মুজিব বর্ষ’ উদযাপন উপলক্ষ্যে পররাষ্ট্রনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে বঙ্গবন্ধু’র দর্শন ও ভাবনা নিয়ে নাইজেরিয়ার আবুজা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা
০৯ ডিসেম্বর,২০২০, আবুজা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে নাইজেরিয়ার আবুজায় বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্তৃক নাইজেরিয়ার আবুজা বিশ্ববিদ্যালয়ে ০৭ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু ও আন্তর্জাতিকতাবাদ’ বিষয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় পররাষ্ট্র নীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও ভাবনা নিয়ে আলোকপাত করা হয়। আলোচনায়, অন্যান্যের মধ্যে আবুজা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল-রাশিদ নাল্লাহ এবং প্রথম সচিব ও ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার বিদোষ চন্দ্র বর্মন আলোচনায় অংশ নেন।
উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল-রাশিদ নাল্লাহ তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধু শুধু তারঁ দেশের স্বাধীনতার জন্যই সংগ্রাম করেননি, তিনি বিশ্ব মানবতার জন্যও নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। উপাচার্য আরও উল্লেখ করনে যে, বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন মহান ব্যক্তিত্ব এবং নেতা। তিনি বলেন যে আফ্রিকাসহ বর্তমান বিশ্বে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আজও প্রাসঙ্গিক ও তাৎপর্যপূর্ণ। প্রসঙ্গক্রমে তিনি ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলাদেশ ও নাইজেরিয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং দুদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বঙ্গবন্ধু’র দর্শন ও ভাবনা নিয়ে নাইজেরিয়ার আবুজা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা সভায় ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার বিদোষ চন্দ্র বর্মন তারঁ বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, বিশ্বশান্তি ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবন-দর্শন ও আদর্শের মূলমন্ত্র। পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর মূল নীতি । সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’-এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের সকল মানুষের জন্য তাঁর ভালোবাসার বহি:প্রকাশ ঘটেছে। আন্তর্জাতিক শান্তি বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার বলেন যে, বঙ্গবন্ধু সর্বদা বিশ্বের নিপীড়িত, অবদমিত, শোষিত ও অধিকার-বঞ্চিত মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় বিশ^ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আহŸান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ıমানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শান্তি অপরিহার্য’। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মানবতার বিকাশের জন্য শান্তির প্রয়োজনীয়তা গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে তিনি বিশে^র সকল অঞ্চলের ঔপনিবেশিকতাবাদ, সা¤্রাজ্যবাদ এবং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাকামী ও আত্ম-নিয়ন্ত্রণকামী মানুষের সংগ্রাম সমর্থন করেছেন এবং এক্ষেত্রে সমর্থন দিতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকেও উৎসাহ জুগিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর শান্তিবাদী দর্শনের জন্য উত্তর-ঔপনিবেশিক বিশে^ অনুপ্রেরণার এক উৎস হয়ে রয়েছেন।
জাতিসংঘ, জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলন, কমনওয়েলথ এবং ওআইসি-তে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ও অবদানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার বলেন যে, বঙ্গবন্ধু অব্যাহত অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও পরমানু অস্ত্র পরীক্ষার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার পাশপাশি বিশ^ শান্তির জন্য হুমকি স্বরূপ আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য বিশ^ নেতাদের আহŸান জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন যে, দুরূহ বাধা অতিক্রমে মানব জাতির অমিত সম্ভাবনার কথা বঙ্গবন্ধু তুলে ধরেছেন এবং বিশ^ নেতাদেরকে মানব জাতির দুর্ভোগের কারণ না হয়ে মানব জাতির প্রগতির জন্য ভূমিকা রাখার আহŸান জানিয়েছেন। ভারতীয় উপমহাদেশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখতে বঙ্গবন্ধুর নীতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে মি. বর্মন বলেন যে, সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া ও বহি:বিশে^ শান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু তাঁর সমর্থন অব্যাহত রেখেছিলেন। মি. বর্মন, অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, বঙ্গবন্ধুর বাল্য জীবন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের কথাও সংক্ষিপ্ত ভাবে তুলে ধরেন।
আলোচনা শেষে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার আবুজা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ıমুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে নাইজেরিয়ার সরকার কর্তৃক অবমুক্ত স্মারক ডাকটিকেট হস্তান্তর করেন এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ও আন্তরিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। উক্ত অনুষ্ঠানে, অন্যান্যের মধ্যে, অধ্যাপক ক্লিমেন্ট আলাওয়া, উপ-উপাচার্য, অধ্যাপক মালাম রেফুই আহমেদ বাবা, অধ্যাপক ইওয়েমা একেজোনা, অধ্যপাক উবোম বাসে, অধ্যাপক এম এ কাচা এবং অধ্যাপক স্টিফেন গার্বা উপস্থিত ছিলেন। এশিয়ান স্টাডিজ-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মুসা ওলাওফে উক্ত সভায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
-এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন