দেশের সংবাদ

কেমন আছেন লঞ্চডুবির ১৩ ঘণ্টায় উদ্ধার হওয়া সেই সুমন বেপারী

সুমন বেপারী
ঢাকা মেডিকেল এ চিকিৎসারত থাকা অবস্থায় সুমন বেপারী

দ্রুত সুস্থ হয়ে আবরও সদরঘাটে ফল ব্যবসায় ফিরতে চান রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীতে যাত্রীবাহী মর্নিং বার্ড লঞ্চডুবির প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর উদ্ধার হওয়া সুমন বেপারী । তিনি এখনও মানসিক এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

শুক্রবার (১৭ জুলাই) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুমন বেপারীকে একমাস পুরোপুরি বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। ফলে বর্তমানে তিনি মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আব্দুল্লাহপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। সুমন বেপারী মোবাইলে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করায় কথা হয় তার ভাই শাহীন বেপারীর সঙ্গে।

তিনি বলেন, সুমন এখনও মানসিকভাবে অসুস্থ। কারও সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলতে পারে না। আগের মতো চঞ্চলতা নেই তার মাঝে। বেশিরভার সময়ে চুপচাপ থাকে সে।

শাহীন বেপারী বলেন, সুমনকে এক মাস বেড রেস্টে থাকতে বলেছেন চিকিৎসক। এরপর আবারও চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে সার্বিক বিষয়ে পরামর্শ নেয়ার কথা রয়েছে।

সুমন বেপারীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে অনেকটা উদ্বিগ্ন ভাই শাহীন বেপারী। তিনি বলেন, বর্তমানে তার শরীরের নানা স্থানে চামড়ায় ক্ষত দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে চামড়া শুকিয়ে উঠে উঠে যাচ্ছে। এছাড়া তার কানেও সমস্যা হয়েছে। আগের মতো শুনতে পায় না। মাথার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে যন্ত্রণা করে। শরীর দুর্বল থাকে।

তবে খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে আবারও সদরঘাটে ফলের ব্যবসায় ফিরবেন বলে প্রত্যাশা সুমন বেপারীর পরিবারের।
গত ২৯ জুন লঞ্চডুবির প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর রাত ১০টার দিকে সুমন বেপারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। পরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পরদিন ৩০ জুন রাতে সুমকে নেয়া হয় মুন্সিগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে।

সুমন বেপারীর ভাতিজা আরাফাত রায়হান সাকিব বলেন, সেদিন রাতে চাচাকে বাড়িতে আনার পর থেকেই বাড়িতে মানুষের ভিড় লেগে ছিল। মানুষের ভিড়ে হাজারো প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে চাচা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পরদিন (১ জুন) বিকেল থেকে কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল তার।

পরে বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) আবারও সুমন বেপারীকে ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে পরদিন চিকিৎসকের পরামর্শে মুন্সিগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে নেয়া হয় তাকে। এরপর থেকে গ্রামের বাড়িতেই আছেন সুমন বেপারী।

ঘটনার পর থেকে সুমন বেপারীর সার্বিক খোঁজ রাখছিলেন সদরঘাট নৌ থানা পুলিশের এসআই শহিদুল ইসলাম। তিনি সময় সংবাদকে বলেন, বর্তমানে সুমন অনেকটা সুস্থ। তিনি এখন মুন্সিগঞ্জে তার গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন। আমরাও প্রতিনিয়তই তার বিষয়ে খোঁজখবর রাখছি।

মুন্সিগঞ্জের টংগীবাড়ি উপজেলার আব্দুল্লাহপুর গ্রামে ফজল বেপারীর আট ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলেরা হলেন—আব্দুল হাই বেপারী, কাইয়ুম বেপারী, সেলিম বেপারী, চাঁন মিয়া বেপারী, শাহীন বেপারী, শাহজাহান বেপারী, হুমায়ুন বেপারী ও সুমন বেপারী। মেয়ের নাম পারুল আক্তার। ছেলেদের মধ্যে আব্দুল হাই বেপারী আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়র্ডের নির্বাচিত মেম্বার। সেলিম, শাহীন ও সুমন বেপারী প্রবাসে ছিলেন। বর্তমানে ব্যবসা করেন। চাঁন মিয়া ফলের ব্যবসা করেন, সুমন বেপারীও সদরঘাটে ফলের ব্যবসা করেন, শাহজাহান জায়গা জমি বিক্রির দালালি করেন।

গত ২৯ জুন (সোমবার) সকাল পৌনে ৮টার দিকে মুন্সিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসে মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ। সদরঘাটের কাছাকাছি এলে ময়ূর-২ নামের একটি লঞ্চ মর্নিং বার্ডের ওপরে উঠে যায়। এতে মাত্র ৩০ সেকেন্ডে লঞ্চটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় ৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। লঞ্চটি টেনে তীরে নেয়া হয়। ফল ব্যবসায়ী সুমন বেপারী অলৌকিকভাবে ঘটনার ১৩ ঘণ্টা পর মর্নিং বার্ড লঞ্চটি উদ্ধারের সময় ভেসে ওঠেন। এ ঘটনায় ময়ূর লঞ্চের মালিকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়েছে। তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া মামলার বিচার প্রক্রিয়াধীন।

বাঅ/এফএইচ


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন