় কর্মসূচী উপভোগ করার জন্য অন্যান্য বছরের মত এবারও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে দর্শনার্থীর উপস্থিতি ঘটে।