কুলাউড়ার আমিন উদ্দিন অ্যাটর্নি জেনারেল মৌলভীবাজার জুড়ে উচ্ছ্বাস
জেলাজুড়ে তাকে নিয়ে আলোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও তাকে নিয়ে সরব। তার এমন অর্জনে উৎফুল্ল মৌলভীবাজার জেলাবাসী অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি এই গুরুদায়িত্ব পালনে তার সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করেছেন। ভাটি বাংলার সন্তান দেশের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী হাকালুকি হাওর পাড়ে শৈশব ও কৈশোর পার করা আমিন উদ্দিন এখন দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ভূকশিমইল ইউনিয়নের বাদেভূকশিমইল গ্রামে জন্ম নেয়া আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন (এএম আমিন উদ্দিন) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল। গত বৃহস্পতিবার তাকে ১৬তম অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি জানিয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ খবর চাউর হলে নিজ জন্মস্থানসহ পুরো জেলার বাসিন্দারা আনন্দিত এবং তাকে অভিনন্দন জানান। নতুন নিয়োগ পাওয়া মৌলভীবাজার জেলার কৃতীসন্তান এডভোকেট আবু মোহাম্মাদ আমিন উদ্দিন আইন-অঙ্গনে এএম আমিন উদ্দিন নামেই বেশি পরিচিত।
আমিন উদ্দিনের বর্ণাঢ্য জীবন:
এডভোকেট আমিন উদ্দিন ১৯৬০ সালে বৃহত্তর সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ‘বাদে ভূকশিমইল’ গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা এমএ গণি ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার। সজ্জন ও পরোপকারী ব্যক্তি হিসেবে তিনি সর্বমহলে অত্যন্ত পরিচিত ছিলেন। এডভোকেট আমিন উদ্দিনের মা মরিয়ম বেগম ছিলেন পুরোদস্তুর একজন গৃহিণী ও শিক্ষানুরাগী।
কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের (নানাবাড়ি) গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। পরে তিনি পিতার কর্মস্থল ঢাকার ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে ১৯৭৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হোন। পরে ‘ঢাকা কলেজ’ থেকে গ্র্যাজুয়েশন এবং ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ল কলেজ’ থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এর পরপরই তিনি নিজেকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত করেন। ১৯৮৭ সালের সেপ্টেম্বরে আইনজীবী সনদ পান আমিন উদ্দিন। এরপর ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন। ১৯৮৯ সালে হাইকোর্টের সনদ নেন আমিন উদ্দিন। পরের বছর হাইকোর্ট বারের সদস্য হওয়ার পর থেকে আইনি পেশায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। পেশার প্রতি প্রচণ্ড আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার ফলে ক্রমান্বয়ে তার সফলতা আসতে থাকে। আদালতপাড়ায় তার সততায় মুগ্ধ হয়ে বিচারপতি ও আইনজীবীসহ সবার কাছে তিনি অত্যন্ত প্রিয় হয়ে ওঠেন। প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে গ্রহণ করেন সিনিয়র আইনজীবীর সম্মানসূচক খেতাব।
১৯৯৬ সালে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ‘ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল’ নিযুক্ত হোন। ২০০৬-০৭ মেয়াদে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিল নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৯-২০ মেয়াদে তিনি সর্বপ্রথম সিলেটি আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের সভাপতি নির্বাচিত হোন। ২০২০-২১ মেয়াদেও সৎ, পরিচ্ছন্ন কর্মতৎপর ও আদালতপাড়ায় সার্বিক উন্নয়নে আস্থার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত আমিন উদ্দিন আবারো সভাপতি নির্বাচিত হন। সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের সভাপতি এডভোকেট আমিন উদ্দিনের স্ত্রী ‘আফসারী আমিন শিবলী’ একজন শিক্ষানুরাগী ও সমাজকর্মী। রায়হান আমিন ও নাহিয়ান আমিন নামে তাদের দুই পুত্রসন্তান রয়েছে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। আমিন উদ্দিনের মামাত ভাই মো. শাহীন আহমদ ও মো. আব্দুল আহাদ, ভাতিজা অধ্যাপক মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করে এএম আমিন উদ্দিনের যুগান্তকারী নিয়োগে প্রধানমন্ত্রী ও আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং দায়িত্ব পালনে তারা দেশবাসীর কাছে দোয়া চান।
বিভিন্ন মহলের অভিনন্দন:
কুলাউড়ার কৃতীসন্তান এএম আমিন উদ্দিন বাংলাদেশ সরকারে অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হওয়ায় নিজ এলাকার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অভিনন্দন জানাচ্ছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলকে স্বাগত জানিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন বন ও পরিবেশমন্ত্রী মো. সাহাব উদ্দিন আহমদ এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ এমপি, সাবেক চিফ হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আব্দুস শহিদ এমপি, মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদ এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাবেক বৃটিশ কাউন্সিলর ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এমএ রহিম (সিআইপি), সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান, কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ একেএম সফি আহমদ সলমান প্রমুখ।
বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার পাইয়ে দিতে সচেষ্ট থাকবো
নবনিযুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেছেন, বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার পাইয়ে দিতে সচেষ্ট থাকবো। বিচারপ্রার্থীর যে কেউ যেকোনো সময় আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এছাড়া, দেশের দীর্ঘমেয়াদি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রয়াত মাহবুবে আলমের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন তিনি। গতকাল এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
এএম আমিন উদ্দিন বলেন, আমাকে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রতিক্রিয়া জানানোর মতো কিছু নেই। তবে সরকার যে আমার ওপর আস্থা রেখেছেন, আমি চেষ্টা করবো তার উত্তম প্রতিদান দেয়ার। প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম স্যার যেভাবে কাজ করে গেছেন, সে আলোকে তার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার চেষ্টা করবো। এজন্য আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সুপ্রিম কোর্ট বার ও অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব দুটোই পালন করে যাবেন।
নবনিযুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংবাদ মাধ্যম পাশে থাকলে কাজ সহজ হয়ে যায়। সাংবাদিকদের মাধ্যমে যে খবরগুলো পাবো, সে খবরগুলো যাচাই করে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে পারবো। তবে খেয়াল রাখতে হবে সংবাদগুলো যেনো সত্যি হয়। অনেক সময় অনেক উড়ো খবর আসে। কোনো খবরে যেনো মানুষ হয়রানির শিকার না হন। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে কোনো নির্দোষ ব্যক্তি যেনো হররানির শিকার না হন, আবার কোনো দোষী ব্যক্তিও যেনো পার না পেয়ে যায়। তিনি সাংবাদিকদেরকে অনিয়ম দুর্নীতির খবর পেলে তাকে জানানোর আহ্বান জানান।
-মানবজমিন থেকে
সিএ/এসএস
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন