করোনাভাইরাস
৬৭ কোটি ডলারের জরুরি তহবিল চায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
চীনে মৃত বেড়ে ৫৬৩
৬৭ কোটি ডলারের জরুরি তহবিল চায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা । বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে জরুরিভাবে ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার অনুদান প্রয়োজন বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। যেসব দেশ ও অঞ্চল এ ভাইরাসের ঝুঁকিতে আছে, সেসব স্থানে চলতি ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এ অর্থ ব্যয় করতে চায় সংস্থাটি। এদিকে গত বুধবার চীনে আরো ৭৩ জন করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি মারা গেছে। এতে সেখানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬৩ জনে। আর আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ২৮ হাজার।
জরুরি তহবিলের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ডাব্লিউএইচও মহাপরিচালক টেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেন, সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো—এমন অনেক দেশ আছে, যাদের এ ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা, এমনকি কোথা থেকে এর উদ্ভব হতে পারে, তা শনাক্ত করার মতো পদ্ধতি নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে আক্রান্তদের শনাক্ত করা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং তাদের সেবা নিশ্চিতে দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাগুলোকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানো ঠেকাতে ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।
ডাব্লিউএইচও বলছে, দুর্বল স্বাস্থ্যসেবার এসব দেশ যাতে করোনাভাইরাস ঠেকানোর মতো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারে, সে জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হবে স্ট্র্যাটেজিক প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্ল্যানের (এসপিআরপি) আওতায়। আর এটি করতে গেলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থাগুলোর বৈশ্বিক সহায়তা প্রয়োজন হবে। এই অর্থ যেসব কাজে ব্যয়ের পরিকল্পনা আছে, সেগুলো হলো—ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোতে মানুষ থেকে মানুষে এই ভাইরাসের বিস্তার কমিয়ে আনা; প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্তদের শনাক্ত, অন্যদের থেকে আলাদা করা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা; গুরুতর ঝুঁকি ও তথ্য সংগ্রহ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব কমিয়ে আনা, প্রাণীদের মধ্য থেকে ভাইরাসটির বিস্তার কমানো এবং অজানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা।
ডাব্লিউএইচওর হেলথ ইমারজেন্সিস প্রগ্রামের প্রধান মাইক রায়ান বলেন, ‘(ভাইরাসের) প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আগে প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করে কার্যকর সাড়ার বিষয়টি। তাই করোনাভাইরাস আমাদের দোরগোড়ায় আসার আগেই ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করার মতো সহায়তা দিতে চাই আমরা।’
এই মুহূর্তে শুধু চীনই নয়, পুরো বিশ্বই করোনাভাইরাসের হুমকিতে রয়েছে বলে ডাব্লিউএইচওর এসপিআরপিতে বলা হয়েছে। সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চীনসহ ২৫টি দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে আক্রান্তদের ৯৯ শতাংশই চীনে। আর অন্যান্য দেশে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১৯১ জন।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্যানুযায়ী, বুধবার নতুন করে ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছেন আরো দুই হাজার ৯৮৭ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ১৮ জনে। আর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ফেরা মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৫৩।
এখন পর্যন্ত চীনের বাইরে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। একজন ফিলিপাইন ও একজন হংকংয়ের। তারা প্রত্যেকেই চীনের উহান প্রদেশ থেকে ফিরেছিল।
গতকাল বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া ছুন ইং জানান, এ পর্যন্ত চীনে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ জন বিদেশি। আক্রান্তদের মধ্যে দুজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং বাকি ১৭ জন চিকিৎসাধীন আছেন।
হুয়া ছুন ইং বলেন, বিদেশি নাগরিকদের জীবন ও স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দেয় বেইজিং। তাদের চিকিৎসায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থানরত বিদেশিদের মধ্যে মহামারি প্রতিরোধক তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
উহান থেকে কয়েক হাজার বিদেশিকে সরিয়ে নেওয়ার পর তাঁদের নিজ নিজ দেশে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে ও হংকং বন্দরে দুটি প্রমোদতরীর কয়েক হাজার যাত্রী ও ক্রুকে পর্যবেক্ষণের জন্য জাহাজেই অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
ইয়োকোহামা বন্দরে পৃথক অবস্থায় রাখা প্রমোদতরীটির আরো ১০ যাত্রীর শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে বলে জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এদের নিয়ে প্রমোদতরীটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ জনে দাঁড়িয়েছে।
গত মাসের শেষ দিকে হংকংয়ের ৮০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি প্রমোদতরীটিতে ভ্রমণ করে যাওয়ার পর তার শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। এরপর থেকে জাহাজটির প্রায় ৩৭০০ আরোহীকে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে এবং তাদের প্রায় দুই সপ্তাহ পৃথক অবস্থায় পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। সূত্র : এএফপি, রয়টার্স, সিআরআই।