বিশ্ব

করোনার আঁতুড়ঘর হতে পারে ভারতের গ্রামগুলো

ভারতের একটি গ্রাম। ফাইল ছবি

ডব্লিউএইচওর প্রধান বিজ্ঞানীর সতর্কতা

করোনার আঁতুড়ঘর হতে পারে ভারতের গ্রামগুলো ।। সতর্কতা না মানলে ভারতের গ্রামগুলো করোনার আঁতুড়ঘর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথ। সম্প্রতি বিজনেস টুডেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন।সৌম্যা স্বামীনাথ এর আগে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) প্রধান ছিলেন। তিনি বলেন, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে বাধ্য হওয়া মানুষজনই ভারতের প্রধান চিন্তার বিষয়। কারণ তাদের দ্বারাই এ ভাইরাসের সংক্রমণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। আর এ ভাইরাস যদি একবার গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে তবে তা দেশজুড়ে ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ বিজ্ঞানী করোনা মোকাবেলায় পরীক্ষা ও আইসোলেশনের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, এ ভাইরাস বয়স, লিঙ্গ, সামাজিক অবস্থান বা জাতীয়তা কোনো কিছুকেই সম্মান করে না। লাখ লাখ লোক শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে ফিরেছেন। এর অর্থ হচ্ছে গ্রামীণ এলাকায়ও করোনা পরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের একসঙ্গে এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে।

সৌম্যা স্বামীনাথ বলেন, ভারতের অনেক জায়গায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন। কারণ অনেক দরিদ্র পরিবার একটি কক্ষে গাদাগাদি করে থাকেন, একই টয়লেট ব্যবহার করেন। তারপরও মানুষকে বোঝাতে হবে কেন লকডাউনসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং সরকারকে সহযোগিতা করতে তাদের উৎসাহিত করতে হবে। হাত ধোয়া, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা এবং যেখানে-সেখানে কফ-থুতু না ফেলার মতো সাধারণ বিষয়গুলো বেশি করে বলতে হবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ নানা সমস্যার মুখোমুখি। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের স্বল্পমেয়াদি, মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিতে হবে। এখন দেশে লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে, এবার করোনা পরীক্ষার দিকে মনোযোগ দেয়া দরকার। এরপর সংক্রমিত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে নেয়া এবং তার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা লোকজনকে কোয়ারেন্টিনে নিতে হবে।

সৌম্যা বলেন, লকডাউনের পরেও সরকারকে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব যাতে বজায় থাকে সেদিকে গুরুত্বারোপ করতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের জনসমাগম স্থল বা সভার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে।

ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে ২৪ মার্চ সারা দেশে ৩ সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এরমধ্যে এক সপ্তাহ পার হয়েছে। শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২৫৬৭ জন, সুস্থ হয়েছেন ১৯২ জন।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারতে কোভিড-১৯ এখনও স্টেজ থ্রিতে প্রবেশ করেনি। অর্থাৎ কমিউনিটি টান্সমিশন এখনও হচ্ছে না। ১৩৪ কোটি মানুষের দেশ ভারত। গড়ে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বসবাস করেন ৪৫৫ জন। যেখানে বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে গড়ে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাস করেন ৬০ জন। ঘনবসতির কারণে দেশটিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে কায়িক শ্রমজীবীর সংখ্যা প্রায় ৪০ কোটি। যার মধ্যে প্রায় ১২ কোটি মানুষ কাজ করেন দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে। ফলে দেশটিতে লকডাউন শুরুর পর থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

 

সিবিএনএ/এসএস


সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 − two =