ইন্ডিয়ানাপলিসে নিহতদের ৪ জন ভারতীয় শিখ
কমলা হ্যারিসকে হত্যার হুমকিদাতা নারী গ্রেফতার
লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ১৫ এপ্রিল রাতে গুলিতে ইন্ডিয়ানাপলিস এয়ারপোর্টের নিকট ফেডএ্যাক্স ওয়ের হাউজে নিহত ৮ জনের মধ্যে চারজনই ভারতীয় শিখ বলে জানিয়েছে পুলিশ। অর্থাৎ এশিয়ান-বিদ্বেষী মনোভাবে এই বর্বরোচিত হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অনেকের ধারণা।
এর আগে, মধ্যমার্চে আটলান্টায় ৩ ম্যাসেজ পার্লারে হামলা চালিয়ে ৪ এশিয়ানসহ ৮ জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ফেডএ্যাক্সের এই সর্বশেষ হামলাকারি আগে থেকেই পুলিশের নজরদারিতে ছিল এবং হামলাকারির মা অনেক আগেই পুলিশ এবং ফেডএ্যাক্স কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিলেন এমন আচরণের আশংকায়।
উল্লেখ্য, আত্মঘাতী এই হামলাকারির নাম ব্র্যান্ডোন স্কট হোলে (১৯)। গত বছর সে এই স্থাপনার চাকরি ত্যাগ করে এক অজানা কারণে।
অপরদিকে, গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণকারি শিখ সম্প্রদায়ের সদস্যরা হলেন অমরজিৎ জোহাল (৬৬), জসিন্দর কাউর (৬৪), জসিন্দর সিংহ (৬৮), অমরজিৎ স্কন (৪৮)। অপর নিহতরা হলেন- ম্যাথিউ আলেক্সান্দার (৩২), সামারিয়া ব্ল্যাকওয়েল (১৯), কার্লি স্মীথ (১৯) এবং জন উইস্ট (৭৪)।
গুলিবিদ্ধ হয়ে ৭ জনের মত বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানায় তদন্ত কর্মকর্তারা।
পুলিশ আরো জানায়, কোন কথা ছাড়াই হামলাকারীরা স্থাপনার পার্কিং লট থেকে গুলি ছুড়তে ছুড়তে ভেতরে ঢুকে পড়ে। এরপর পুলিশী অভিযান শুরু হওয়ার সাথে সাথেই সে আত্মহত্যা করেছে। হামলার মোটিভ এখনও উদঘাটনে সক্ষম হয়নি ইন্ডিয়ানার পুলিশ। এদিকে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এহেন বন্দুক হামলার ঘটনাকে জাতির জন্যে ‘বিব্রতকর’ বলে মন্তব্য করেছেন। বাইডেন বলেছেন, এমন পরিস্থিতির অবসানে কিছু একটা করতে হবে জরুরীভাবে।
পুরো আমেরিকায় শিখ কমিউনিটিতে গভীর শোক এবং শংকা তৈরি হয়েছে। ৯/১১ এর সন্ত্রাসী হামলার পরও শিখ সম্প্রদায় হামলার শিকার হয়েছিল। মাথায় পাগড়ি পরার কারণে ওসামা বিন লাদেনের অনুগত মনে করে বিভিন্ন স্থানে উগ্রপন্থি আমেরিকানরা হামলা চালিয়ে বেশ ক’জনকে হত্যা করেছে। উইসকনসিনের ওইক ক্রীকে গুরুদুয়ারা শিখ মন্দিরেই ২০১২ সালে শ্বেতাঙ্গ চরমপন্থিরা ৬ শিখকে হত্যা করেছিল মুসলমান ভেবে। এবারও তেমন হামলার ভিকটিম হলেন বলে ইন্ডিয়ানাপলিসের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত সেই মন্দিরের লিডার ড. সুখিন্দর সিংহ (২৯) উল্লেখ করেছেন। যদিও এখন পর্যন্ত হত্যার মোটিভ জানতে পারেনি পুলিশ।
তিনি বলেছেন যে, গোটা শিখ কমিউনিটিই ভীত-সন্ত্রস্ত। ৫০ বছর আগে থেকেই এই স্টেটে শিখ সম্প্রদায়ের বসতি বেড়েছে। ৬ বছর আগে থেকে প্রতিবছরই এই স্টেটে শিখ সম্প্রদায়ের বর্ণাঢ্য প্যারেড অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকলেই আপন ভূবন হিসেবে গ্রহণ করে দিনাতিপাত করছিলেন। তারা নিজ ধর্ম-কর্ম এবং স্বদেশ-স্বজনের দুর্দিনে পাশে দাঁড়াতেন। অর্থ সহায়তা পাঠাতেন। এই এলাকায় সর্বপ্রথম ১৯৬৭ সালে বসতি গড়েন কানওয়াল প্রকাশ সিংহ। তিনি স্থানীয় সরকারের উচ্চপদে কাজ করতেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও দিয়েছেন। তার পরিচিতজনরা ক্রমান্বয়ে এই স্টেটে বসতি শুরু করেছেন। শিখ কোয়ালিশনের পক্ষ থেকে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়েছে। আর কেউ যাতে এমন জঘন্য পরিস্থিতির শিকার না হয় সেজন্য কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে শিখ কোয়ালিশন।
এদিকে, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে উপর্যুপরি হত্যার হুমকি প্রদানের মামলায় ফ্লোরিডার পুলিশ নিভাইয়েন পেটিটট ফেল্প নামক এক নারীকে গ্রেফতার করেছে। ফ্লোরিডা সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট ফেডারেল কোর্টে দায়েরকৃত মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই গ্রেফতারের তথ্য শুক্রবার জানানো হয়েছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, এ বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বেশ’বার হত্যা এবং শারিরীকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার হুমকি দেয় ঐ নারী। এরফলে ইউএস কোড সেকশন ৮৭১ এর ১৮ ধারা লংঘিত হয়েছে। মার্চের ৩ তারিখে এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট ডেভিড ব্যালেঙ্গার জানতে পারেন যে, কমলা হ্যারিসকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। কম্পিউটারের মাধ্যমে এই হুমকি দেয়া হয়। সেই ভিডিও সংগ্রহের পর এফবিআই তদন্তে নামে। ফেল্প তার স্বামীর কাছে প্রথমে পাঠিয়েছিলেন হত্যার হুমকির বিস্তারিত বিবরণ। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে তিনি খুবই ঘৃণা করেন এবং কোনভাবেই সহ্য করতে পারছেন না বলে ক্ষুব্ধচিত্তে উল্লেখ করেন ভিডিও বার্তায়। সেই বার্তায়ই সুস্পষ্টভাবে কমলা হ্যারিসকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘কমলা হ্যারিস, তুমি মরতে যাচ্ছো। তোমার মৃত্যুর দিন গণনা শুরু হয়েছে। আমি বন্দুক নিয়ে যাচ্ছি। সৃষ্টিকর্তার কসম, আজ হচ্ছে তোমার শেষ দিন। ৫০দিন আগে থেকেই এ দিনের অপেক্ষায় ছিলাম।