এবছর ভিন্ন প্রেক্ষাপটে পালিত হতে যাচ্ছে বলতে গেলে করোনাক্রান্ত মহান মে দিবস! ১লা মে মহান মে দিবস হলো আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস। বিশ্বের কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষের সংহতি প্রকাশের গৌরবোজ্জ্বল দিন। মহান মে দিবস হল শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে একটি উৎকর্ষ ও অনুপ্রেরণার দিন । শ্রমিকেরই শ্রমে, ঘামে ও ত্যাগের ওপর ভিত্তি করে গগণচুম্বী অট্টালিকা সহ মানব সভ্যতা গড়ে উঠলেও শ্রমিকরা বরাবরই ছিল উপেক্ষিত ও বঞ্চিত। । ১৮৮৬ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমিকরা দৈনিক আট ঘণ্টা শ্রমের ন্যায্য মজুরির দাবিতে সর্বাত্মক ধর্মঘট শুরু করেছিল। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মালিকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই মিছিল-সমাবেশ করে। দৈনিক ১৫-১৮ ঘণ্টা অমানুষিক পরিশ্রম করার পরও শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হতো। শ্রমজীবি মানুষের আন্দোলনে মালিকপক্ষ আতঙ্কিত ও দিশেহারা হয়ে শ্রমিকের ওপর শাসকগোষ্ঠীর সমর্থনে পুলিশ লেলিয়ে দেয়। শিকাগো শহরের ওই শ্রমিক আন্দোলনে পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে কমপক্ষে ১০ জন শ্রমিক নিহত এবং বহু আহত হয়। আমোরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে পুলিশের গুলিবর্ষণে নিহত শহীদদের মহান আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে পালিত হয় মহান মে দিবস । শ্রমিক আন্দোলনের ওই অধ্যায়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ১৮৯০ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে মে দিবস পালিত হয়ে আসছে । ১৮৯১ সালের আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। এর পরপরই ১৮৯৪ মে দিবসের দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। পরে, ১৯০৪ সালে হলান্ডের আমস্টাডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই উপলক্ষে একটি প্রস্তাবে দৈনিক আটঘন্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবী আদায়ের জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে পয়লা মে তারিখে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজনের জন্য সকল সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং শ্রমিক সংঘের (ট্রেড ইউনিয়ন) প্রতি আহবান জানানো হয়। সেই সম্মেলনে বিশ্বজুড়ে সকল শ্রমিক সংগঠন মে’র ১ তারিখে “বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না করার” সিদ্ধান্ত সর্বসন্মিক্রমে গ্রহণ করা হয়।
ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, চীন, শ্রীলঙ্কা, সহ এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশের ৮০টিরও বেশি দেশে মে দিবস সাধারণ ছুটি ও শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে থাকে । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠন সমূহ রাজপথে সংগঠিতভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে মহান মে দিবস পালন করে থাকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে উদ্যাপিত হয় মহান মে দিবস ।এবার বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে রাজপথে সংগঠিতভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রা হবেনা । শ্রমিকরা দিন-রাত অক্লান্ত শ্রম দিয়েও জীবনের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে পারে না । বৈষম্য হ্রাস করে শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের অধিকার রক্ষার বিষয়ে সরকারসহ সব সামাজিক শক্তিকে শান্তি ও স্হিতিশীলতার বৃহত্তর স্বার্থেই অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে । বর্তমান বিশ্বাায়ন, শিল্পের অটোমেশন ও তথ্যপ্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের প্রেক্ষাপটে মহান মে দিবসের প্রাসঙ্গিকতাকে ভাবতে হবে নতুন করে । এবারের ২০২০ সালে মহান মে দিবসের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন রুপে আবির্ভূত হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস গোটা পৃথিবীকে অরথনৈতিকভাবেও অচল করে দিয়েছে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই বন্ধ রয়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বন্ধ রয়েছে কলকারখানা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান , অফিস–আদালত ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান । করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দেশে দেশে সাধারণ ছুটি সহ লকডাউন চলছে। বুধবার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) জানিয়েছে, বিশ্বের অর্থনীতিতে প্রায় ১.৬ বিলিয়ন শ্রমিক – প্রায় বিশ্বব্যাপী শ্রমশক্তির প্রায় অর্ধেক কর্মসংস্থানের সিঁড়ির সবচেয়ে দুর্বল প্রান্তে – তাদের জীবিকা জব হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন । এমতাবস্থায় সরকার সহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান /শিল্পমালিকদেরই তাঁদের শিল্পকারখানা রক্ষার স্বার্থেই শ্রমিকদের অধিকার ও তাঁদের সুরক্ষায় উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে এবং সরকারকেও দেশ, কর্মসংস্থান ও শিল্প উন্নয়নের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে । ১লা মে মহান মে দিবসে আপনাদের সকলের প্রতি রইলো শ্রদ্ধা, শুভেচ্ছা ও ভালবাসা ।
বিদ্যুৎ ভৌমিক, সাবেক অধ্যাপক, লেখক ও সিবিএনএ’এর উপদেষ্টা
মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা, ১ মে, ২০২০
সিবিএনএ/এসএস
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন