চিত্তপ্রিয় চ্যাটার্জীি-এর একগুচ্ছ কবিতা
জলসাঘর
আমাকে নিয়ে —
তোমার অনেক কৌতুহল,
আমি কোথায় যাই–
কাদের সঙ্গে মেলামেশা করি,
কি আমার কাজ!
কিন্তু কখনো প্রশ্ন করো নি,
চোখের জল মুছে– হাসিমুখে,
আমায় তুমি
আপন করে নিয়েছো।
তোমার ফুলশয্যার রাত ছিল নিঃসঙ্গ!
আমি তখন জলসা ঘরে–উন্মত্ত ফোয়ারায়
তোমার একাকিত্বের যন্ত্রণাকে–
নিষ্ঠুর ভাবে উপভোগ করছি —
সেদিনও প্রশ্ন করো নি,
আমি কোথায় গিয়েছিলাম?
অনেক বছর পর–
আজ আর তুমি নববধূ নও,
এখন তুমি মাতৃত্বের কামনায়
দিন রাত ছটফট করছো,
তবুও প্রশ্ন করো না–
আমার পিতৃত্ব নিয়ে।
তোমার নির্মম সাধনা ব্যর্থ হয়নি,
জলসাঘর ভেঙে গেছে–
বাঈজীরা আর ফিরেও তাকায় না,
চিরকালের মতো নিভে গেছে
অহংকারী ঝাড়লন্ঠনগুলো,
তবুও তুমি আমায় প্রশ্ন করোনি–
দুহাত বাড়িয়ে,আরো নিবিড় ভাবে,
আমাকে আপন করে নিয়েছো।
শূন্য জলসাঘরে —
এখনো মাঝে মাঝে যাই–
একাকিত্বের কি ভীষণ যন্ত্রণা!
বিষণ্ন ঝাড়লন্ঠনগুলোই বলে দেয়,
উদাসীন হয়ে ভাবি —
জলসাঘরের সেই পুরাতন গৌরবের কথা,
এখন তুমিও থাকো আমার সাথে
কিন্তু আজও তুমি প্রশ্ন করো না–
ঠিক জলসাঘরের মতই!
————————————————————
কোথাও আলো নেই
মনে হয় কোথাও আলো নেই,
সত্য কথাই বলেছিলাম–
কিন্তু কেউ বিশ্বাস করেনি,
বহু শতাব্দী ধরে অন্ধকার ধোঁয়া
ধীরে ধীরে পৃথিবীর বুকে
গড়েছে তার অহংকারের সাম্রাজ্য,
প্রকৃতির একান্ত ভালোবাসা
পুড়ে ছাই হয়ে গেছে,
তারই সৃষ্ট মানুষের
আঘাতে আঘাতে।
প্রকৃতির অভিশাপ
প্রতিশোধ হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে
দিক থেকে দিগন্তরে,
মুক্তির পথে অসহায় চোখের জলে
এখনো মাথা নত করেনি
অহংকারী তুচ্ছ মানুষ।
—————————————————-
নিঃশব্দ অভিসারে
যৌবনের অহংকারে
একদিন আমার কাছে এসেছিলে,
আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম,
সেদিন তোমার উন্মত্তরূপ
আমাকেও বিচলিত করেছিল;
তবুও ফিরিয়ে দিয়েছি
আমার বিবেক বোধে
আর এ কথাও আমি জানি
তুমি আবার আসবে
সেদিন রূপের অহংকারে নয়
আসবে তোমার স্নিগ্ধ সৌন্দর্য নিয়ে।
রূপ গর্বিতা –নগরের রন্ধে রন্ধ্রে
অনায়াসে পৌঁছে গেছো
যৌবনের অভিসারে
তারপর বসন্ত চলে গেছে একদিন
নগরের রাজা মহারাজা
নিক্ষেপ করেছে তোমায়
আবর্জনার অন্ধকার স্তূপে।
আজ তুমি অবহেলিত
অসহায়,আশ্রয়হীনা
আজ যদি তুমি আসো
আর ফিরিয়ে দেবো না
অথবা আমি যাবো
তোমার অন্তর -সৌন্দর্যের
নিঃশব্দ অভিসারে!
———————————————–
অক্ষয় তৃতীয়া
জীবনটা অক্ষয় হোক এই আশায়,
তোমার চলার পথে প্রদীপ জ্বেলে
সারারাত দাঁড়িয়ে ছিলাম।
গভীর রাতে– নিঃশব্দ পথে
বার বার কার যেন পদধ্বনি শুনেছি
অক্ষয় প্রতিমার মত আকাশে-বাতাসে
শুনেছি নুপুরের ধ্বনি।
কে যেন সংকেত দিয়ে যায়
নতুন পৃথিবীর শুভ সূচনার
আমার মনের অন্ধকার
ধীরে ধীরে আলোতে প্রস্ফূটিত হয়ে ওঠে,
তুমিও খুঁজে বেড়াচ্ছো আমাকে
আমিও নিঃশব্দ খুঁজে চলেছি।
কোথাও যেন পথের ভুলে
বারবার বিচ্ছিন্ন হয়ে চলেছি
কিন্তু, আজ আমার প্রবল প্রত্যাশা
পথের ভুলে যে পথ হারিয়েছি
অক্ষয় তৃতীয়ার সেই পথ
নতুন করে গোলোকধাঁধায়
হারিয়ে দেবে না।