( আমার মা-কে )
মাঝে মাঝে আমি সেই
অভিমানী জায়গায় ঘুরে বেড়াই, ঘুরে যাই
মায়াময় প্রাক্তন জল-হাওয়া-আলো-মৃত্তিকা
পৃথিবীতে যেখানে একদিন তুমি ছিলে
এখনও তো পেছন পানে তাকিয়ে ত্রিমাত্রিক
নিসর্গ দেখি, নিমেষে থমকে দাঁড়াই
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শ্বাস টানার চেষ্টা করি
রক্তের শিরা-উপশিরায় অজান্তে ঢুকে পড়ে
সেই সুগন্ধ : তুমি ছিলে বলে যা আরো
প্রিয় হয়ে উঠেছিল । এখনও ডাকে
ডাক দিয়ে যায়
তোমারই নাড়ির টানে ফিরি
তোমারই ছোঁয়ার টানে ফিরে আসি
ফিরে যাই, ম ম তোমাকে টের পাই
টিনের চালায় টুপটাপ চুপচাপ
শিশিরের শব্দের মতন
তোমার সোহাগ পরাণে পড়ে, পরাণে পশে
উথলি উঠে স্মৃতির পাতাল ফুঁড়ে
চিত্ররূপময় অপরূপ এক স্বরূপ
চিত্ররূপময় অপরূপ এক অরূপ
অপরূপ রূপময় চিত্র নয়
তুমি ছায়াছবি নও
অপর আত্মা আমার
অমর্ত্য আত্মা আমার
অমূর্ত আত্মা আমার
নেই নও তুমি
সশরীরী নও, অশরীরী নও
বড় বেশি বাজো, বাজাও
সত্তাময় বাঙ্ময়—
এক অতল শূন্যের তলে
এক নিঃসীম শূন্যের পাতালে
দাঁড়াও, সুদূরে-অদূরে দাঁড়াও, দাঁড়িয়ে থাকো
বাঁশির রন্ধ্রপথে যেমন সুর হামাগুড়ি দিয়ে আসে
ঊর্মি যেমন দিলদরিয়া হয়ে উপকূলে ঢোকে
বাতাস যেমন বুকের ভেতরে
পায়চারি করে, হেঁটে বেড়ায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার অশ্রুনদীর পাড়ের তীর
সদ্য নয়, মৃত নয়, জীবন্ত চর
হে আমার আজন্ম ভিটে
হে আমার আজীবন মিতে
হে আমার আমৃত্যু সহচর
এখনও মন পড়ে
এখনও মনে পড়ে
এখনও মন পোড়ে
একদিন এই আমি হয়ে যাব তুমিহীন
একদিন এই আমি হয়ে যাব আমিহীন
একদিন এই আমি হয়ে যাব তুমি
তুমিহীন আমি তুমি ।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি পুলক বড়ুয়া: কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, কলাম লিখেন । প্রকাশিত বইয়ের নাম : ওই পূর্বে রাঙা সূর্যে, পাঠেরা খেলছে মাঠে ।