প্রবাসের সংবাদ ফিচার্ড

অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার পথে তুষারপাতে যুবকের মৃত্যু

নিহত আমিন উল্লাহ সুমন

অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার পথে তুষারপাতে যুবকের মৃত্যু

অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার পথে তীব্র তুষারপাতে আমিন উল্লাহ সুমন (২৬) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

নিহত আমিন উল্লাহ সুমন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের চরশাহাভিকারী গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে সুমন ছিল সবার ছোট। সুমনের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম গ্রিসে বসবাস করছেন।

গ্রিস থেকে সাইফুল ইসলাম ফেনীর গণমাধ্যমকর্মীদের মঙ্গলবার জানান, “গত ৩১ জানুয়ারি সুমনসহ ২০ জনের একটি দল তুরস্ক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে গ্রিসে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। সেই থেকে নিখোঁজ ছিলেন সুমন। পরিবার তার কোনো খোঁজ পাচ্ছিল না।

এরপর গত তিন সপ্তাহ ধরে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সুমনের ছবি ও মুঠোফোন নম্বর দিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সন্ধান চাওয়া হয়। তখন সঙ্গীদের মাধ্যমে জানা যায়, পুলিশ দুদিন আটকে রেখে তাদের আবার তুরস্কে পাঠিয়ে দেয়। তখন তীব্র তুষারপাত হচ্ছিল। এতে সুমনসহ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন।

পরে তাদের ইস্তাম্বুলের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই আমার ভাই সুমন মারা যায় বলে জানতে পেরেছি। পরিচয় শনাক্তের জন্য সুমনের মরদেহ হিমঘরে রাখা হয়েছে।

সাইফুল আরও জানান, তুরস্কের প্রবাসী সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের পূর্ববড়ধলী গ্রামের আব্দুর রহমান মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলের সেই হাসপাতালের হিমঘরে গিয়ে সুমনের মরদেহ শনাক্ত করে এবং আমাকে জানায়।

সুমনের বড় বোন নাসিমা আক্তার বলেন, সুমন সোনাগাজীর চরশাহাভিকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে এসএসসি পাস করেছে। এরপর সে বিয়ে করে এবং পাঁচ বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে তার।

২০২১ সালে জীবিকার তাগিদে সুমন দেশ ছেড়ে ওমান চলে যায়। ছয় মাস ওমানের থাকার পর সেখান থেকে এক দালালের মাধ্যমে ইরাক চলে যায়। ইরাক থেকে আরেক দালালের মাধ্যমে তুরস্কে অবস্থান নেয়।

নাসিমা আক্তার আরও বলেন, পরবর্তীতে হবিগঞ্জের এক দালালের সঙ্গে তিন লাখ টাকা চুক্তিতে গ্রিসে যাওয়ার চেষ্টা করে একাধিকবার ব্যর্থ হয়। গত ৩১ জানুয়ারি সুমন আমাদের জানিয়ে চতুর্থবারের মতো গ্রিসে যাওয়ার চেষ্টা করে। এরপর থেকে আমরা তার আর কোনো খোঁজ পাচ্ছিলাম না।

সুমনের মৃত্যু খবর আসার পর পরিবারে শোকের মাতম চলছে। স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রী বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন।

সুমনের মৃত্যুর খবরটি পরিবারের মাধ্যমে জেনেছেন বলে জানান চরদরবেশ ইউনিয়নের সদস্য মো. আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, সুমনের পরিবারের সদস্যরা তার মরদেহ ফেরত আনার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এর আগে ইস্তাম্বুল থেকে গ্রিস যাওয়ার পথে নজরুল ইসলাম শাহীন (২৮) নামে ফেনীর আরও এক যুবকের মৃত্যুর খবর পায় পরিবার। তিনিও গ্রিস যাওয়ার পথে গত ৩১ জানুয়ারি নিখোঁজ হন। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি পরিবার শাহীনের মৃত্যুর খবর পায়। তার লাশও ইস্তাম্বুলের একটি হাসপাতালে শনাক্ত করে তুরস্কের এক প্রবাসী বাংলাদেশি।

নিহত নজরুল ইসলাম শাহীন ফেনী পৌরসভার আট নম্বর ওয়ার্ড বারাহীপুর এলাকার আবদুর রউফ মাস্টারবাড়ির মিজানুর রহমানের ছেলে।

পরিবাবের সদস্যরা শাহীনের মরদেহ দেশে আনতে বাংলাদেশ সরকার ও দূতাবাসের সহযোগিতা কামনা করেছে।

 


সংবাদটি শেয়ার করুন