জীবন ও স্বাস্থ্য

কীভাবে এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস

কীভাবে এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস
ছবি : সংগৃহীত

কিন্তু কেন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই করোনাভাইরাস-এর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে।

পৃথিবীতে এখন মানুষের সংখ্যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বিশ্ব জনসংখ্যা বর্তমানে ৭৭০ কোটি। এই সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি একজন মানুষ আরেকজনের খুব কাছাকাছি বসবাস করছে।

অল্প জায়গায় বেশি মানুষ বাস করার অর্থই হলো জীবাণুর সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের অসুখের সৃষ্টি হয়।

ধারণা করা হচ্ছে, চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে মানুষ থেকে মানুষে, তাদের হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে।

মানুষের দেহের বাইরে এই ভাইরাসটি খুব অল্প সময় বেঁচে থাকতে পারে। ফলে ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে হলে তাদের কাছাকাছি থাকতে হবে। তবে বেশকিছু কারণে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

মানুষের ঘনবসতি

সব ভাইরাস কিন্তু মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। এমনকি জিকা ভাইরাসও, যা মানুষের শরীরে আসে মশা থেকে, সেটাও লোকজন ঘনিষ্ঠ বসবাস করলে ছড়াতে পারে।

যেসব এলাকায় মানুষের ঘনবসতি, সেখানে জিকা ভাইরাসবাহী মশা মানুষের রক্ত খেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাদের জন্মের বিস্তার ঘটে আর্দ্র, স্যাঁতসেঁতে ও উষ্ণ পরিবেশে।

২০০৭ সালের পর থেকে শহরাঞ্চলে মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এরকম এলাকা পৃথিবীর মোট জমির মাত্র এক শতাংশ। কিন্তু এতটুকু জায়গাতেই বাস করে ৪০০ কোটিরও বেশি মানুষ।

শুধু তাই নয়, লোকজন এখন এমন শহরের দিকে ছুটে যাচ্ছে যেগুলো এখনো বসবাসের জন্যে প্রস্তুত নয়।

ফলে অনেক মানুষের আশ্রয় হয় বস্তি এলাকায়, যেখানে পরিষ্কার খাবার পানি নেই, পয়-নিষ্কাশন ব্যবস্থাও খুব খারাপ। ফলে এরকম পরিবেশে খুব দ্রুত রোগ ছড়িয়ে পড়ে।

গণপরিবহন

সংক্রামক ভাইরাস শহর থেকে শহরে, দেশ থেকে বিদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে পরিবহনের মাধ্যমে। বিমান, রেল ও গাড়িতে করে এখন ভাইরাস পৃথিবীর অর্ধেক দূরত্বও পাড়ি দিতে পারে।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এটি পাওয়া গেছে কমপক্ষে ১৬টি দেশে। গত বছর বিমানে চলাচল করেছে ৪৫০ কোটি যাত্রী। কিন্তু মাত্র ১০ বছর আগেও তাদের সংখ্যা ছিল ২৪০ কোটি।

বর্তমান সময়ে আমরা যখন এক দিনেই সারা পৃথিবী ঘুরে আসতে পারি, সেখানে তো এই ভাইরাস আরও অনেক দ্রুত গতিতেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।

পশুপাখি  মাংসের চাহিদা

ইবোলা, সার্স এবং এখনকার করোনাভাইরাস-এগুলো সবই জেনেটিক ভাইরাস। এগুলো প্রাণী থেকে ছড়িয়েছে মানব দেহে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে-এই ভাইরাসটি হয়তো সাপ থেকেই এসেছে।

আজকের দিনে যত অসুখ আছে তার চারটির প্রায় তিনটিই হয় জেনেটিক ভাইরাসের কারণে।

সারা বিশ্বেই খাদ্য হিসেবে মাংসের চাহিদা বাড়ছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পশুপাখির চাষও।

ফ্লু ভাইরাস সাধারণত গৃহপালিত পশুপাখি থেকেই মানুষের দেহে ছড়ায়। ফলে মানুষের এখন আক্রান্ত পশুপাখির সংস্পর্শে আসার ঝুঁকিও বেড়ে গেছে।

করোনাভাইরাস মানবদেহে এসেছে বন্যপ্রাণী থেকে। চীনে জনবহুল এলাকাতেও আছে এসব প্রাণীর বাজার। এ থেকেও বোঝা যায় চীনে এই ভাইরাসটি কীভাবে এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো।

তবে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও করোনাভাইরাসের মতো ভাইরাস, যা শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে ছড়ায়, সেগুলো অনেক বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

স্বাস্থ্যসেবা  বিনিয়োগ

দরিদ্র্য এলাকাগুলোতে যেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা খারাপ, সেখানে এটি দ্রুত ছড়াবে। শিক্ষা, সচেতনতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পয়-নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব হলে এই ঝুঁকি আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।

একইসঙ্গে এসব দেশ থেকে স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ লোকেরা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। এ ছাড়াও যেসব রোগের প্রকোপ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে সেসব মোকাবিলায় কেউ তাদের সীমিত সম্পদ ব্যবহার করতে চায় না।

আমরা জানি যে ভাইরাসের প্রকোপ ঘটবে কিন্তু আমরা জানতে পারি না যে কখন ও কোথায় এই প্রকোপ দেখা দেবে। এর ফলে কোথাও সংক্রামক ব্যাধির প্রকোপের খবর আমাদের কাছে সবসময় বিস্ময় হিসেবেই আসে।

তবে সুখবর হচ্ছে, গবেষণায় দেখা গেছে, এখন রোগের প্রকোপ বেশি হলেও এতে অল্প সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ও মারা যাচ্ছে।

যখন দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটছে, যেমনটা আমরা চীনে দেখছি, সাথে সাথে স্বাস্থ্য সেবাও উন্নত হচ্ছে।

কীভাবে সংক্রমণ প্রতিরোধ ও এড়িয়ে চলা যায় তার তথ্যও খুব দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

বর্তমানে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় চীনের মতো একটি দেশ ১ হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল গড়ে তুলতে পারে মাত্র এক সপ্তাহে। অতীতে এটা ছিল কল্পনাতীত বিষয়।

কীভাবে এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস চীনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে ১৭০ জন মারা গেছেন। এই ভাইরাসে প্রাণহানীর পাশাপাশি আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে আরও ১ হাজার ৩২ জন। এর ফলে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭১১ জনে।

আরও পড়ুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ                                 

কানাডার সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 14 =