১৪ ডিসেম্বর -শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ||| বিদ্যুৎ ভৌমিক
আজ ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে আর একটি বেদনাবিধূর কলংকৃত দিন। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবী নিধনের মর্মন্তুদ স্মৃতিঘেরা বেদনাবিধুর দিন আজ। গভীর শোক, বিনম্র শ্রদ্ধা ও পরম ভালবাসার সাথে সমগ্র জাতি আজ স্মরণ করছে তাঁর শ্রেষ্ঠ সন্তান -বরেণ্য বুদ্ধিজীবিদের ।
বাঙালির মেধা-মনন-মনীষা শক্তি হারানোর দিন ১৪ ডিসেম্বর। একই সঙ্গে গোটা জাতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের প্রতি, যারা সূদীর্ঘ ৫০ বছর ধরে বয়ে চলেছেন অতি আপনজনকে নির্মমভাবে হারানোর গভীর বেদনা, দুঃখ ও সীমাহীন কষ্ট।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৯ মাস রক্তগঙ্গা পেরিয়ে গোটা বাঙালি জাতি যখন গৌরবোজ্জল বিজয়ের পথে দাঁড়িয়ে, ঠিক সেই সময়ই রাতের আঁধারে সুনিশ্চিন্ত পরাজয়ের গ্লানিমাখা রক্তলিপ্সু ও জঘন্য ঘাতক পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় ভয়ংকর দোসর রাজাকার, আলবদর ও শান্তি কমিটির সদস্যরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অর্থাৎ বরেণ্য শিক্ষক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের বেছে বেছে হত্যা করেছিল বুদ্ধি, মেধা ও মননে বাংলাদেশকে পঙ্গু করার এক জঘণ্য ও হীন উদ্দেশ্যে।
২৪ বছর পাকিস্তানী দুঃশাসনের দিনগুলোতে বরেণ্য সাহিত্যিক, শিক্ষক,সাংবাদিক, লেখক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানী স্বৈরাচারী ও ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালী জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তারা সর্বদা রাজনীতিকদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, সমর্থন দিয়েছেন ও তাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন । ২৪ বছর পাকিস্তানী দুঃশাসনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের বরেণ্য সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন জাতির বিবেক ও অনুপ্রেরণার অন্যতম উৎস । পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালী জাতির সংগ্রামে তারা সর্বদা রাজনীতিকদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন ও গতিশীলভাবে এগিয়ে চলার প্রেরণা দিয়েছেন।
১৯৭১ সালে গৌববউজ্জল বিজয়ের মাত্র দুইদিন আগে ১৪ ডিসেম্বরের এই কালো দিবসে দেশকে মেধাশূন্য করার পূর্বপরিকল্পনা নিয়ে ঘর থেকে তুলে নিয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় বাঙালি জাতির সেরা শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীসহ দেশের সেরা ও বরেণ্য কৃতী সন্তানদের।
এটা ধ্রূব সত্য যে, বুদ্ধিজীবীরাই জাগিয়ে রাখেন জনতাকে, জাগ্রত করেন জাতির বিবেক এবং লালন করেন সৎসাহস নিয়ে এগিয়ে চলার শুভ চিন্তা ও প্রত্যয়। অন্যায়কে অন্যায় বলার সাহস তারাই দেখাতে পারেন। বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকান্ড একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধগুলোর মধ্যে ঘৃণ্যতম। সবাই মনে করে এসব হত্যাযজ্ঞে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার মধ্যেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন সম্ভব বলে আমরা মনে করি। এসব ঘাতকের চূড়ান্ত বিচারের মাধ্যমেই জাতি দায়মুক্ত হতে পারে। তাইতো এহেন জঘন্য ও হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে রক্তলিপ্সু পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের ভয়ংকর এদেশীয় দোষররা চেয়েছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মহান স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যাতে এদেশে যথাযথভাবে বিকশিত না হয়। অত্যাচারী ও অশুভ শক্তির এ অপপ্রচেষ্ঠা সফল হয় নাই ।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নতির মডেল হিসাবে সর্বজনবিদিত । অন্যদিকে স্বাধীনতার ৭৪ বছর পরও পাকিস্তান আন্তর্জাতিকভাবে একটি জূকিপূর্ণ ও ব্যর্থ রাষ্ট্রের গ্লানি বহন করেই চলেছে । বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী ভারত ও বাংলাদেশের সমন্বয়ে গঠিত মিএ বাহিনীর কমান্ডার ইন চীফ ভারতের জগজিৎ সিংহ অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল। গোটা জাতি এবছর যথাযোগ্য মর্যাদার সহিত গৌরবউজ্জল বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তি পালন করছে।
বিদ্যুৎ ভৌমিক, সাবেক অধ্যাপক, লেখক ও সিবিএনএ এর উপদেষ্টা। মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান