মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে ২০২০ খ্রী: ৩রা নভেম্বর, মঙ্গলবার। নির্বাচনের আর মাত্র দু’দিন বাকী । এটি হবে আমেরিকার ৫৯তম চতুর্বাষিক রাষ্ট্রপতি নির্বাচন । প্রতি ৪ বছর পরপর নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবার আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে থাকে । এবার বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই রাষ্ট্রের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন । এবারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনর্নির্বাচনের জন্য লড়ছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছে ডেমোক্রেটিক দলের মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শুরু থেকেই এবারের নির্বাচনে জোর লড়াইয়ের ইঙ্গিত ছিল। ভোটারদের মধ্যে আগ্রহও ছিল তুলনামূলক অনেক বেশি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই আগ্রহ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এরই প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে আগাম ও ডাকযোগে ভোটে। একই সঙ্গে এত বেশিসংখ্যক আগাম ভোট পড়ার কারণ হিসেবে রয়েছে করোনা পরিস্থিতি। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ভোটের দিন বিভিন্ন কেন্দ্রে ভিড় এড়াতে অঙ্গরাজ্যগুলো এবার আগাম ভোট গ্রহণের সুবিধা সম্প্রসারণ করেছে । শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৯ কোটি আমেরিকান আগাম ভোটে অংশ নেন। এতে বাইডেন জুটি এগিয়ে রয়েছেন বলে নির্বাচনে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণরত ‘ইউএস প্রজেক্ট’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। আমেিকার মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩২ কোটি ৮২ লক্ষ । উল্লেখ্য, ভোটার হওয়ার যোগ্য আমেরিকানের সংখ্যা ২৫ কোটি ৭০ লাখ । তবে ভোটার লিস্টে নাম রয়েছে ২৪ কোটি আমেরিকান ।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেবেই রেখেছিলেন, অর্থনীতির সমৃদ্ধির চাকায় চেপে গড়গড়িয়ে পেরিয়ে যাবেন এ বারের ২০২০ সালের ভোট। কিন্তু বাদ সেধেছে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস। মহামারী মোকাবিলায় তালগোল পাকিয়ে আমেরিকার পরিস্থিতিকে বর্তমানে জটিল করে ফেলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য এক বৈরী বাস্তবতা। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রানত হয়েছে ৯৪ লাখের অধিক মানুষ ।মার্চ মাস এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় দুই লাখ ৩৪ হাজারের অধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নির্বাচনের ঠিক আগে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ মানুষ করোনায় সংক্রমিত হচ্ছে। দেশের অধিকাংশ এলাকা এখন সংক্রমণের ঝুঁকিতে। দুঃখজনক হল এই যে. প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনাভাইরাসকে কোন গুরুত্ব দেননি, এখনো দিচ্ছেন না। লাখো মানুষের মৃত্যুর নিশ্বাস তাঁকে তাড়া করবে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। এ বাস্তবতা তাঁকে মোকাবিলা করতেই হবে। হয়তো মূল্যটা দিতে হবে ৩ নভেম্বর নির্বাচনের দিন। তার নিজের কোভিডও তাকে সহানুভূতির ভোট জোগানোর বদলে জাগিয়ে তুলেছে প্রশ্নচিহ্ন । করোনা পরিস্হিতি মোকাবেলায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে সম্পূ্র্ণরুপে ব্যর্থ হয়েছেন – এমন প্রচারনা চালিয়ে জো বাইডেন সাফল্যলাভ করেছেন । অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেএে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছেন । আমেরিকার মিএ গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো যথা কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানী, বৃটেন, সুইডেন, নরওয়ে সাথে সম্পর্ক রক্ষা ও উন্নয়ন না করে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেছে নিয়েছেন রাশিয়ার একনায়ক প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির পুতিন ও উওর কোরিয়ার ভয়ংকর প্রেসিডেন্ট কিম জন উনকে বন্ধু হিসাবে ।
নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা কলেজ পরিচালিত জনমত জরিপের তথ্যমতে, ফ্লোরিডা, পেনসিলভানিয়া, অ্যারিজোনা ও উইসকনসিনে এগিয়ে রয়েছেন জো বাইডেন। ব্যাটলগ্রাউন্ড হিসেবে পরিচিত এই চার অঙ্গরাজ্যে রয়েছে ৭০টি ইলেকটোরাল ভোট । নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা কলেজ পরিচালিত জরিপের তথ্যমতে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫২ শতাংশই বাইডেনকে সমর্থন জানিয়েছেন। নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তেও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে গুরুত্বপূর্ণ চার অঙ্গরাজ্যে বেশ এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্রেটিক দলের মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিপরীতে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন রয়েছে জরিপে অংশ নেওয়া ভোটারদের ৪১ শতাংশের। এবারের নির্বাচনে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বাইডেনের অবস্থান এতটাই শক্ত, যা সর্বশেষ ২০০৮ সালে দেখা গিয়েছিল । ২০০৮ সালে মহামন্দার মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ৩৬৫টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পেয়েছিলেন। ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ছিলেন জো বাইডেন ।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, এবারের নির্বাচনের প্রবণতা বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে প্রেসিডেন্সির জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট পাওয়া রীতিমতো কঠিন হবে । অন্যদিকে ২০১৯ সাল থেকে সিএনএন-এর প্রতিটি জরিপেই এগিয়ে আছেন জো বাইডেন । জরিপে বাইডেন যতটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন গত দুই দশকেও শেষ মুহূর্তে কোনো প্রার্থী এতোটা সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলেন না । সিএনএন তাদের প্রকাশিত খবরে বলেছে, জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৪ শতাংশ বাইডেনকে সমর্থন দিয়েছেন। অন্যদিকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন ৪২ শতাংশ ভোটার। এতএব জো বাইডেন বেশ দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে এই চার অঙ্গরাজ্যের কথা বলা যায়। এগুলোর সব কটিতে শেষ পর্যন্ত বাইডেন যদি জয় নাও পান, তাহলেও নির্বাচনে জয়লাভের জন্য ট্রাম্পের পক্ষে ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট পাওয়া প্রায় অসম্ভব । কারণ, বেশ কিছু বড় অঙ্গরাজ্যে যেমন কেলিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক, টেক্সাস ও শিকাগো অঙ্গরাজ্যে জো বাইডেন বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন। এমনকি যদি ফ্লোরিডার ২৯টি ইলেকটোরাল ভোট ছুটেও যায়, তাহলেও বাইডেনের যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে । কারণ, সে ক্ষেত্রে বাইডেনকে এমন একটি বড় অঙ্গরাজ্যে জয় পেলেই চলবে, যেখানে ২০১৬ সালে ট্রাম্প বিজয়ী হয়েছিলেন ।
ইতিমধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ হিসাবে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হয়েছেন পর পর দু’বার। আমেরিকায় কালোদের অবস্থারও অনেকটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু তা মার্কিন সমাজের মানসিকতাকে বর্ণ-নিরপেক্ষ সমতলে আনতে পারেনি। ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন শুরু হয়েছিল সেই কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার পর ২৫ মে থেকে। ট্রাম্পের আশা, জাতিগত ভাবে মেরুকরণকৃত এবং উগ্রবাদী সাদা ভোটাররা জিতিয়ে আনবেন তাঁকে ওই রাজ্যগুলিতে, যেগুলি ২০১৬-য় তাঁকে জিতিয়েছিল। কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানরা রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে ভোট দিলেও ট্রাম্পের কিন্তু বড় একটা এসে যাবে না। ২০১৬-র নির্বাচনে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের ৮৮%-ই ভোট দিয়েছেন হিলারি ক্লিন্টনকে। জয়ী হন ট্রাম্প । আমেরিকার মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৪% কালো, আর সাদা ৭২%-এর বেশি। কমলা হ্যারিসকে ‘রানিং মেট’ হিসেবে বেছে নেওয়াটাও তাই হয়তো বাইডেনের ছিল বাধ্যবাধ্যকতা। কৃষ্ণাঙ্গ ভোটব্যাঙ্ককে অটুট রাখা। ও দিকে ট্রাম্প আশা করছেন, কালোদের আন্্দোলন ওউত্থানের জন্যই হয়তো ঘটবে সংখ্যাগরিষ্ঠের নীরব কিন্তু প্রবল, অনিবার্য ‘প্রতিরোধ’। যেমন হয়েছিল নিক্সনের ক্ষেত্রে ১৯৬৮ খ্রী: ।
নির্বাচনে ভোটগ্রহণের ঠিক আগ মুহূর্তে এবার প্রকাশ্যে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য, যা এক রকম বিপাকেই ফেলে দিয়েছেন আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে । এক গবেষণায় উঠে এসেছে, স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ট্রাম্পের সমাবেশ থেকে এ পর্যন্ত ৩০ হাজার মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন । আর এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৭০০ জনের । লস এঞ্জেলস টাইমস এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমেরিকার দ্য স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক এই গবেষণাটি করেছেন যার প্রতিবেদনটি ৩০ অক্টোবর প্রকাশ করা হয়। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১৮টি সমাবেশ পর্যবেক্ষণ করে এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে ।
তবে সকল জল্পনাকল্পনা ও জনমত জরিপের অবসান ঘটিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আসল ও নির্ভরযোগ্য খবর পাওয়া যাবে ৩ নভেম্বর মঙ্গলবার রাত্রে । কে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবেন আগামী ৪ বছরের জন্য: ডোনাল্ড ট্রাম্প অথবা জো বাইডেন ? শুধু আমেরিকার জনগণই নয় বিশ্বের অনেকদেশ তাকিয়ে আছেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফলের দিকে ।
সূত্র : বিভিন্ন জরীপ ও সংবাদ পত্র
কলামিষ্ট, লেখক ও সিবিএনএ’এর উপদেষ্টা, মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা
১ নভেম্বর ২০২০
এসএস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন