রকমারি

পৃথিবী কিভাবে তৈরি হলো

গল্প পৃথিবী কিভাবে তৈরি হলো
অঙ্কন : মাসুম

শুরুতে সবকিছু কালো এবং অদৃশ্য ছিল। আকাশ ছিল না, তাই সূর্য বা অন্যান্য নক্ষত্র ছিল না, আর সূর্য না থাকায় দিনও ছিল না, ছিল না রাতের আকাশে কোনো চাঁদ, ধূমকেতু, উল্কা বা জোনাকি পোকা। তাহলে কী ছিল? ছিল শুধু পানি। যেদিকে তাকাও, যত দূরেই চলে যাক দৃষ্টি, শুধু পানি আর পানি দেখতে পাওয়া যাবে, অন্য কিছু নয়। সে পানি আবার স্থিরও নয়, সচল, আর তার গতিও খুব বেশি, সারাক্ষণ শুধু ছুটছে আর ছুটছে, যেন ছুটে চলাতেই তার আনন্দ।

ছোট একটা ভেলায় চড়ে উত্তর দিক থেকে এলো দুটি প্রাণী, কাছিম বা কচ্ছপ আর তার বন্ধু। চারদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল কাছিম। বলল, ‘দেখছ বন্ধু, চারদিকে শুধু পানি ছাড়া আর কিছু দেখার নেই। থইথই পানি আর কত ভালো লাগে বলো? জন্ম থেকে মৃত্যু, শুধু এই পানি দেখে কাটাচ্ছি আমরা সবাই। একটা শুকনো ডাঙা পেলে জীবনটা আনন্দে ভরে উঠত, কিন্তু কোথায় পাবে শুকনো মাটি?’

কাছিমের বন্ধু বলল, ‘এতে মন খারাপ করার কিছু নেই। যা আছে তাতেই আমাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত। যা কোনো দিন পাব না, তা নিয়ে আফসোস করাটা বোকামি।’

তর্ক করে লাভ নেই জেনে আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে থাকল কাছিম।

একটু পরই ওরা দুজন দেখল, আকাশ থেকে কী যেন একটা নেমে আসছে। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল তারা। কাছে নামার পর চিনতে পারল, পালক জোড়া দিয়ে বানানো একটা রশি। তারপর দেখা গেল, ওই রশি বেয়ে আকাশ থেকে আরেকটা জিনিস নেমে আসছে। হাঁ করে তাকিয়ে থাকল কাছিম, জিনিসটা কাছে আসতে দেখল ওটা একটা প্রাণী, নাম সূত্রপাত।

সূত্রপাত রশি বেয়ে সরাসরি ওদের ভেলার মাঝখানে নামল। সে তার মুখ এমনভাবে ঢেকে রেখেছে যে কেউ সেটা দেখতে পাবে না। তবে তার শরীর সূর্যের মতো উজ্জ্বল।

কাছিম তাকে প্রশ্ন করল, ‘আচ্ছা ভাই, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?’

আরও পড়ুনঃ স্ত্রী সন্তান ও মাকে নিউইয়র্কে রাখার সিদ্ধান্ত ব্যারিস্টার সুমনের!

‘হ্যাঁ, করো জিজ্ঞেস’, বলল সূত্রপাত। ‘আমি প্রশ্নের জবাব দিতে পছন্দ করি। কারো কোনো সমস্যা থাকলে সেটারও সমাধান করে দিতে চেষ্টা করি। তোমার কথা তুমি নির্দ্বিধায় জিজ্ঞেস করতে পারো, কাছিম।’

‘আমার প্রশ্ন হলো, ভাই, তুমি আমাকে খানিকটা শুকনো মাটি এনে দিতে পারো, আমি যাতে মাঝেমধ্যে পানি থেকে উঠে সেই মাটির ওপর দাঁড়াতে পারি?’

সূত্রপাতকে দেখে মনে হলো, কাছিমের প্রশ্ন শুনে সে খুব চিন্তায় পড়ে গেছে। উত্তরে বলল, ‘তুমি আমার কাছে শুকনো জায়গা চাইছ; কিন্তু শুকনো জায়গা বানানোর জন্য আমি মাটি পাব কোথায়?’

কাছিম তখন একটা বুদ্ধি দিল, বলল, ‘তুমি আমার বাঁ হাতে একটা পাথর বেঁধে দাও, আমি যাতে পানির একেবারে তলায় নেমে যেতে পারি। তারপর ওখান থেকে কিছুটা মাটি নিয়ে উঠে আসব আবার।’

কিন্তু তার পরও সূত্রপাতের চিন্তা গেল না। সে বলল, ‘এই পানি তো অসম্ভব গভীর! ভাই কাছিম, তুমি কি অত নিচে নামতে পারবে?’

উত্তরে কাছিম বলল, ‘মনে হয় পারব। যাতে পারি, তুমি বেশ বড় আর ভারী দেখে একটা পাথর বাঁধো আমার হাতে।’

তা-ই করল সূত্রপাত। পানিতে ডুব দিল কাছিম। পানির তলায় নামতে আর উঠে আসতে তার সময় লাগল ছয় বছর। কিন্তু পানির ওপর মাথা তোলার পর দেখা গেল, তার সংগ্রহ করে আনা মাটি পানিতে ধুয়ে গেছে। থাকার মধ্যে আছে শুধু তার নখের ভেতর নগণ্য একটু মাটি।

সূত্রপাত একটা পাথরের ছুরি দিয়ে চেঁছে চেঁছে ওই অল্প একটু মাটি কাছিমের নখের ভেতর থেকে বের করল। ওইটুকু মাটিই হাতের তালুতে নিয়ে গোল পাকাল সে, ছোট্ট একটা কাঁকরের মতো দেখতে লাগছে। তারপর সেটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল সূত্রপাত।  তারপর দৃষ্টি সরিয়ে নিল। এভাবে চারবার তাকাল আর দৃষ্টি সরাল। আর এই সময়ের ভেতর মাটির বলটা বড় হতে হতে একটা গোটা পৃথিবীর মতো বিরাট হয়ে গেল। সেই দুনিয়ার চারদিকে মাথাচাড়া দিয়ে আছে সারি সারি পাহাড়। এবং এভাবেই পানির তলায় ডুব দিয়ে পৃথিবী তৈরিতে সাহায্য করেছিল কাছিম।

[ প্রাচীন রেড ইন্ডিয়ান গল্প ]

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × five =