মৃত্যুর হারে দেশে শীর্ষে সিলেট! সিলেটে করোনা আক্রান্তের সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। মরণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস প্রতিদিন কেড়ে নিচ্ছে মানুষের প্রাণ। মৃত্যুর হারে এখন সারা দেশ থেকে এগিয়ে সিলেট। সারা দেশের গড় মৃত্যুর হারের চেয়ে সিলেটে মৃত্যুর হার প্রায় দ্বিগুণ। স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন এজন্য আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করা এবং শুরুতে হাসপাতালে শরণাপন্ন না হওয়াকে দায়ী করছেন। এছাড়া সুস্থতার দিক দিয়েও পিছিয়ে রয়েছে সিলেট জেলা। সিলেটের চেয়ে সারা দেশের সুস্থতার গড় হার প্রায় দ্বিগুণ। মৃত্যুর হার বৃদ্ধি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় অফিসের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানান, ‘সিলেটে অনেক আক্রান্ত ব্যক্তিও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। তারা অনেক দেরি করে চিকিৎসা শুরু করছেন। হাসপাতালে আসতেও দেরি করছেন। তাই মৃত্যুর হার বেশি। অনেকে উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারা যাচ্ছেন। মৃত্যুর পর তাদের পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে। মানুষ সচেতন হলে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হতো। সিলেটে সর্বপ্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৫ এপ্রিল। প্রথম রোগী ছিলেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। সিলেট থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হলে গত ১৫ এপ্রিল কুর্মিটোলা হাসপাতালে তিনি মারা যান। আর সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী মারা যান গত ২৫ এপ্রিল।
এরপর গত এক মাস ২০ দিনে সিলেটের একমাত্র করোনা হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আরও ৩৫ জন। শুরুর দিকে মৃত্যুর হার কম থাকলেও এখন প্রতিদিনই একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। করোনা আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেব অনুযায়ী গতকাল পর্যন্ত সিলেট জেলায় করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩৭২ জন। আর আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৩৬ জন। আক্রান্ত বিবেচনায় শতকরা মৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৬২। এদিকে, আইইডিসিআর’র তথ্য অনুযায়ী আক্রান্ত বিবেচনায় গতকাল পর্যন্ত সারা দেশের গড় মৃত্যুর হার ছিল শতকরা ১ দশমিক ৩৪। অর্থাৎ সারা দেশের তুলনায় সিলেটের গড় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি। সুস্থতার দিক দিয়েও পিছিয়ে রয়েছে সিলেট জেলা। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত সিলেট জেলায় সুস্থ হয়েছেন ১৪৮ জন করোনা রোগী। আক্রান্ত বিবেচনায় সিলেট জেলায় সুস্থ হওয়ার হার শতকরা ১০ দশমিক ৭৯ ভাগ।
কিন্তু আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত সারা দেশে সুস্থতার হার ছিল ২১ দশমিক ৪০ শতাংশ। যা সিলেটের সুস্থতার হারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। সিলেট জেলায় সুস্থতার হার কম ও মৃত্যুর হার বেশি হলেও বিভাগের অন্য তিন জেলার চিত্র ভিন্ন।
এখন পর্যন্ত বিভাগের বাকি তিন জেলার প্রতিটিতে মারা গেছেন ৪ জন করে। বাকি তিন জেলার মধ্যে মৃত্যুর হার সবচেয়ে কম সুনামগঞ্জে। এ পর্যন্ত ৫১৮ জন আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছেন মাত্র ৪ জন। ফলে সুনামগঞ্জের মৃত্যুর হার শতকরা দশমিক ৭৮। এছাড়া হবিগঞ্জে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৭ ও মৌলভীবাজারে ২ দশমিক ০৯। সুস্থতার দিক দিয়ে বিভাগের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে হবিগঞ্জ। এ জেলায় সুস্থতার হার ৬৫ দশমিক ৭০। জেলায় মোট আক্রান্ত ২৩৯ জনের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১৫৭ জন। আর মৌলভীবাজারে আক্রান্ত ১৯১ জনের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেছেন ৭৩ জন। ওই জেলায় সুস্থতার হার ৩৮ দশমিক ২২ শতাংশ।
এদিকে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগের চার জেলায় করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩২০ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন মোট ৪৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৮৯ জন। আক্রান্ত বিবেচনায় সিলেট বিভাগের সুস্থতার হার ২১ দশমিক শূন্য ৮ ও মৃত্যু হার ২ দশমিক শূন্য ৭।
সুত্রঃ বিডি প্রতিদিন
বাঅ/এমএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন