ঈশ্বরদীর সফল কৃষক নুরুন্নাহারের গল্প
আলাউদ্দিন আহমেদ ।। লালশাক, পুঁইশাক ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম বিশ্বাসের স্ত্রী নুরুন্ন্নাহার।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন ২০১০ সালে সিটি গ্রুপ জাতীয় পুরস্কার। পুরস্কারস্বরূপ পেয়েছেন সাড়ে তিন লাখ টাকা, সনদপত্র এবং একটি ২৪ ইঞ্চি রঙিন টেলিভিশন। এছাড়া ২০১১ সালে দেশের সেরা নারী কৃষক হিসেবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি ব্রোঞ্জ পদক, ২০১৬ সালে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি স্বর্ণ পদক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফল নারী উদ্যোক্তা ও নারী কৃষক নুরুন্নাহারের হাতে তুলে দেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক। ২০১৭ সালে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ১ লাখ টাকাসহ রাঁধুনী কীর্তিমতী অ্যাওয়ার্ড, ২০১৭ সালে জাতীয় সবজি পদক, ২০১৮ সালে কেআইবি পদক পেয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জয়বাংলা নারী উন্নয়ন মহিলা সমবায় সমিতি ও এনসিডিপি গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভানেত্রী নারী উদ্যোক্তা নুরুন্নাহার বলেন, এক হাজারের বেশি নারীদের সংগঠিত করে তাদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করছি।
কিভাবে কাজে সম্পৃক্ত হয়েছেন- এ প্রসঙ্গে নুরুন্নাহার জানান, স্বামী কাজে বেরিয়ে গেলে অলস সময় কাটাতে ভালো লাগত না। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে শায়েখ সিরাজের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান দেখে তারও ইচ্ছে জাগে বসতবাড়ির আশপাশে শাক-সবজি ও ফলমূলের বাগান গড়ে তোলার। এরপর আর থেমে থাকেননি নুরুন্নাহার। লালশাক, পুঁইশাক, বেগুন, গোল আলু, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ ইত্যাদি বাড়ির আঙ্গিনায় চাষ করি। তা দিয়েই সারা বছরের সবজির চাহিদা মিটত। এমনকি বাড়তি কিছু আয়ও হয়। প্রথম দিকে স্বামী তার এহেন কর্মকাণ্ডে কিছুটা বিরক্ত হতেন। এরপর সংসারে সচ্ছলতা দেখে আর দ্বিমত করেননি। ২০০৫ সালে ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, জাকির হোসেন ও আবদুর রশিদ তার এলাকায় ব্র্যাক এনসিডিপি’র মহিলা গ্রাম কমিটি গঠন করেন। এর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব বর্তায় তার ওপর। এতে করে তার স্বামীর আগ্রহ আরও বেড়ে যায়।
একই বছর সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বসতবাড়ির আঙ্গিনায় এবং বাড়িসংলগ্ন ৫ বিঘা জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, গাজর ইত্যাদি ফসলের আবাদ করেন। আশাতীত লাভবান হন। পরের বছর ৩১ আগস্ট ঋণ পরিশোধ করে দ্বিতীয়বারের মতো ২০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এ অবস্থায় তিনি জানতে পারেন, বড়ইচারা দক্ষিণপাড়ায় ছিদ্দিকুর রহমান ময়েজের কুল চাষ প্রকল্পের কথা। ময়েজের কাছ থেকে চারা কিনে এনে নুরুন্নাহার ১৭৫টি গাছের একটি কুল বাগান গড়ে তোলেন। প্রথম বছর কুল বিক্রি করে তিনি ২৫ হাজার টাকা আয় করেন।
এছাড়া উন্নত জাতের পেয়ারার ৪০টি গাছও লাগান আঙ্গিনায়। বর্তমানে তার খামারে ১০০টি গরু, ৪ হাজার সোনালি মুরগি, ২ বিঘা ড্রাগন, ৭ বিঘা পেয়ারা, ৬ বিঘা লিচু, ৫ বিঘা পেঁপে, ২ বিঘা কলা, ৪ বিঘা লাউ, ৪ বিঘা ফুলকপি, ৪ বিঘা পেঁয়াজ, ৩ বিঘা রসুন, ১ বিঘা টমেটো, ৩ বিঘা বেগুন, ৩ বিঘা মটর, ২ বিঘা গম, ৪ বিঘা আলু, ২০ বিঘা মসুর চাষ করছেন। ধীরে ধীরে নুরুন্নাহারের সফলতার খবর ছড়িয়ে পড়ে গোটা পাবনা জেলায়।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নুরুন্নাহারের কাছে কৃষিকাজের পরামর্শ নিতে ছুটে আসেন অনেকে। নুরুন্নাহারও তাদের সহজভাবে বোঝান। নুরুন্ন্নাহার তার গ্রামের ২০০ নারীকে হাতে কলমে কৃষি কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কৃষক হিসেবে গড়ে তোলেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আবদুল লতিফ বলেন, নুরুন্নাহার বেগম পরিশ্রম, ধৈর্য, অধ্যবসায়, সাহস ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে সংগ্রাম করে সাহসিকতার মধ্য দিয়ে কৃষি খামার করেছেন। তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা ও খামারি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।
পরিশ্রম মানুষকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যায় তার বাস্তব প্রমাণ হল নুরুন্নাহার বেগম। কঠোর পরিশ্রম করে নুরুন্ন্নাহার বেগম একজন মডেল খামারি হিসেবে ইতিমধ্যে ঈশ্বরদীতে পরিচিতি লাভ করেছেন। নুরুন্নাহার বেগমের সফলতা দেখে ছলিমপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের নারীরাও কৃষিকাজে এগিয়ে এসেছেন। পরিশ্রম, ধৈর্য, অধ্যবসায়, সাহস ও মেধাকে কাজে লাগাতে পারলে নুরুন্নাহার বেগমের মতো সফলতা অর্জন করবেন।
সিএ/এসএস
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন