জীবন ও স্বাস্থ্য

চীনে করোনাভাইরাস সনাক্তে নতুন ‘অ্যাপ’ চালু

চীনে করোনাভাইরাস সনাক্তে নতুন ‘অ্যাপ’ চালু

করোনার ভাবনা সর্বত্র

চীনে করোনাভাইরাস সনাক্তে নতুন ‘অ্যাপ’ চালু  করেছে যা মানুষ কোথায় করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে থাকবে এমন তথ্য সংকেত দিতে একটি অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ) সেবা চালু করেছে চীন সরকার। করোনাভাইরাসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই একজন মানুষকে সতর্ক সংকেত দিতে সক্ষম এই অ্যাপটি। অ্যাপটির নাম রাখা হয়েছে ‘ক্লোজ কন্ট্যাক্ট ডিটেক্টর’। খবর সিনহুয়া’র।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন সরকার ও চীন ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তি গ্রুপ করপোরেশন যৌথভাবে তৈরি করেছে অ্যাপটি । এই নতুন প্রযুক্তিটির মাধ্যমে চীনা সরকার জনগণের নিবিড় পর্যবেক্ষণের কাজকে আরও আলোকিত করতে পারবে বলে ধারণা করছে বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: বিবিসি

করোনার ভাবনা সর্বত্র

করোনা ভাইরাসে ধুঁকছে চীন। দেশটির উৎপাদন ও বাণিজ্য ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। করোনার আতঙ্ক চেপে বসেছে বিশ্বজুড়ে। ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কারণে বড় ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। একদিকে সংক্রমণ ঠেকানোর  প্রস্তুতি অন্যদিকে ব্যাণিজ্য ও উৎপাদন খাতে ধাক্কা সামাল দেয়ার চিন্তা। করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে দেশের ওপর যে বড় ধরণের প্রভাব পড়তে যাচ্ছে তা নিয়ে আগে থেকেই সতর্ক করে আসছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে কি করনীয় এবং কি কি বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া দরকার তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হবে। অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্র তৈরি পোশাক শিল্পে করোনার বড় প্রভাব পড়বে।

প্রভাব পড়বে রপ্তানির অন্যতম খাত চামড়া শিল্পেও। এছাড়া দেশীয় উৎপাদন নির্ভর অনেক খাত চীন থেকে আমদানি নির্ভর কাচামালের ওপর ভিত্তি করে উঠেছে। চীনে সঙ্কট গভীর হলে এসব শিল্পেও বড় প্রভাব পড়বে। এছাড়া যেসব জরুরি পণ্য চীন থেকে আমদানি হয় তা থেমে গেলে এসব পণ্যের জন্য বিকল্প দেশ খুঁজতে হবে। এতে এসব পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড.এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। একই সঙ্গে চিন্তার বিষয়ও। শিল্পক্ষেত্র ও কাঁচামালে এখন নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নেমেছে। রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি কমছে। আমদানি কমছে। রেমিটিন্স ও নেতিবাচক। এ অবস্থায় করোনা ভাইরাস এর পরিস্থিতি আরও জটিল হলে দেশের অর্থনীতিকে বড় সঙ্কট মোকাবিলা করতে হবে। এজন্য আগে থেকেই করনীয় ঠিক করে পরিকল্পনা নিতে হবে।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ইতোমধ্যে নানা কর্মসূচি নিয়েছে। বিদেশ ফেরত সব যাত্রীকে পরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া যেসব যাত্রী চীন থেকে ফেরৎ এসেছেন তাদেরও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দেশের হাসপাতালগুলোতে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি রাখার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সেখানে পরীক্ষা নীরাক্ষা হচ্ছে চীন ফেরৎ অসুস্থ যাত্রীদের নমুনা। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে এ পর্যন্ত কোন যাত্রীর শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। দেশের বাইরে সিঙ্গাপুরে দুই বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের একজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। আক্রান্ত দ্বিতীয় বাংলাদেশি ছাড়াও সেখানে আরও কয়েকজন বাংলাদেশিকে কোয়েরান্টাইনে রাখা হয়েছে।

সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশে কর্মরত চীনা নাগরিকদের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়েছে। ছুটি কাটাতে যারা দেশে গেছেন তাদের দেশেই থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া সতর্কতার অংশ হিসেবেই চীন থেকে ফিরতে চান এমন শিক্ষার্থীদের দেশে না আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও দেশটিতে থাকা বাংলাদেশিরা নিজ উদ্যোগে দেশে ফিরে আসছেন। এই ফিরে আসা বাংলাদেশিদের নিয়েই বেশি উদ্বেগ এবং ভাবনা। বিমান বন্দর হয়ে দেশে আসা এমন দুইজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যদিও তাদের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি বলে আইইডিসিআর জানিয়েছে। ভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কের সঙ্গে অর্থনৈতিক সঙ্কট নিয়েও ভাবনা শুরু হয়েছে। চীন থেকে আমদানি নির্ভর কিছু পণ্যের দাম ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে। বাজারে আদা রসুনের মতো কিছু নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। চীন থেকে আসে এমন পণ্যের আমদানি কারকরা শঙ্কায়।

চীনে কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এসব পণ্যের সঙ্কট দেখা দেবে। এছাড়া বাণিজ্য সংকোচিত হলেও পণ্যের দামে প্রভাব পড়তে শুরু করবে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এ ধরণের পণ্যের মজুত কমে আসছে। পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে দাম বাড়ার চেয়ে বড় সমস্যা হবে প্রয়োজনের সময় দরকারি পণ্যটি নাও পাওয়া যেতে পারে।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের কয়েক হাজার গার্মেন্টস শিল্প কারখানার জন্য বছরে প্রায় ১৪ হাজার কোটি ডলার মূল্যের কাঁচামাল আমদানি হয় চীন থেকে। মাসে চীন থেকে গার্মেন্টেসের কাঁচামাল নিয়ে প্রায় ৩০টি জাহাজ আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। বলা যায়, গার্মেন্টস শিল্পের কাঁচামাল অনেকটাই চীন নির্ভর। গত তিন সপ্তাহ যাবত চীন থেকে গার্মেন্টস শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বন্ধ রয়েছে। কাঁচামাল নিয়ে কোনো জাহাজ বাংলাদেশে আসেনি। কাঁচামাল সঙ্কটে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে দেশের গার্মেন্টস শিল্প। গার্মেন্টস ছাড়াও বিভিন্নক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়ছে। চায়না বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল মোমেন মানবজমিনকে জানান, গত ২২শে জানুয়ারি থেকে চাইনিজ নববর্ষের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। চায়নিজ নববর্ষের কারণে চীনে প্রায় ১০ দিন সব ধরণের লেনদেন বন্ধ ছিল। তারপর থেকেই শুরু হয় করোনা ভাইরাসের প্রভাব। বর্তমানে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে চীনের।

আবদুল মোমেন বলেন, টুথপেস্ট থেকে শুরু করে সাবমেরিন পর্যন্ত বাংলাদেশে রপ্তানি করে চীন। এই আমদানি বন্ধ থাকায় কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে। এজন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বলে মনে করেন তিনি। ব্যবসায়ীরা জানান, চাইনিজ নববর্ষের কারণে এলসির পণ্য দেশে আসেনি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। করোনা ভাইরাসের কারণে নতুন করেও এলসি খোলা যাচ্ছে না। আগের আমদানি করা কাঁচামাল দিয়ে দিয়ে চলছে গার্মেন্টস শিল্প। এভাবে চলতি মাস চললেও আগামী মাসে সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করবে। দেশের গার্মেন্টস শিল্পে ব্যবহৃত ফেব্রিক্স-সুতা-এক্সেসরিজ থেকে শুরু করে ডাইং কেমিকেল, ট্যাগ, বারকোড, স্ক্যান রিডার, বোতাম এবং জিপার পর্যন্ত আসে চীন থেকে। বিজিএমইএ পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ সাংবাদিকদের জানান, শিপমেন্ট বন্ধ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ম্যাটেরিয়াল পাবে না। পরবর্তীতে এক্সপোর্টগুলো ফেল করবে। শ্রমিকদের কাজ দিতে সমস্যা হবে।
কাপড়ের বাজারে ইতিমধ্যে চড়াদাম দিতে হচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীদের। পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র। গুলিস্তানের নগরপ্লাজার ব্যবসায়ী রাকিবুল হাসান জানান, নতুন করে চীন থেকে কাপড় আমদানি না হওয়ায় চাইনিজ কাপড়ের দাম বেড়েছে। চাইনিজ লিলেন কাপড় যা আগে বিক্রি হতো প্রতি গজ ৯৫ টাকা, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১শ’৩০ টাকা মূল্যে। একইভাবে ডিসকস প্রতি গজে বেড়েছে ৩০ টাকা, প্রিন্ট শাটন, চাইনিজ চেকসহ বিভিন্ন কাপড়ে গজ প্রতি ৩০ ধেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। চাইনিজ কাপড়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারত থেকে আমদানিকৃত কাপড়ের দামও বাড়িয়েছে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা। পাঞ্জাবির আদ্রি কাপড় গত মাসে ছিলো প্রতি মিটার ৩শ’৫০ টাকা। এখন তা হয়েছে ৪শ’৫০ টাকা। ব্রাশু ১শ’৮০ থেকে এখন ২৩৫ টাকা, রিমি ১শ’৮০ থেকে এখন ২শ’৫০ টাকা।
বেড়েছে ভারত থেকে আমদানিকৃত সুতার দামও। ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত থেকে আমদানিকৃত সুতা প্রতি পাউন্ডে ১০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। চাইনিজ সুতার দাম বেড়েছে প্রতি পাউন্ডে ৩০ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, শিগগিরই খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়বে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চীনে রপ্তানি হয় এমন কিছু পণ্য তৈরির প্রতিষ্ঠানও রয়েছে বিপাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিষ্ঠানের মালিক জানান, তিনি চীনে প্লাস্টিকের পণ্য রপ্তানি করেন। গত এক সপ্তাহ যাবত তার কারখানাটি বন্ধ রয়েছে। রপ্তানি বন্ধ থাকায় ছুটি দিয়েছেন কর্মরতদের। এই অবস্থায় গার্মেন্টস শিল্পসহ চীনের ওপর নির্ভরশীল বিভিন্ন পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকারকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ                                 

কানাডার সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven + nine =