লেখালেখি

কোভিড চিকিৎসায় ভ্রান্ত বিশ্বাস

কোভিড-১৯ পেন্ডেমিক এবং বাংলাদেশ দেশে সবচেয়ে বেশি

SARS CoV-2 নামক করোনা ভাইরাসটি বিশ্বায়নের সুযোগে কোভিড-১৯ নামক রোগটিকে বৈশ্বিক মহামারির এক ভীতিকর ধাপে পৌঁছে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী  কর্মজীবিরা মুলত গৃহবন্দি। উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তা আর মানসিক চাপের মাঝে গৃহবন্দিদের ব্যস্ততা বেড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এর প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুকের টাইমলাইন, ইনবক্স কোভিড-১৯ এর তথাকথিত চিকিৎসার ভ্রান্ত ব্যবস্থাপত্রে সয়লাব। অনুরোধ  উপেক্ষা করে ইনবক্সে প্রচারণা চলছেই।  মানব সভ্যতার সংকটময় মুহূর্তে চিত্ত দুর্বল থাকে বিধায় আমরা একথা ওকথা বিশ্বাস  করি,  গুজবে কান দেই, গুজব ছড়াই। এই মানসিকতা আমাদের কোন উপকারে লাগে না বরং পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলে। 

এই করোনা ভাইরাসটি সংক্রমণে অতিমাত্রায় আগ্রাসী, ক্ষতি করার চাইতে ছড়িয়ে যাওয়াতেই ওর  দুর্দান্ত সক্ষমতা। ফলে বিজ্ঞানীদের বোঝার আগেই, প্রতিষেধক বের হবার আগেই  সর্বগ্রাসী বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নিয়েছে। কভিড-১৯ নিয়ে বিভ্রান্তিকর ব্যবস্থাপত্র চালাচালি অবিবেচনাপ্রসূত,  তাই  এই বিষয়ে আলোকপাত করতে চাচ্ছি।

 

১। আদা, রসুন, হলুদ, কালিজিরা, ধইন্যা, চা, মধু  ইত্যাদি রান্নাবান্নায় নিত্যদিনের সাথী, এরা সবাই অসংখ্য ফাংশনাল বায়োমলিকুল সমৃদ্ধ।  ইন্টারনেটে একটু  সার্চ দিলে হাজার হাজার বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ পাবেন এদের গুনাগুন নিয়ে, বিভিন্ন অসুখ বিসুখে এদের কার্যকারিতা নিয়ে। জাপানীরা ফাংশনাল বায়োমলিকুল/মাইনো এসিড/পেপটাইড গবেষণায় বিশ্বে নেতৃস্থানীয়। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপও অনেক এগিয়ে  এসব গবেষণায়। ওষুধ আর  খাবারের মাঝামাঝি আরেকটি শ্রেনী আছে যাদের বলা হয় নিউট্রাসিউটিক্যাল বা বায়োসিউটিক্যাল, এরা স্বাস্থ্য সুরক্ষাকারী এবং মেডিসিন গুন সমৃদ্ধ। উপরে উল্ল্যেখিত খাদ্যদ্রব্যগুলো থেকে আহরিত ফাংশনাল বায়োমলিকুলগুলো নিউট্রাসিউটিক্যাল বা বায়োসিউটিক্যাল শ্রেনীর অন্তর্গত।  আমরা  এদের ব্যবহার করে যে উপকার পাই, সে উপকারের মেকানিজমগুলো শত শত বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার গবেষকদের চেষ্টায় অনেকটাই উন্মোচিত, নতুন তথ্য উপাত্ত অব্যাহত গবেষণায় অনাগত। আমাদের এই খাদ্য উপকরণগুলোকে  আমাদের  দৈনন্দিন  স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থাপনায় ভুমিকা রেখে যাচ্ছে, এদেরকে কোভিড-১৯  এর মেডিসিন বানিয়ে দেবার কোন প্রয়োজন নেই।

কোভিড চিকিৎসায় ভ্রান্ত বিশ্বাস শোয়েব ভাই

 

২।  এই মুহূর্তে কোভিড-১৯ এর  সবচেয়ে বড়  কার্যকরী মেডিসিন হচ্ছে করোনা বিষয়ে সরকারি আর WHO এর নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা। শারিরিক দূরত্ব/সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা, গাড়ী/বাড়ীর দরজার হাতল ইত্যাদি স্পর্শ করার পর কোন অবস্থাতেই  নাক,মুখ,চোখ হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাবেনা। অতিসত্বর সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়ার ব্যাপারে কোন ভুল করা যাবে না।

৩। মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ আর সক্ষমতা তাঁর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।  ফলমূল, শাকসবজি পর্যাপ্ত ঘুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অটুট রাখে। মানুষের বড়  শত্রু ফ্রি র‍্যাডিক্যাল। ইলেকট্রন থাকবে জোড় হিসেবে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেসে বেজোড় হলেই জোড় হবার জন্যে এটি  আমাদের দেহের কোটি কোটি সেলের প্রতিটিতে দিনে প্রায় ১০ হাজার বার  আক্রমণ করে; একটি বেকায়দা আক্রমণে মিউটেশন ঘটে ক্যান্সারের সূত্রপাতও হতে পারে। কিন্তু আমাদের শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় শরীরের শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট নেটওয়ার্ক ফ্রি র‍্যাডিক্যালের এই আক্রমণ থেকে  আমাদের ক্রমাগত সুরক্ষা  দিয়ে যাচ্ছে। অতএব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অটুট থাকলে করোনা আপনাকে কাবু করতে পারবেনা। অসুখ বিসুখে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে করোনার  ক্ষতি করার ঝুঁকিটা বেশী।  খুব অল্প সংখ্যক ক্ষেত্রে ফুস্ফুস আক্রান্ত হয়, সিরিয়াস ক্ষেত্রে ভেন্টিলেটরটা জরুরী এবং হাসপাতালে যেতেই হবে।

৪। ভাইরাসে আক্রমনের আগেই ভ্যাকসিন নিতে হয় আক্রমণ ঠেকাতে। তবে আক্রমণের পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই মূল ভরসা। বাড়ীর মুরব্বীদের আর অসুস্থদের ক্ষেত্রে  কঠোর সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

৫। কোভিড-১৯ থেকে বাঁচার আশাটা সরকারি আর WHO এর নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার শর্তের বাইরে বিজ্ঞানীদের ভ্যাকসিন এবং এন্টিভাইরাল ড্রাগ আবিস্কার আর বাজারজাতকরণের সাফল্যের উপর নির্ভর করছে।

৬। চায়ের কিছু মলিকুলের কোভিডের উপর কার্যকারিতা বিষয়ে  চীন থেকে ছড়ানো “ভুলে ভরা তথ্য” নাকচ করতে কানাডা ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনকে আলাদা প্রোগ্রাম করতে হয়েছে। অতএব, এসব  গসিপিং এর পেছনে না ছুটে, সরকারি আর WHO এর নির্দেশনায় নিজেকে সুরক্ষা দিন; নিজে বাঁচুন, অন্যদের বাচান।

 

ডঃ  শোয়েব সাঈদ ।। মন্ট্রিয়লের বায়োটিক বিষয়ক বহুজাতিক কর্পোরেট গবেষণা পরিচালক হিসেবে কর্মরত, সাবেক বাকসু’র সাবেক সাহিত্য সম্পাদক এবং সিবিএনএ২৪ডটকমের উপদেষ্টা।

সি/এসএস

 


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন


 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × three =