সুনামগঞ্জের শাল্লায় সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনায় উত্তাল সিলেট
আবুল কাশেম রুমন,সিলেট: ১৯মার্চ ২০২১ । সুনামগঞ্জের শাল্লায় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা ও বাড়ি ঘরে ভাঙচুর ও লুঠপাটের ২২ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জের শাল্লায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২২ জনকে আটক করা জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
দুই মামলার একটির বাদী শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম। অন্য মামলার বাদী স্থানীয় হাবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল।
মামলায় আসামি করা হয়েছে দিরাই থানার সরমঙ্গল ইউনিয়নের চন্দ্রপুর ও নাচনী এবং শাল্লা থানার হবিবপুর কাশিপুর গ্রামের ১৫০০ জনকে। মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে ‘ঘটনার উস্কানিদাতা’ নাচনী গ্রামের বাসিন্দা সরমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য স্বাধীন মিয়াকে।
এদিকে পুলিশ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ২২ জনকে আটক করেছে বলে জানান শাল্লা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটক করতে অভিযান চলছে। অভিযান পরিচালনার স্বার্থে আটককৃতদের নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
শাল্লা থানার ওসি নাজমুল হক জানান, পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। গ্রামবাসীর পক্ষে আরেকটি মামলায় ৫০ জনের নাম উল্লেখসহ অনেক অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা শহরে আয়োজিত সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী ও মাওলানা মামুনুল হক বক্তব্য দেন। মামুনুল হককে নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামের এক হিন্দু ধর্মাবলম্বী যুবক ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেন অভিযোগে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়।
সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লায় সংখ্যালঘুদের উপর ফেসবুক স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে মারধর বাড়ি ঘর ভাঙচুর, লোঠপাটে ইসলামী সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর ঘৃনার জন্ম দিয়েছে সিলেট জুড়ে। অমানিক কর্মকান্ডের কিছু সংখ্যক ইসলামী নেতাদের এ ঘটনায় জড়িত থাকাদের শাস্তি দাবী করছেন সিলেটের সচেতন মহল। যদিও ইতোমধ্যে পুলিশ ৭শত জনকে আসামী করে মামলা ও র্যাবের উধ্বর্তন পক্ষের পরিদর্শন শান্তিপূর্ণ বক্তব্য দিলেও হিন্দু সম্প্রদায় এ ঘটনাটি মেনে নিতে পারছেন না। গোঠা সিলেটের হিন্দু ঐক্য পরিষদের নেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ আন্দোলনের ঝড়। সিলেট প্রথম বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) দুস্কাল প্রতিরোধে আমরা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্টসহ নানা সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ছাত্র ফ্রন্টের মহানগর আহবায়ক সঞ্জয় শর্মার সঞ্চালনায় প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন বাসদ সিলেট জেলা সমন্বয়ক আবু জাফর, বাসদ জেলা সদস্য জুবায়ের আহমেদ চৌধুরী সুমন, ছাত্র ফ্রন্টের সাবেক সভাপতি প্রণব জ্যোতি পাল, পাপ্পু চন্দ, ছাত্র নেতা হৃত্ত্বিক কুমার দেব, নীলয় শর্মা উত্তম, শুভ্র দাস, দীপংকর রায় প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, শাল্লায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার ২ দিন হলেও প্রশাসন এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রফতার করতে পারেনি। বক্তারা আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে হামলার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করার দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, হেফাজতের নেতা মামুনুল হকের উসকানি মূলক বক্তব্যের কারণে এই হামলা হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এমন সাম্প্রদায়িক হামলা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সরকার মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে আপোষ করে চলছে। তাই বারবার এমন হামলার ঘটনা ঘটছে।
দুস্কাল প্রতিরোধে আমরা: সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও প্রামে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনায় হেফাজত নেতা মামুনুল হকসহ জতিড়দের গ্রেফতারের দাবিতে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে সম্প্রতিকালে নানা কর্মকান্ডের প্রতিবাদের মধ্যদিয়ে সিলেটে গড়ে উঠা ‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা। বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি জিন্দাবাজার পয়েন্ট ঘুরে শহিদ মিনারে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে এসে শেষ হয়।
দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’র সংগঠক দেবাশীষ দেবুর পরিচালনায় বক্তব্যে রাখেন- দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’র সংগঠক আবদুল করিম কিম, জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদির আহমদ মুক্তা, সাংস্কৃতিক সংগঠক শামসুল বাছিত শেরো, রিপন চৌধুরী, ভূমি সন্তান বাংলাদেশের সভাপতি আশরাফুল কবির, সিলেট মহানগর সেচ্ছাসেবকলীগের সহ সভাপতি এম রশীদ আহমদ, গণজাগরণ মঞ্চ সিলেটের সংগঠক রাজীব রাসেল, মার্কসবাদী পাঠক ফোরামের সংগঠক নিরঞ্জন সরকার অপু, সংস্কৃতিকর্মী হিতাংশু কর বাবু, তামিগ্রা তিথি, সিলেট জেলা ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি মাসুদ রানা চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক বিজয় করিম, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা, যুব ঐক্য পরিষদ সিলেট মহানগরের সভাপতি ধণঞ্জয় দাশ ধনু, যুব ছাত্র পরিষদের সদস্য সুপ্রিয় পাল রুপম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা মৃন্ময় দাশ ঝুটন প্রমুখ।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, বুধবার (১৭ মার্চ) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে শাল্লায় হামলা ঘটনা ঘটেছে। অথচ পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। প্রশাসন শাল্লায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আগের দিন মিছিল করার ঘোষণা দিলেও পুলিশ গ্রামে নিরাপত্তা জোরদার করেনি।
হাওর উন্নয়ন পরিষদের মানববন্ধন: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক রকন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেছেন, ভাটির জনপথের সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার নোয়াগাও গ্রামে বর্বরোচিত এই হামলা হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি নষ্ট করার পায়তারা করছে মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা। তিনি অনতিবিলম্বে এসব মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে জানান। হাওর উন্নয়ন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত বর্মনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খালেদ মিয়ার পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- মহানগর আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক তপন মিত্র, সিলেট জেলা এডিশনাল পিপি এডভোকেট শামসুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা সুদীপ দেব, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এনামুল মুনীর, বিএমবিএফ এর যুগ্ম মহাসচিব মনোরঞ্জন তালুকদার, ছাত্রনেতা অরুন দেবনাথ সাগর, শেখ আক্তার।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. বশির আহমদ, ঋতু রঞ্জন দেব, আওয়ামী লীগ নেতা মো. বেলাল উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন, এডভোকেট বনশ্রী দাস অপু, এডভোকেট সুবল চন্দ্র পাল, ভুলন পাল, আখলাক হোসেন, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ, মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা সায়েল আহমদ প্রমুখ।
এস এস/সিএ