তথ্যচিত্রে, প্রবন্ধে, আলোচনায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ
২৫ সেপ্টেম্বরকে বাংলাদেশেও ‘ইমিগ্র্যান্ট ডে‘ ঘোষণার দাবি
নিউইয়র্ক: ২৫ সেপ্টেম্বরকে নিউইয়র্ক স্টেটের আইন পরিষদ কর্তৃক ’বাংলাদেশী ইমিগ্রান্ট ডে‘ রেজুলেশন পাশ নিঃসন্দেহে একটি বড় ঘটনা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আমেরিকার মূলধারায় শ্রদ্ধা জানাবার জন্য মুক্তধারার এই উদ্যোগ স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপর্যুক্ত বক্তব্য রাখেন। এর আগে মুখ্য আলোচক জাতিসংঘের উন্নয়ন গবেষণা প্রধান ড. নজরুল ইসলাম তাঁর লিখিত প্রবন্ধে ঐতিহাসিক ২৫ সেপ্টেম্বরের গুরুত্বের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে নিউইয়র্ক স্টেট–এর মত বাংলাদেশেও জাতীয় সংসদে বিল এনে ‘ইমিগ্র্যান্ট ডে‘ ঘোষণার দাবি জানান। তিনি বলেন, নিউইয়র্ক স্টেট কর্তৃক দিনটির তাৎপর্য বিবেচনা করে যেভাবে মুক্তধারার প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিত সাহা ভিন্ন একটি দেশে বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট ডে আইন পাশ করিয়েছেন তা অভূতপূর্ব ঘটনা। তিনি উপস্থিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা ও বাঙালিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছিলেন। তাই বাংলাদেশি অভিবাসী দিবস হিসেবে এর চেয়ে ভালো দিন আর কী হতে পারে? এই বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে উদ্যোগ নেয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
নিউইয়র্ক সময় সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট ডের উপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলা ভাষণ, সিনেটে রেজুলেশন পাশ, এই বিষয়ে ড. আনিসুজ্জামান, আবুল মাল আব্দুল মুহিত, এ এইচ মাহমুদ আলির প্রতিক্রিয়া, কংগ্রেস ওম্যান গ্রেস মেং ও সিনেটে বিল উত্থাপনকারী সিনেটর স্ট্যাভেস্কির বক্তব্য স্থান পায়।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুক্তধারা নিউইয়র্কের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি বিশ্বজিত সাহা। তিনি তাঁর বক্তব্যে কোভিড এর মধ্যেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ইউনাইটেড স্টেট পোস্টাল সার্ভিস কর্তৃক স্মারক ডাকচিহ্ন প্রকাশ, নিউইয়র্ক স্টেট কর্তৃক ১৭ মার্চকে ‘বঙ্গবন্ধু ডে‘ ঘোষণাসহ আমেরিকায় বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিদের উদ্যোগে শিশু–কিশোর মেলার কথা তুলে ধরেন। এছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন উপলক্ষে মুক্তধারা ২০১৬ সাল থেকে ৬ বছরব্যাপী কর্মসূচী পালন করে ২৬ মার্চকে নিউইয়র্ক স্টেট কর্তৃক ইন্ডেপেন্ডেট ডে হিসেবে রেজুলেশন পাশ করার কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য ও সাবেক এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দীন, এফবিসিসিআই এর সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দীন, বিজিএমই–এর সভাপতি ফারুক হাসান, মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম, কুইন্স বরো সিভিল কোর্ট প্রাইমারী বিজয়ী জাজ সোমা সাঈদ আলোচনা করেন। সভাপতির বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ডা. জিয়াউদ্দীন আহমেদ দিনটির গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি মুক্তধারা নিউইয়র্ক কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১০০ ছবি প্রদর্শনের কথা উল্লেখ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন যখন জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন সেসময় কিভাবে বঙ্গবন্ধুর জাতিসংঘে প্রদত্ত ভাষণের ভিডিও উদ্ধার করেন তার বর্ণনা দেন। এছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
সংসদ সদস্য ও সাবেক এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দীন প্রবাসীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। বিজিমএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান ২৫ সেপ্টেম্বরের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর আলোকপাত করেন।
আলোচনা শেষে বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। এ সময় পুরো মিলনায়তন জুড়ে অন্ধকার হয়ে গেলে উপস্থিত সকলের হাতে ক্যান্ডেল জ্বলে ওঠে; নতুন প্রজন্মের শিল্পী জারিন মাইশার নেতৃত্বে আমেরিকার জাতীয় সংগীত ও তাজুল ইমামের নেতৃত্বে সমবেত কণ্ঠে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মম্যেমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন ক্লারা রোজারিও। সহযোগিতায় ছিলেন মিনহাজ আহমেদ, গোপাল সান্যাল, ইশতিয়াক রুপু, তোফাজ্জল লিটন ও আশফাক আমিন।
শেষ হয়েও হলো না …
রাত ৮টায় অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর যখন চা–পর্ব চলছিল, তখন একে অপরের সাথে মত বিনিময়, ছবি তোলার প্রতিযোগিতা চলছিল তখনি আবির্ভূত হন অনুষ্ঠানের আরেক অতিথি নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন ল্যু। অনুষ্ঠানের সভাপতি ডা. জিয়াউদ্দীন আহমেদ সিনেটরকে পরিচয় করিয়ে দিলে তিনি তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশকে ভালবাসার কথা এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ইমিগ্র্যান্ট ডে পাশের সময় তাঁর ভূমিকার কথা বললে উপস্থিত সকলে হাততালি দিয়ে সিনেটরকে অভিনন্দন জানান। এসময় এফবিসিসিআই এর সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দীন বঙ্গবন্ধুর উপর প্রকাশিত একটি গ্রন্থ জন ল্যুকে উপহার দেন।
মিলনায়তন ভাড়া নেয়ার সময়সীমা প্রায় শেষ। এক সময় অতিথিদের হল ছাড়ার কথা ঘোষণা করার পর অবশেষে ভাঙল মিলন মেলা।
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান