লেখালেখি

অমিত পর্ব – ১০   |||| সুশীল কুমার পোদ্দার

অমিত পর্ব - ৯

পূর্ব প্রকাশের পর….

অমিত পর্ব – ১০   |||| সুশীল কুমার পোদ্দার

 দ্বিধাদ্বন্দ্বের দোলাচলে দোদুল্যমান মানুষগুলোকে দেখে অমিতের করুণা জাগে মনে। একই সাথে মনের গভীর কোন উৎস হতে একটা সুখানুভূতি ওকে ক্ষনিকের তরে আচ্ছন্ন করে । অমিত সেই ক্ষণিক সুখানুভূতির অমানবিক ঘোর থেকে নিজকে বেড় করে আনে। ও বুঝতে পারে না কিভাবে এই পাপিষ্ঠ ডুবন্ত মানুষগুলোকে সে শুনাবে কোন স্বস্তির বাণী! ও নীরবে বেড় হয়ে আসে ঘর থাকে। অদূরে ঝর ঝর ধারায় বৃষ্টি ঝরছে। একটা হিমেল বাতাস, একটা জলজ গন্ধ ওর মনের ক্লেদ ধুয়ে দেয় পরম স্নিকগ্ধতায়। জ্যোৎস্নায় ভেসে গেছে চরাচর। ওর চোখে পড়ে পাহাড়ি ঢালে বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত। তাঁরই কোন এক ফসলী ক্ষেতে আকাশ থেকে কৃত্রিম বৃষ্টি পড়ছে ঝরে। নতুন পৃথিবীতে বিজ্ঞান প্রকৃতির উপর নির্ভরতা কমিয়ে দিয়েছে। আজ অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে। খরাতে ফেটে যাওয়া বিরস মাটিকে প্রয়োজনীয় কৃত্রিম বৃষ্টিজলে স্নাত করে, পুষ্টি দিয়ে, আবহাওয়া দিয়ে ফলাচ্ছে প্রয়োজনীয় ফসল। এককালের বিশাল বিশাল সাইক্লোন, ভয়াবহ ঝড়কে করেছে নিয়ন্ত্রণ। আজ সারা বিশ্ব একত্রিত হয়েছে সমন্বিত খাদ্য নিরাপত্তা কার্যক্রমের অধীনে। ফল, ফুল, ফসলের মাঠে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খরচ-সাশ্রয়ী , প্রকৃতি-বান্ধব হয়ে কাজ করে চলেছে। আজ কৃষকের নেই কোন দুর্ভাবনা ফসলের রোগ বালাই নিয়ে, ওদের ক্ষুধা তৃষ্ণা নিয়ে।

অমিত গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। সকালে তাকে কয়েকবার বয়েরা ডেকে গেছে। অমিত ধরপড়িয়ে ঘুম থকে জেগে ওঠে। মনে পড়ে আজই তো ওদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে – নিধারিত হবে কে কোথায় যাবে? এতে অমিতের কোন ভাবান্তর জাগে না। ওর কাছে সারা পৃথিবী আজ এক হয়ে গেছে। কিন্তু ওর মনে ভেসে ওঠে গেরুয়া আর আলখাল্লার মুখাবয়ব। ঘর থেকে বেড় হতেই ওদের সাথে দেখা হয়। আলখাল্লার স্বভাব-সুলভ হাসি উবে গেছে। গেরুয়া এক রাত্রে অনেকটা বুড়িয়ে গেছে, বিপ্লবোত্তর ধরা পরা রাশিয়ার অত্যাচারী জারের মতো । কেউ যেন কাউকে চেনে না। ওরা বাসে আগুন্তুকের মতো হয়ে পাশাপাশি বসে থাকে, নির্বাক হয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে উদ্দেশহীন ভাবে। অমিত মনে মনে ভাবে – ওরা কি ওদের কৃত কর্মের জন্য আজ লজ্জিত? আত্মদহনের তীব্র জ্বালায় ওরা কি ব্যথিত??

ওরা নীরবে ওদের নিজ নিজ আসনে বসে পড়ে। ওদের জন্য ব্রেকফাস্ট দেওয়া হয়েছে। গেরুয়া আলখাল্লা সহ অনেকেই আসনে বসে থাকে উদাস হয়ে। অনেকের মুখেই ভয়, অনিশ্চয়তার ছায়া। আলখাল্লার হাতে তসবি, গেরুয়ার হাতে রুদ্রাক্ষের মালা। দুজনেই বির বির করে আপন মনে কি যেন আউড়িয়ে যায়। আলখাল্লা ফিসফিস করে সেলুকে বলে, ভয় পাবি না। আমিতো নামে বেনামে, তোর নামে অনেক সম্পত্তি করেছি। ওরা খুজেও পাবেনা ! আর তেমন কিছু হলে তুই একা দেশে চলে যেয়ে ভালো এক উকিল ধরবি। বলতে বলতে আবারো ও দ্রুতলয়ে তসবিরের দানাগুলো গুনতে থাকে। অমিত অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখে অনিশ্চয়তা, ভীতি থেকে মুক্তি পেতে ভিন্ন ভিন্ন ঈশ্বরের কাছে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের এক এবং অভিন্ন ভাবে আত্মসমর্পণের দৃশ্য !

মঞ্চে উঠে আসেন কয়েকজন অভিবাসন কৌশলী। তারা সবাইকে অভয় দিয়ে বলেন – আমরা জানি, আপনারা যথেষ্ট উদ্বেগে আছেন আপনাদের ভবিষ্যৎ গন্তব্য নিয়ে। আমরা আপনাদের নিজস্ব দেশের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা অনেকেই আপনাদের স্বস্মমানে ফিরিয়ে নিতে আগ্রহী। তবে কিছু দেশ কিছু বিশেষ মানুষকে ফিরিয়ে নিতে দ্বিধান্বিত – বিশেষ করে যারা ক্রায়োজেন পূর্ববর্তী জীবনে বিভিন্ন অপরাধের সাথে যুক্ত ছিলেন। তবে কথা দিচ্ছি, তারা সকলেই ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর সহায়তা পাবেন। হয়তো তাদের গচ্ছিত অর্থ, স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হতে পারে, তবে সবই নির্ভর করছে অপরাধের মাত্রার উপর। আপনাদের একে একে সবাইকে ডাকা হবে আপন আপন সমস্যা সমাধানের জন্য; ততোক্ষণ আপনারা নিজ নিজ আসনে অপেক্ষা করুন।

বক্তার কথা শেষ না হতেই হলরুম জুড়ে একটা মৃদু গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ চেয়ার ছেড়ে বসে পড়ে মাটিতে। আলখাল্লা অপ্রকৃতস্থের মতো বার বার হেসে উঠে। বললেই হইল। আমার কামায়ের টাকা দেশ নিয়ে নিব – মগের মুল্লুক! পাশে মাটির দিকে বিষণ্ণ ভাবে তাকিয়ে থাকা গেরুয়ার হাতে হাত রেখে বলে ওঠে – ভয় নাই দাদা, এমন ব্যবস্থা করমু যে কোন হালাই গায়ে হাত দেবার সাহস পাইব না। বাঙ্গালী জাতি একশ বছরে আর কতটা বদলাইবো? টাকা ছড়ালে কাউয়ার অভাব হইব না। গেরুয়ার কোন উত্তর না পেয়ে আরও কিছু বলতে যেয়ে ফিসফিস করে বলে ওঠে- দাদা, হাত এতো ঠাণ্ডা ক্যান, কথা কন্না ক্যান? এমন টাস্কি মাইরা আছেন ক্যান? দাদা উত্তর দেন না। একটা ম্রদু ধাক্কা দিতেই উনি গড়িয়ে পড়েন মাটিতে …

চলবে…

 

অমিত পর্ব – ১০ |||| সুশীল কুমার পোদ্দার ওয়াটারলু, কানাডা নিবাসী ।  ফলিত পদার্থ বিদ্যা ও ইলেকট্রনিক্স,  মাস্টার্স,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , বাংলাদেশ ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স,   ইহিমে বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান। ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, পি, এইচ, ডি,   ইহিমে বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান। সিস্টেম ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স,  ওয়াটারলু, বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা ।।

 

সিএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

 

সংবাদটি শেয়ার করুন