শিতাংশু গুহ, ১০ই নভেম্বর ২০২২, নিউইয়র্ক।। এ সময়ে আমেরিকার ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং লন্ডনের মেয়র সাদিক খাঁন ভারতীয় উপমহাদেশীয় বংশোদ্ভুত। এতে আমাদের যথেষ্ট খুশি হবার কারণ থাকলেও বৃটেন, আমেরিকা বা সভ্য দেশগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকাটা দরকার, কারণ তাঁরা আমাদের শুধু যে উন্নত-শান্তিপূর্ণ জীবন দিচ্ছে, তা নয়, ক্ষমতার অংশীদারিত্বও দিচ্ছে, এ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। বৃটেনের রাজা ৩য় চার্লস খৃষ্টান, প্রধানমন্ত্রী সুনাক হিন্দু, লন্ডনের মেয়র সাদিক খাঁন মুসলমান, শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের এক চমৎকার দৃষ্টান্ত, এবং এজন্যেই তাঁরা পুরো বিশ্ব শাসন করতে সক্ষম হয়েছিলো। তবে এটিও সত্য, সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ যথেষ্ট সভ্য না হলে এটি সম্ভব হতোনা।
ঋষি সুনাক-কে নিয়ে পাকিস্তান গর্বিত। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ছিলো ২৯.৭%, এখন ১% এবং এখনো প্রতিনিয়ত অত্যাচার চলছে। সুতরাং একজন হিন্দু ঋষি সুনাক-কে নিয়ে পাকিস্তানের গর্ব করা মানায় না! ঋষি’র জন্ম ইংল্যান্ডে। তাঁর বাবা যশবীর’র জন্ম কেনিয়ায়। মাতা তাঞ্জানিয়ার। পিতামহ রামদাস সুনাকের জন্ম পাকিস্তানের গুজরানওয়ালায় হলেও স্বাধীনতার আগে ১৯৩৫ সালে তিনি কেনিয়ায় চলে যান। সুতরাং সুনাক পাকিস্তানের কেউ না। তিনি যে খুব একটা ভারতীয় বংশোদ্ভুত তাও বা কতটা? আফ্রিকাও বলতে পারে, সুনাক তাদের গর্ব? তবে তিনি গর্বিত হিন্দু, শ্রীগীতা তাঁর পাথেয়, হিন্দু সম্প্রদায় এতে খুশি হতেই পারেন।
সুন্ক-কে নিয়ে উচ্ছাসের কিছু নেই। খোলামেলা হিন্দু হওয়ায় হিন্দুরা খুশি হতে পারেন, কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ঋষি সুনক এখন পর্যন্ত ‘আনপ্রিডিক্টেবল’। তদুপরি, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য পলিসি প্রায় অভিন্ন। ক্ষমতায় থাকার জন্যে পশ্চিম বাংলায় মমতা ব্যানার্জী এবং বাংলাদেশে শেখ হাসিনা মৌলবাদের সাথে আপোষ করে চলেছেন, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক-কেও টিকে থাকতে হলে শ্বেতাঙ্গদের সাথে সমঝোতা করতে হবে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, কমলা হ্যারিস ভাইস-প্রেসিডেন্ট হলেও যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক ভাল, তবে ট্রাম্প যুগের মত ততটা উষ্ণ নয়। ভারত-বৃটেন সম্পর্ক সর্বদাই চমৎকার, সুনক নুতন আর কি করবেন, বা করার আছেই বা কি?
সুনক বলেছেন, ‘আমি খোলাখুলিভাবে হিন্দু’। এ উক্তি হয়তো হিন্দু নেতাদের উৎসাহ যোগাবে, তাঁরা ধর্ম পরিচয় লুকিয়ে ‘উদার’ হতে কম সচেষ্ট হবেন? বাংলাদেশে যেমন উচ্চপদস্থ হিন্দুরা অতিমাত্রায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ সাজতে গিয়ে’ স্বগোত্রীয় নিন্মস্তরের মানুষকে অবজ্ঞা করেন, বা সহায়তা করেন না, ঋষি সুনাক যে তা করবেন না, এর গ্যারান্টি কোথায়? সাদেক খান লন্ডনের মেয়র হলে যেমন পাকিস্তানে মুসলমানের কোন লাভ নেই, তেমনি সুনক বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী হলে ভারতীয় হিন্দুদের কোন লাভ নেই? তবে বিশ্বব্যাপী প্রবাসীরা খুশি হতে পারেন এই ভেবে যে, যোগ্যতা থাকলে তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেকোন পদ অলংকৃত করতে পারেন।
ঋষি সুনকের রাজনৈতিক যাত্রা খুব একটা নিস্কন্টক হবে, তা ভাবার কোন কারণ নেই? প্রথমবার শক্তি পরীক্ষায় লিজ ট্রাসকে সমর্থন করতে গিয়ে বরিস জনসন বলেছিলেন, ‘যেকেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, সুনাক বাদে–। অনেকের দৃষ্টিভঙ্গি তাই। বৃহস্পতি তুঙ্গে থাকায় ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন, কনজারভেটিভ টোরি পার্টির শ্বেতাঙ্গরা তাঁকে সমর্থন দিচ্ছেন নিজেদের টিকে থাকার স্বার্থে, ঐক্যের খাতিরে, আরো দুই বছর ক্ষমতায় থাকার জন্যে। পার্টির গ্রাসরুট পর্যায়ে ভোট হলে সেটি সম্ভব হতো না? যেমন লোকে বলে, প্রাইমারি পর্যায়ে প্রতিদ্ধন্ধিতা করে কমলা হ্যারিস কখনোই ডেমক্রেট মনোনয়ন পাবেন না, তাঁর প্রেসিডেন্ট হবার একমাত্র সুযোগ, যদি বৃদ্ধ বাইডেনের কিছু হয়ে যায়! আমেরিকায় জোকস আছে যে, ভাইস-প্রেসিডেন্টের একমাত্র কাজ প্রতিনিয়ত প্রেসিডেন্টের মৃত্যু কামনা করা!
লীজ সচরাচর স্বল্পকালীন হয়ে থাকে, লিজ ট্রাস তাই মাত্র ৪৪দিন ক্ষমতায় ছিলেন, তিনি এখন সুনাকের বিদেশমন্ত্রী। ঋষি শুনাক বৃটেনের স্বার্থ দেখবে, ভারতের নয়। এটাই সত্য। একজন আযম খান লিখেছেন, ঋষি সুনাক হিন্দু হয়েও ভারতে একপা দিয়ে রাখেনি। এর কারণ রাষ্ট্র ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাঁকে যথোপযুক্ত সন্মান ও মর্যাদা দিয়েছে। বাংলাদেশের হিন্দুরা যদি ভারতে একপা দিয়ে রাখে, এর ব্যর্থতার দায় রাষ্ট্র ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের। ঋষি সুনাক বা সাদিক খাঁন-রা বৃটেনে যে মর্যাদা পায়, বাংলাদেশের হিন্দুরা তা নিজদেশে মোটেই পায় না। তবে ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় কিছু লোক যথেষ্ট দু:খ পেয়েছেন, তাঁরা বলছেন, ভারতের এত লাফালাফি করার কিছু নেই, তাঁরা সোনিয়া গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হতে দেয়নি। এদের বলা যায়, ভিনদেশে জন্ম নেয়া একজন বঁধূকে যথেষ্ট সন্মান দিচ্ছে, দেয়া উচিত, রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব নয়। সজীব ওয়াজেদের মার্কিন এটর্নি স্ত্রী বাংলাদেশের রাজনীতিতে নামলে, এবং সুযোগ এলেও তাঁকে কি আমরা প্রধানমন্ত্রীর পদে বসাবো? মনে হয়না-, সুতরাং ..। #