স্পেনের মাদ্রিদে বাংলাদেশ দূতাবাসে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন
স্পেন-প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য আজ মাদ্রিদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন হয়েছে। স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ, এনডিসি’র সভাপতিত্বে এ উপলক্ষ্যে দূতাবাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) মুতাসিমুল ইসলাম।
সংখ্যাধিক্যের দিক থেকে স্পেনে বসবাসরত বাংলাদেশীগণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৃতীয় বৃহত্তম প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটি। মাদ্রিদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে আজ ই-পাসপোর্ট সিস্টেম প্রবর্তনের মাধ্যমে তাঁদের দীর্ঘদিনের একটি প্রত্যাশা পূরণ হল। এখন থেকে স্পেন-প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকগণ ই-পাসপোর্ট সংক্রান্ত সকল সেবা ও সুবিধার আওতাভুক্ত হবেন। দূতাবাসে ই-পাসপোর্ট সিস্টেমের পাশাপাশি MRP কার্যক্রমও যথারীতি অব্যাহত থাকবে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই প্রেক্ষিতে সরকার ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থা প্রবর্তন করে, যা স্মার্ট বাংলাদেশ-এ উত্তরণের দৃপ্ত অভিযাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ০১ জুলাই ২০১০ তারিখে দেশের প্রথম প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল পাসপোর্ট MRP চালুর পর সময়ের পরিক্রমায় MRP ব্যবস্থার উন্নয়নের আবশ্যকতা দেখা দিলে ICAO প্রবর্তিত আন্তর্জাতিক মানদন্ড বিবেচনায় নিয়ে ও নাগরিকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ২৪ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালুর ঘোষণা দেন। সরকার ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর থেকে পরবর্তী ১০ বছরের জন্য অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ‘ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ জানুয়ারী ২০২০ তারিখে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট উদ্বোধন করেন। দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বপ্রথম বাংলাদেশেই ই-পাসপোর্ট চালু হয়।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নিরাপদ ভ্রমণ দলিল ই-পাসপোর্ট একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যাতে ‘ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ’ রয়েছে। এতে ৩৮টিরও অধিক নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যসম্বলিত মাইক্রোপ্রসেসর চিপে বায়োমেট্রিক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যথা পাসপোর্টধারীর রঙিন ছবি, দশ আঙুলের ছাপ, চোখের আইরিশ, স্থায়ী বা বর্তমান ঠিকানা, পূর্ববর্তী পাসপোর্টের রেকর্ড, ইত্যাদি সঞ্চিত থাকে। ই-পাসপোর্ট সিস্টেমের সাথে MRP সিস্টেমের ইন্ট্রিগ্রেশন ও মাইগ্রেশন সম্পন্ন করা হয়েছে। ফলে, পূর্বের পাসপোর্টের সকল তথ্যই এতে সংরক্ষিত থাকবে। ই-পাসপোর্ট সিস্টেমে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আবেদন ফরম পূরণ করা এবং অনলাইনে পাসপোর্ট ফি প্রদানের সুযোগ রয়েছে। আবেদনের সাথে দাখিলকৃত তথ্য যাচাই সহ আবেদন প্রক্রিয়াকরণের সর্বশেষ স্ট্যাটাস মুহুর্তেই জানা যায়। বয়সের ঊর্দ্ধসীমা নির্বিশেষে যেকোনো নাগরিক ১০ বছর মেয়াদী ই-পাসপোর্ট নিতে পারবেন। ই-পাসপোর্ট সিস্টেমে জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদের ডেটাবেইস, ৭২টি এসবি/ডিএসবি অফিস, ই-হজ্জ ব্যবস্থাপনা সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া, তথ্যের নিরাপত্তার জন্য পৃথক ডেটা সেন্টার ও disaster recovery site স্থাপন করা হয়েছে।
বর্তমানে বিদেশস্থ ২৫টি বাংলাদেশ মিশনে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২৬তম মিশন হিসেবে আজ স্পেনের মাদ্রিদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে ই-পাসপোর্ট সিস্টেম চালু হল। ভবিষ্যতে বিদেশস্থ আরও ৫৪টি মিশনে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করা হবে। ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হল, ই-গেইট ব্যবহার করে একজন ই-পাসপোর্টধারী অনায়াসে এবং দ্রুততার সাথে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন। বর্তমানে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম শাহআমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বেনাপোল স্থলবন্দর সহ মোট ৪২টি ই-গেইট চালু রয়েছে। বাংলাবান্ধা, আখাউড়া ও মুজিবনগর স্থলবন্দর সহ আরও ১০টি ই-গেইট স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ই-পাসপোর্ট সিস্টেমের সাথে ICAO এর ডেটাবেইস সন্নিবেশিত রয়েছে বিধায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশী ই-পাসপোর্টধারীগণ ICAO এর অন্যান্য সদস্য দেশসমূহে অবস্থিত ই-গেইটের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। Entry Exit Management System (EEMS) এর মাধ্যমে ই-পাসপোর্টধারী যাত্রীর সামগ্রিক যাত্রা পথের তথ্য (Travel History) সহজেই পর্যবেক্ষণ করা যাবে। এই প্রেক্ষাপটে, স্মার্ট ইমিগ্রেশন সিস্টেম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশের সকল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, নৌবন্দর ও বর্ডার চেকপোষ্টসমূহ একটি সমন্বিত নেটওয়ার্কের আওতায় আনয়ন সহ আর্ন্তজাতিক সংস্থাসমূহ ও অন্যান্য দেশের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক, দক্ষ, কার্যকর, স্বচ্ছ ও স্বয়ংক্রিয় করা হবে।