মুখোমুখি বাগ্বিতণ্ডায় জড়ালেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে বৈঠকে তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এই অবস্থায় ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই রাষ্ট্রনেতার চুক্তি স্বাক্ষরের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি।
বৈঠকের বাগ্বিতণ্ডা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রতিকৃয়া জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা।
এক্সে জেলেনস্কির প্রতিক্রিয়া
‘ধন্যবাদ আমেরিকা, আপনাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ। এই সফরের জন্য ধন্যবাদ। ধন্যবাদ @POTUS, কংগ্রেস এবং আমেরিকান জনগণ। ইউক্রেনের ন্যায্য এবং স্থায়ী শান্তি প্রয়োজন এবং আমরা ঠিক সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।’
এক্সে কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর প্রতিক্রিয়া
রাশিয়া অবৈধভাবে এবং অন্যায্যভাবে ইউক্রেন আক্রমণ করেছে। তিন বছর ধরে ইউক্রেনীয়রা সাহসের সাথে লড়াই করেছে। গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের জন্য তাদের লড়াই আমাদের সকলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কানাডা ন্যায়সঙ্গত এবং স্থায়ী শান্তি অর্জনে ইউক্রেন এবং ইউক্রেনীয়দের পাশে থাকবে।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজের প্রতিক্রিয়া
‘ইউক্রেনের নাগরিকদের চেয়ে বেশি শান্তি আর কেউ চায় না! সেই কারণেই আমরা যৌথভাবে একটি স্থায়ী এবং ন্যায়সঙ্গত শান্তির পথ খুঁজছি। ইউক্রেন জার্মানির উপর এবং ইউরোপের উপর নির্ভর করতে পারে।’
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের প্রতিক্রিয়া
রাশিয়া হলো আগ্রাসক। ইউক্রেনের জনগণও দমবার পাত্র নন। তিন বছর আগে আমরা ইউক্রেনকে সাহায্য করেছিলাম এবং রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলাম এবং সেই সমর্থন আমরা অব্যাহত রেখেছি। আমরা অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, কানাডা, জাপানসহ আরও অনেকে। আমাদের অবশ্যই তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাতে হবে যারা শুরু থেকেই লড়াই করে আসছেন। তাদের সম্মান জানাতে হবে। কারণ তারা তাদের মর্যাদা, স্বাধীনতা, সন্তান এবং ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য লড়াই করছেন। এগুলো হয়তো ক্ষুদ্র জিনিস, কিন্তু এই সময়ে এগুলো ভুলে গেলে চলবে না।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিও মেলোনির প্রতিক্রিয়া
পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিটি বিভাজন আমাদের সকলকে দুর্বল করে তোলে এবং কেউই সভ্যতার পতন দেখতে চায় না। একটি বিভাজন কারও উপকার করবে না। আজকের বড় চ্যালেঞ্জ ইউক্রেনকে রক্ষা করা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় রাষ্ট্র এবং মিত্রদের মধ্যে একটি তাৎক্ষণিক শীর্ষ সম্মেলন প্রয়োজন। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইতালি তার অংশীদারদের কাছে এই প্রস্তাবটি উপস্থাপন করতে চায়।
বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের মুখপাত্রর প্রতিক্রিয়া
তিনি (কিয়ের স্টারমার ) ইউক্রেনের প্রতি তার অটল সমর্থন বজায় রেখেছেন এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার উপর ভিত্তি করে একটি স্থায়ী শান্তির পথ খুঁজে বের করার জন্য তার ভূমিকা পালন করছেন।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিসের প্রতিক্রিয়া
যতদিন সময় লাগে আমরা ইউক্রেনের পাশে থাকব, কারণ এটি একটি গণতান্ত্রিক জাতির বিরুদ্ধে ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বাধীন একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের লড়াই যার স্পষ্টতই সাম্রাজ্যবাদী উদ্দেশ্য রয়েছে। কেবল ইউক্রেনের উপর নয়, বরং সমগ্র অঞ্চল জুড়ে।
কানাডিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি এক্সে লিখেছেন
ইউক্রেনের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিত করতে কানাডা প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোককে রাসমুসেন ফেসবুকে লিখেছেন, এটা ইউক্রেনের জন্য এক বিরাট ধাক্কা। … দৃঢ় কথোপকথনের জন্য অবশ্যই জায়গা রাখতে হবে – এমনকি বন্ধুদের মধ্যেও। কিন্তু যখন এটি ক্যামেরার সামনে ঘটে, তখন কেবল একজনই বিজয়ী হন। আর তিনি এখন ক্রেমলিনে বসে আছেন।
রাশিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান, দিমিত্রি মেদভেদেভ টেলিগ্রামে লিখেছেন, ‘ওভাল অফিসে এক নৃশংস অধ্যায়’।
ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন এক্সে লিখেছেন, ইউক্রেনীয় জনগণের সাহসিকতাকে আমরা সম্মান জানাই। শক্তিশালী হোন, সাহসী হোন, নির্ভীক হোন। আপনি কখনই একা নন। প্রিয় প্রেসিডেন্ট, একটি ন্যায়সঙ্গত এবং স্থায়ী শান্তির জন্য আমরা আপনার সাথে কাজ চালিয়ে যাব।
মোলদোভানের প্রেসিডেন্ট মাইয়া সান্দু এক্সে লিখেছেন,
সত্যটা সহজ। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছে। রাশিয়াই আক্রমণকারী। ইউক্রেন তার স্বাধীনতা রক্ষা করছে এবং আমাদেরও। আমরা ইউক্রেনের পাশে আছি।
স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এক্সে লিখেছেন,
ইউক্রেন, স্পেন তোমার সঙ্গে আছে।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান এক্সে লিখেছেন,
শক্তিশালী মানুষ শান্তি প্রতিষ্ঠা করে, দুর্বল মানুষ যুদ্ধ করে। আজ প্রেসিডেন্ট @realDonaldTrump শান্তির পক্ষে সাহসের সাথে দাঁড়িয়েছেন। যদিও অনেকের পক্ষে এটি হজম করা কঠিন ছিল। ধন্যবাদ, মিঃ প্রেসিডেন্ট!
নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গাহর টিভি ২ এর কাছে জানিয়েছেন,
আজ হোয়াইট হাউসে আমরা যা দেখলাম তা গুরুতর এবং হতাশাজনক। ইউক্রেনের এখন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রয়োজন। ইউক্রেনের নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যৎ যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ইউক্রেনে ইউরোপের দৃঢ় সমর্থন রয়েছে। তিনি রাশিয়ার আক্রমণের মুখে অত্যন্ত কঠিন সময়ে তার জনগণকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ট্রাম্প জেলেনস্কির বিরুদ্ধে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলার অভিযোগ করেছেন, যা অত্যন্ত অযৌক্তিক এবং আমি এই বক্তব্য থেকে নিজেকে দূরে রাখি। নরওয়ে ইউক্রেনের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা আশা করি ট্রাম্প প্রশাসনও ইউক্রেনে ন্যায়সঙ্গত এবং স্থায়ী শান্তির গুরুত্ব বুঝতে পারবে।
চেক প্রেসিডেন্ট পিটার পাভেল এক্সে লিখেছেন, আমরা আগের চেয়েও এখন আরো বেশি ইউক্রেনের পাশে আছি। ইউরোপের প্রচেষ্টা জোরদার করার সময় এসেছে।
ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কফের প্রতিক্রিয়া
নেদারল্যান্ড ইউক্রেনকে সমর্থন করে চলেছে। বিশেষ করে এখন। আমরা স্থায়ী শান্তি এবং রাশিয়া যে আগ্রাসন শুরু করেছে তার অবসান চাই। ইউক্রেন, তার সমস্ত বাসিন্দা এবং ইউরোপের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ।
এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্গাস তাশাকনা এক্সে লিখেছেন,
শান্তির পথে একমাত্র বাধা হলো পুতিনের আগ্রাসন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। রাশিয়া যদি যুদ্ধ বন্ধ করে দেয়, তাহলে কোনও যুদ্ধ হবে না। ইউক্রেন যদি যুদ্ধ বন্ধ করে দেয়, তাহলে ইউক্রেনই থাকবে না। ইউক্রেনের প্রতি এস্তোনিয়ার সমর্থন অটল। ইউরোপের এগিয়ে আসার সময় এসেছে।
পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক এক্সে লিখেছেন,
প্রিয় ইউক্রেনীয় বন্ধুরা, তোমরা একা নও।
ইতালীয় উপপ্রধানমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি এক্সে লিখেছেন,
শান্তির লক্ষ্যে কাজ করুন, এই যুদ্ধ বন্ধ করুন! ডনাল্ড ট্রাম্প এগিয়ে আসুন।
সূত্র : রয়টার্স থেকে মানবজমিনে প্রকাশিত