আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওনা: কবি নিখিল রায়
শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।। ‘ফুল ফুটুক বা না ফুটুক বসন্ত এসে গেছে-’। মহাকাব্য হোক বা নাহোক, বঙ্গবন্ধু’র ওপর প্রথম মহাকাব্য রচনা’র কৃতিত্ব ওড়াকান্দির কৃতি সন্তান মুক্তিযোদ্ধা কবি নিখিল রায়-র। ওড়াকান্দিতে দু’জন মহাপুরুষ হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুর মতুয়া সম্প্রদায়কে শিক্ষিত করার যে মন্ত্র দিয়েছেন, সেই মন্ত্রে সুশিক্ষিত কবি নিখিল রায়, বহু কবি-সাহিত্যিক, তদবির করে পদক পাওয়া লেখক-কে পেছনে ফেলে দিয়েছেন। সাহিত্য অঙ্গনে কবি নিখিল রায় ততটা পরিচিত কেউ নন, এ যাবৎ তাঁর ৩২টি বই বেরিয়েছে। যদি জীবনে আর কিছুই না করতেন, শুধুমাত্র ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী–’ কবিতা লিখে প্রয়াত আবদুল গাফফার চৌধুরী এবং ‘তুই রাজাকার’ শব্দ দু’টি ব্যবহার হুমায়ুন আহমদ বাঙ্গালীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। বাউল শাহ আব্দুল করিম বা ক্লিক প্রসাদ ভট্টাচার্যকে মানুষ আগে চিনতো না, এখন চিনে। কেজানে, হয়তো একদিন কবি নিখিল রায় বঙ্গবন্ধু’র ওপর মহাকাব্যের জন্যে বিখ্যাত হয়ে যাবেন?
আপাতত: সেই সম্ভবনা দেখিনা। কারণ বড়বড় সাহিত্য বিশারদকে তিনি জমাখরচ দিতে শেখেননি, একাডেমির লোকজনকে আদর-আপ্যায়ন করতে পারেন না, শুধু লেখা দিয়ে কি সব হয়? লেখা কয়জন পড়ে? আর পড়লেই কি, নিজের লোক না হলে কিছুই হয়না! পাঠক, মনের দু:খে সত্যকথা লিখছি। ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্ক এসেছিলেন, কবি নিখিল রায় সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন তার মহাকাব্যটি বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতে পৌঁছাতে। পারেননি। এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রীও পৌঁছে দেননি? এ তালিকায় আরো অনেকে আছেন কবি যাদের হাতে বই পৌঁছে দিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের কাজটি করেননি, আমি নিশ্চিত বইটি পেলে প্রধানমন্ত্রী খুশি হতেন, কারণ যেকোন সন্তান পিতামাতার গর্বে গর্বিত হতে চায়।
মহাকাব্য ‘শেখ মুজিবের বাংলায়’ (In the Bengal of Sheikh Mujib)’-এর একটি ব্যতিক্রমী প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে শুক্রবার (২৭/১০/২০২৩) জ্যাকসন হাইট্সে। বলতে লজ্জা নেই যে, আশরাফুল আলম বুল্বুল এবং আমি এর আয়োজক। কবি’র বয়স ৮২, সদ্য তাঁর স্ত্রী মারা গেছেন। এরপর তিনি কিছুটা ভেঙ্গে পড়েছেন। সত্যি কথা বলতে কি, একজন মানুষ এই বয়সে ক্রমাগত লিখে যাচ্ছেন, এই কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে আমরা এ কর্মে হাত দিয়েছি। করোনাকালে এ মহাকাব্য লিখতে তাঁর প্রায় এক বছর সময় লেগেছে, এটি কম কথা নয়! ওবায়দুল্লাহ মামুন এবং আমি পরামর্শ করে কবিকে সন্মান জানাতে মঞ্চে শুধু কবি একাই উপবিষ্ট থাকবেন, এ সিদ্ধান্ত নেই। তাই অনুষ্ঠানে কোন সভাপতি বা প্রধান অতিথি ছিলেন না?
নিউইয়র্কে সচরাচর যাঁরা মঞ্চ আলো করে বসে থাকেন, সভাপতি, প্রধান অতিথি না করলে আসেন-না, ‘টকশো’র বক্তাদের মত যাঁরা সকল বিষয়ে বিশারদ, মাইক পেলে ছাড়তে চাননা, তারা অনুষ্ঠানে আসেননি। তাঁরা আমন্ত্রিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের আগের দিন আমি সবাইকে একটি অনুরোধ জানাই, ‘আসুন আমরা এই প্রবীণ কবিকে সন্মান করি’। তেমন সাড়া মেলেনি, আমরা সন্মান চাই, দিতে শিখিনি। একই কথা জানাই প্রতিটি মিডিয়াকে। শুধুমাত্র জন্মভূমি ও প্রবাস সম্পাদক ব্যতীত অন্য কেউ আসেননি। বাঙ্গালী ও প্রথম আলো তাঁদের অপারগতার কথা আগেই জানিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু’র ওপর অনুষ্ঠান, আওয়ামী ঘরানার একমাত্র আইরিন পারভীন এসেছেন, বই নিয়েছেন, শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে দু’চারটি কথা বলে শেষ করবো। বিখ্যাত লোকজন না এলেও অনুষ্ঠানে সাধারণ বঙ্গবন্ধু প্রেমিক যথেষ্ট উপস্থিত ছিলেন। সভাপতি বা প্রধান অতিথি নেই, উপস্থিত সবাই সম্মানিত অতিথি ছিলেন। কনস্যুলেট থেকে একজন ‘কনসাল’ এসেছিলেন, এসেই উপস্থাপককে ধরে ভাষণ দিয়ে দ্রুত প্রস্থান করেন। মহাকাব্য ‘শেখ মুজিবের বাংলায়’ মোড়ক উন্মোচন করেন মুক্তিযোদ্ধারা, যা ব্যতিক্রমী ঘটনা। মঞ্চে ছিলেন একা কবি নিখিল রায়। উপস্থাপন করেন আশরাফুল আলম বুল্বুল। মহাকাব্য নিয়ে আলোচনা করেন ওবায়দুল্লাহ মামুন ও শিতাংশু গুহ। বেশ ক’জন মুক্তিযোদ্ধা ও শুভানুধ্যায়ী বক্তব্য রাখেন। কবি নিখিল রায় তার বক্তব্যে বলেন, রামায়ণ, মহাভারত, বিষাদসিন্ধু, মেঘনাদবধ মহাকাব্য হলেও এর মহানায়করা সবাই অবাঙ্গালী। তিনিই প্রথম বাঙ্গালী, যিনি নিজে একজন বাঙ্গালী আর এক বাঙ্গালী মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মহাকাব্য রচনা করেছেন।
‘তোমার কর্মের চেয়ে তুমি যে মহান’ একথা স্মরণে রেখে আমরা কবি নিখিল রায়কে সন্মান জানানোর চেষ্টা করেছি। সভাস্থলে বলেছি, আবারো বলছি, তাঁর মহাকাব্যের মূল্যায়ন করার যোগ্যতা আমার নেই, সেটি ভবিষ্যৎ করবে, আমরা নিমিত্ত মাত্র। মহাকাব্য হোক বা নাহোক, কবি নিখিল রায় চেষ্টা করেছেন, এটিই যথেষ্ট। অনুষ্ঠানে আবেগ আপ্লুত হয়ে কবি নিখিল রায় বলেছেন, ‘আজকের এ অনুষ্ঠান আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওনা’। আমরাও বলতে চাই, সেদিন উপস্থিত থেকে আপনাকে সন্মান জানাতে পেরে আমরা ধন্য, গর্বিত। আপনি সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, আপনার কলম চলুক অবিরাম, অবিরত। # [email protected];