দেশের সংবাদ ফিচার্ড

কুলি থেকে যেভাবে অঢেল সম্পদের মালিক আবেদ আলী

সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী

কুলি থেকে যেভাবে অঢেল সম্পদের মালিক আবেদ আলী

ঢাকায় প্রথমে কুলির কাজ দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু। এরপর রিকশা চালিয়েছেন, হোটেলে কাজ করেছেন, চাল বিক্রি করেছেন। জড়িয়েছেন আরো বিভিন্ন পেশায়। পরে ড্রাইভিং শিখে সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) চাকরি নেন ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়া সৈয়দ আবেদ আলী।

এক পর্যায়ে সরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের চক্রে জড়িয়ে রাতারাতি বিপুল ধন-সম্পদ ও নগদ অর্থের মালিক বনে যান। সম্প্রতি অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অভিযানে গ্রেপ্তার হয়ে এখন তিনি আলোচনায়।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তদন্ত এবং সাংবাদিকদের সরেজমিন অনুসন্ধানে সৈয়দ আবেদ আলীর সম্পদের চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসছে।

আবেদ আলী গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, অবৈধভাবে অর্জিত অন্তত ৫০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনেছেন তিনি।

এর মধ্যে ঢাকায় তাঁর একটি ছয়তলা বাড়ি, তিনটি ফ্ল্যাট ও একটি গাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামে নিজ বাড়িতে রয়েছে আলিশান ডুপ্লেক্স ভবন ও বহু জমিজমা।

সিআইডির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবেদ আলী এসব সম্পদের তথ্য জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে সিআইডির ধারণা, আবেদ আলীর আরো বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে।

এসব ছাড়াও পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় আছে তাঁর সান মেরিন হোটেল।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ওয়াসা রোডে গিয়ে জানা যায়, বিসমিল্লাহ টাওয়ার নামের একটি ৯ তলা ভবনে পরিবার নিয়ে থাকেন আবেদ আলী। ওই বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী সোহেল খান জানান, আবেদ আলী পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাটে দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে থাকেন। তবে ওই নিরাপত্তাকর্মীর মাধ্যমে আবেদ আলীর বাসায় ইন্টারকমে যোগাযোগ করা হলে কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলবেন না বলে জানানো হয়।

ওই এলাকার বাসিন্দাদের ভাষ্য, ভবনটিতে আবেদ আলীর পাঁচটি ফ্ল্যাট ছিল।

কয়েক মাস আগে দুটি ফ্ল্যাট তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন রয়েছে তিনটি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আবেদ আলী শেওড়াপাড়ার ভবনটির পঞ্চম তলায় দুটি ও চতুর্থ তলায় একটি ফ্ল্যাটের মালিক বলে স্বীকার করেছেন। পাইকপাড়ায় তাঁর একটি ছয়তলা বাড়ি রয়েছে। ব্যাংকে রয়েছে বিপুল অঙ্কের টাকা।

উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে প্রচার

এলাকাবাসীর তথ্য মতে, আবেদ আলী দুই বছর আগে থেকে ডাসারে তাঁর নিজ এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন। তিনি নতুন উপজেলা ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন। এই নির্বাচনের তফসিল এখনো হয়নি। তবে তিনি প্রার্থী হতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালাচ্ছেন। এলাকায় তিনি মাসে দু-তিনবার যান, দামি গাড়িতে চড়ে করেন গণসংযোগ। এদিকে গ্রেপ্তারের পর গত সোমবার আবেদ আলীর ছেলে সোহানুর রহমানকে ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা এসে আবেদ আলী নানা পেশায় কাজ করার পর ড্রাইভিং শিখে পিএসসির চেয়ারম্যানের চালক হিসেবে চাকরি নিয়ে রাতারাতি কোটিপতি বনে যান। তাঁর বড় ভাই জবেদ আলী একজন কৃষক। আবেদ আলী মেজো। ছোট ভাই সাবেদ আলী দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন।

ভাই-বোনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই

পিএসসিতে চাকরি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে বিয়ে করেন আবেদ আলী। এরপর তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। বর্তমানে আবেদ আলীর কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি ও গাড়িসহ বহুজাতিক কম্পানি থাকলেও তাঁর আপন দুই ভাই থাকেন টিনের ভাঙা ঘরে। গতকাল ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।

বিয়ের পরে আবেদ আলীর সঙ্গে তাঁর দুই ভাই এবং বোন মোহরজানের সঙ্গে পারিবারিক বিষয় নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় সম্পর্ক ছিন্ন করেন। প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা যায়। তবে তাঁরা নাম প্রকাশ করেননি।

স্থানীয় সূত্র বলছে, আবেদ আলী নিজ গ্রামে প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়ির পাশে করেছেন মসজিদ। তিনি মাদারীপুরে গরুর খামার ও বিপণিকেন্দ্র নির্মাণ করছেন, যার একাংশ সরকারি জমিতে বলে অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গ্রামের কয়েকজন বলেন, আবেদ আলী গ্রামে বহু ফসলি জমি কিনেছেন। নিজের নামে, স্ত্রী-সন্তান ও শ্বশুর-শাশুড়ির নামেও কিনেছেন জমি, যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।

প্রতিবেশী আব্দুর রহিম মাতুব্বর বলেন, ‘আবেদ আলী এত সম্পদের মালিক জেনে অনেকে অবাক হচ্ছেন। গাড়িচালক থেকে কিভাবে এসব সম্ভব? বর্তমানে তিনি গাড়ির ব্যবসা, হাউজিং ব্যবসা, জমির ব্যবসাসহ নানা ধরনের ব্যবসা করছেন বলে জানতে পেরেছি।’

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাদারীপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ দিলে আমরা প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই ব্যক্তির বিষয়ে অনুসন্ধান করব।’

-সূক্র: কালের কন্ঠ


এসএস/সিএ
সংবাদটি শেয়ার করুন