বোমায় ছিন্নভিন্ন হাসপাতাল, ‘যুদ্ধাপরাধ, বিচারের মুখোমুখি করা হবে পুতিনকে’
নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে রাশিয়া। তারা এখন আর বেসামরিক আবাসিক এলাকা, হাসপাতালের পরোয়া করছে না। উন্মত্তের মতো শিশুদের হাসপাতালে পর্যন্ত বোমা হামলা চালাচ্ছে। দখল করে নেয়া মারিউপোলে একটি শিশু ও মাতৃসেবা বিষয়ক হাসপাতালে বোমা মেরে ধ্বংস করে দিয়েছে। এতে একটি শিশু সহ কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। বৃটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস হিপ্পি একে যুদ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করেছেন। শিশুদের হাসপাতালে বোমা হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেছেন, ভ্লাদিমির পুতিন ও তার জেনারেলদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি।
তিনি একে নৃশংসতা বলে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে রাশিয়া আরও একবার প্রমাণ দিল যে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে তারা। জেমস হিপ্পির মধ্যে ক্ষোভ তীব্র হয়েছে। তার কথায় সেই প্রমাণ বেরিয়ে এসেছে। বলেছেন, ভবিষ্যত বিচারে ব্যবহৃত হতে পারে এমন তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছে পশ্চিমারা। টিভির পর্দায় আমরা যা দেখছি তা যুদ্ধাপরাধ।
মারিউপোলে ওই হাসপাতালে বোমা হামলার পরের বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করা হয়েছে পশ্চিমা মিডিয়ায়। এতে দেখা যায় ধ্বংসপ্রাপ্ত ওই হাসপাতালের বাইরে ধ্বংসাবশেষ। সেখানে কয়েকজন মানুষের সঙ্গে একজন রক্তাক্ত নারী। কম্বল জড়িয়ে তিনি অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছেন। আরেকটি ছবিতে দেখা যায় একজন ডাক্তার অথবা নার্সকে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া হাসপাতালের ধ্বংসস্তূপের ভিতর দিয়ে তিনি এগিয়ে চলেছেন। আরেকটি ভয়াবহ ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যায় একজন অন্তঃসত্ত্বা বোমা হামলায় আহত হয়েছেন। তাকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাচ্ছেন সহায়তাকারীরা। অন্তঃসত্ত্বা আরও একজন ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবনের সিঁড়ি দিয়ে কোনোমতে নিচে নেমে আসছেন। হাসপাতালের বাইরে দাউ দাউ করে জ্বলছে গাড়ি। পাশেই পুকুর সমান এক গর্ত ভূপৃষ্ঠে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এমন গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বারা ওই হাসপাতালে গিয়েছিলেন সন্তান প্রসব করতে অথবা মাতৃত্বকালীন সেবা নিতে। সন্তানের মা হতে গিয়ে এমনিতেই তাদের জীবন ঝুঁকিতে, তার ওপর বোমা হামলা, বিশেষ করে হাসপাতালে বোমা হামলা- মৃত্যুর খুব কাছাকাছি নিয়ে গেছে তাদের।
দখল করে নেয়া ওই শহরে উচ্চ ক্ষমতাশীল রাশিয়ান বোমা দিয়ে বেশ কয়েকবার হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি বোমা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে হাসপাতালের বাইরে পড়েছে। এতে দোতলা ভবনের সমান গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অন্য বোমাগুলো সরাসরি হাসপাতালে আঘাত করেছে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, এতে কমপক্ষে ১৭ জন আহত হয়েছেন। ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ওলহা স্টেফানিশিনা বলেছেন, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে হাসপাতালকে টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে এতে কোনো সন্দেহ নেই এখন আর।
এই হামলা নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় হচ্ছে। এর নিন্দা জানিয়েছেন বৃটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস হিপ্পি। তিনি বলেন, পুতিন যা করছেন তা দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ নয়। এখন তিনি ইউক্রেনের অনেক শহর দখল করেছেন। যুদ্ধ করছেন দেশটির বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে। জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনের মায়েদের সেবা দেয়ার হাসপাতালে সরাসরি হামলা করেছে রাশিয়া। ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে শিশু, মায়েরা ও সাধারণ মানুষ। এ এক নৃশংসতা। এই সন্ত্রাসকে বিশ্ব আর কতদিন এড়িয়ে চলবে? এখনই আকাশসীমাকে বন্ধ করে দিন। বন্ধ করুন এই হত্যাযজ্ঞ। আপনাদের ক্ষমতা আছে। কিন্তু মানবতার কাছে হেরে যাচ্ছেন। এরপরই রাজধানী কিয়েভে প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদ থেকে টেলিগ্রামে যোগ দেন জেলেনস্কি। এতে বলেন, এখন প্রমাণ সামনে এসেছে যে- ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যা ঘটছে তা হলো গণহত্যা। ইউরোপিয়ান, এখন আপনারা বলতে পারেন না- যা ঘটছে তা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন না।
রাশিয়া যাতে তার যুদ্ধ চালিয়ে নেয়ার সক্ষমতা হারায় এজন্য তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কঠোর করুন। কোন ধরনের দেশ হাসপাতালে বোমা হামলা চালায়? তারা কি হাসপাতাল নিয়ে ভীতশঙ্কিত? এ প্রশ্ন রেখে জেলেনস্কি বলেন- কেউ কি রাশিয়ানদেরকে অবমাননা করছেন? রোস্তোভের দিকে কি কোনো অন্তঃসত্ত্বা গুলি ছুড়েছেন? হাসপাতালে বোমা হামলা করা হয় নাৎসীকরণ বন্ধের জন্য?
পরে তিনি স্কাই নিউজকে আলাদা সাক্ষাতকার দেন। এতে জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার হানাদাররা চায় ইউক্রেনিয়ানদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করতে। তাদের খাদ্য ও পানি বন্ধ করে দিতে চায় তারা। ইউক্রেনের শহরগুলোকে অবরুদ্ধ করে রাখছে তারা। আপনাদের কাছে আমি অনেকবার, মিলিয়নবার আকাশসীমাকে বন্ধ করে দেয়ার আহ্বান জানানো পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না। আপনাদের উচিত আমাদের কাছে, আমাদের জনগণের কাছে- যারা তাদের সন্তানদের হারিয়েছেন, তাদেরকে ফোন করা এবং বলা যা হয়েছে, তার জন্য আমরা দুঃখিত।
-সূত্রঃ মানবজমিন
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান