কানাডার সংবাদ

কোভিড-১৯ যুদ্ধে কানাডা

কোভিড-১৯ যুদ্ধে কানাডা

 

দার্শনিক প্লেটোর রিপাবলিকে বর্ণিত খ্রিষ্টপূর্ব পৌনে চারশত বছর আগের গ্রীক সভ্যতায় নগর রাষ্ট্রের উৎপত্তি, নগর রাষ্ট্রের চরিত্র, জনগণের ভূমিকা ইত্যাদি থেকে বাইশ শত বছরের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় সাম্রাজ্য, সম্রাট আর সামন্তবাদের ইতিহাস বেঁয়ে আব্রাহাম লিঙ্কনের ১৮৬৩ সালের গেটিসবার্গ এড্রেসে জনগণের সরকার/জনগণের দ্বারা/জনগণের জন্যে, এমন কি  বিশ্ব সমাজ থেকে স্বেচ্ছা আইসোলেশনে থাকা জাপানিদের উপলব্ধিতে কল্যাণমূলক সরকার/রাষ্ট্রের তৃষা থেকে উৎসরিত ১৮০০ সালের শেষ দিকে মেইজি রেস্টোরেশন মানব সভ্যতায় রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের ভূমিকা আর কল্যাণ নিশ্চিতকরণের অন্যতম মাইলস্টোন। বিগত দেড়শত বছর রাজতন্ত্র, পুজিবাদ, কম্যুনিজম, আর সামরিক শাসনের হরেকরকম টানাপোড়েনের মাঝেও গণতন্ত্র আলো ছড়িয়েছে জনগণের অংশগ্রহণমূলক  সরকার/রাষ্ট্র ব্যবস্থায়। বৈশ্বিক ঘটনা প্রবাহে প্রত্যেক রাষ্ট্রের জন্যে কিছু সময় আসে কঠিন পরীক্ষামূলক,  যা মূলত জনগণের অংশগ্রহণে জনগণের সেবা, সুরক্ষা আর কল্যাণে সরকারে দক্ষতা আর আন্তরিকতার অগ্নি-পরীক্ষা। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি, মহামারি, দুর্ভিক্ষ সরকারের জন্যে রাষ্ট্র পরিচালনার চ্যালেঞ্জিং সময়। কোভিড-১৯ নামক ব্যাধিটি  ২০২০ সালের বিশ্ব ব্যবস্থায় রাষ্ট্র, সরকার আর অর্থনীতির জন্যে কঠিন এক পরীক্ষা বটে। কোভিড-১৯ এখন বৈশ্বিক মহামারির এক ভীতিকর ধাপে। এই ভয়াবহতার মূল কারণ SARS CoV-2 নামক করোনা ভাইরাসটির বিশ্বায়ন।

করোনার ভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে সংগ্রামে কানাডা সরকারের আন্তরিকতা, জনগণের সরকারের যে প্রতিচ্ছবি আব্রাহাম লিঙ্কন এঁকেছিলেন, মনে হচ্ছে যেন তারই একবিংশ শতাব্দীর সংস্করণ। সরকারের ভূমিকা, জনগণের দায়িত্বশীলতা শুধু মাত্র মিথোজীবীতা (symbiosis)  অর্থাৎ পারস্পরিক  স্বার্থসংশ্লিষ্ট  সহযোগিতায় নয়, বরং সিনার্জি (Synergy) অর্থাৎ যোগফলের চাইতে অধিকতর অর্জনে উভয়েই উপকৃত।

কোভিড-১৯ অনেকটা ক্যারিবিয়ান আর মেক্সিকো সাগরের হ্যারিকেনের মত। একের পর এক দেশ তছনছ  করে অবশেষে আঘাত করে যুক্তরাষ্ট্রে। চীনের উহান প্রদেশ থেকে কোভিড-১৯ ইরান, ইতালী, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ছুঁয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রে, চরম আঘাত হেনেছে বিশ্ব রাজধানী  নিউ ইয়র্কে।

বিশ্বের ২য় বৃহত্তম দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী কানাডায়ও ছোবল মেরেছে  কোভিড-১৯। কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হচ্ছে কুবেক প্রদেশের মন্ট্রিয়ল নগরী এবং এটি কানাডাতে কোভিড-১৯ এর সবচেয়ে বড় ভিকটিম এখন। মন্ট্রিয়লার কানেডিয়ান হিসেবে এই কঠিন পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক আর  কানাডার করোনা  আপডেট  সম্পর্কে আমার পর্যবেক্ষণে কানাডা সরকারের ভূমিকা আর জনগণের দায়িত্বশীলতা মন ছুঁয়ে যাবার মত। কানাডাতে করোনার অভিষেক জানুয়ারীর শেষ সপ্তাহে। ফেব্রুয়ারি জুড়ে অনেকটাই আতুরঘরের প্রাথমিক অবস্থা, ফেব্রুয়ারি শেষের দিকে দুশ্চিন্তার বলি রেখা আর মার্চের প্রথম দিকে ইরান আর ইতালীর মহামারি সংকটের ধারাবাহিকতায়  কানাডা সরকারের নড়েচড়ে বসা। কানাডার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মার্চের প্রথম দিকে মার্চ ব্রেক বলে পরিচিত এক সপ্তাহের বন্ধ থাকে। এই ব্রেকের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে  দ্রুতই  আবার বন্ধ করা হয়।  এই খুলে দেবার বিষয়ে সরকারের  অদূরদর্শিতার সমালোচনা রয়েছে সামাজিক দূরত্বের একশনে বিলম্ব করার জন্যে। এই করোনা ভাইরাসটি সংক্রমণে অতিমাত্রায় আগ্রাসী, ক্ষতি করার চাইতে ছড়িয়ে যাওয়াতেই ওর দুর্দান্ত সক্ষমতা। ফলে বিজ্ঞানীদের প্রতিষেধক বের করার সুযোগের আগেই সর্বগ্রাসী বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নিয়েছে। একশনের সঠিক সময়টির পিনপয়েন্ট করার সময় পায়নি অনেক দেশই।  ভাইরাসটির  এক্সপোনেনশিয়াল  ফেজের  দ্রুত গতির সাথে তাল মেলাতে পারেনি ইরান, ইতালী, স্পেন, যুক্তরাজ্য সহ অনেক দেশই। সময় পেয়ে এক্সপোনেনশিয়াল  ফেজের  কার্ভ  নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগ ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে। কিছু বিক্ষিপ্ত সমালোচনা ছাড়া কানাডা সরকারের  কোভিড-১৯  ব্যবস্থাপনা  বৈশ্বিক রোল মডেল হিসেবে সমাদৃত।  সপ্তাহ  দুয়েক আগে প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী  সোফি গ্রেগরি ট্রুডু’র করোনায়  আক্রান্ত হবার পর থেকে জাস্টিন  ট্রুডু আইসোলেশন থেকেই জাতিকে ব্রিফ করছেন। সোফি করোনা থেকে সুস্থ হবার পরও  প্রধানমন্ত্রী  বাসা থেকে অফিস করছেন সরকারি পরামর্শ মেনে।

বিশ্বব্যাপী  কর্মজীবিরা মুলত গৃহবন্দি; উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তা আর মানসিক চাপের সাথে বসবাস। আমাদের জেনারেশনের জন্যে এক অভূতপূর্ব  গ্লোবাল অভিজ্ঞতা।  গত দুই সপ্তাহ যাবৎ বাসা থেকে আমাকে অফিস করতে হচ্ছে। বিগত কয়েক সপ্তাহ যাবত কানাডার প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন জাতির উদ্দেশ্যে কথা বলছেন। প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকি সকাল ১১টার  দিকে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন  ট্রুডু’র জাতির উদ্দেশ্যে বক্তৃতার জন্যে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে কানাডার জনগণের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপ, নির্দেশনা  এবং সরকারের সাথে জনগণের এই যোগাযোগ সাহস যোগায়, ভরসা বাড়ায়। কানাডা সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, সরকারের প্রতি মানুষের আস্থার নান্দনিক প্রতিদান, দায়বদ্ধতা আর একটি সভ্য জাতির সভ্যতার কিছু দৃষ্টিনন্দ বিষয়ে অবহিত হওয়াটা মন্দ তো নয়, তাই কিছু বিষয়ের অবতারণা।

কোভিড চিকিৎসায় ভ্রান্ত বিশ্বাস শোয়েব ভাই

 

১। প্রতিদিনই প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার পর সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন। সুপ্রশিক্ষিত, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সাংবাদিকদের প্রশ্ন থাকে বিষয়ভিত্তিক, জনগুরুত্বপূর্ণ; এমনকি প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীর কোভিড-১৯ বিষয়েও অহেতুক আগ্রহ দেখা যায় না। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছুক্ষণ পর উপপ্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড, অর্থমন্ত্রী বিল মনরো, জননিরাপত্তা মন্ত্রী  বিল ব্লেয়ার, স্বাস্থ্যমন্ত্রী  প্যাটি হাজদু, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডঃ থেরেসা  ত্যাম,  উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডঃ হাওয়াড জু  এক সঙ্গে বা ছোট গ্রুপে  সাংবাদিকদের সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত বলেন। দুপুর একটায় প্রাদেশিক সরকারের বক্তব্য থাকে। কুবেকের প্রিমিয়ার বা মুখ্যমন্ত্রী ফ্রাসোয়া লাগো তাঁর স্বাস্থ্যমন্ত্রী, শ্রমমন্ত্রী, প্রদেশের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সহ সাংবাদিক আর জনগণের সামনে এসে হাজির  হন। তারপর মেট্রোপলিটন পর্যায়ে সিটি মেয়র যেমন মন্ট্রিয়লের ক্ষেত্রে মেয়র ভেলোরি  আসেন জনগণের সামনে, তুলে ধরেন উনার কর্মপন্থা। ফেডারেল সরকার থেকে প্রাদেশিক সরকার এবং স্থানীয়   সরকারের সপ্তাহের পর  সপ্তাহ  ধরে রেজিমেন্টেড  কায়দায় জনগনের সামনে সত্য-ভাষণে আর  সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপে যে আস্থার জায়গাটি তৈরি হয়েছে, তাতে সফলতা,ব্যর্থতা নির্বিশেষে জনগণ  আর সরকার একে অপরের সহযাত্রী।

২। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফেডারেল সরকার প্রথমদিকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার আর ব্যবসার জন্যে ২৭ বিলিয়ন ডলারের সরাসরি সাহায্য প্যাকেজ ঘোষণা করেন। এটি এখন ৫৫ বিলিয়ন ডলারের বৃদ্ধি করা হয়েছে। অর্থনীতির সার্বিক সুরক্ষায় মোট প্যাকেজ ১০৭ বিলিয়ন ডলার। প্রয়োজনে এটি বাড়বে  বলে অর্থমন্ত্রীর আশ্বাস। এয়ার কানাডার মত ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ ক্যারিয়ার সহ অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখতে সরকার  নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।

৩। সরকার ঘরে ঘরে টাকা পৌঁছে দেবে, খাবার পৌঁছে দেবে বিষয়টি  আমাদের কল্পনায় এরকম মনে  হলেও বাস্তবে এটি পদ্ধতিগত।  কানাডা ওয়েলফেয়ার দেশ অর্থাৎ বেশী আয় যাদের, তাঁদের কাছ থেকে যেমন আয় বিন্যাসে ৫০%ই ট্যাক্স কেটে নেন, তেমনি যাদের আয় নেই বা অল্প আয় যাদের, তাঁরা সরকারের কাছ থেকে সংসার চালানোর জন্যে সাহায্য পান। স্বল্প আয়ের জনগণ বাচ্চাদের জন্যে ১৮ বছর হওয়া পর্যন্ত  সরকারের কাছ থেকে ভাল এমাউন্টের  চাইল্ড বেনেফিটও পান।  দুই সন্তানের একটি আয়হীন পরিবার  কুবেকে থাকলে ফেডারেল, প্রাদেশিক মিলিয়ে মাসে আড়াই হাজার ডলারের মত  মোট সহায়তা পায়।  করোনা পরিস্থিতিতে চাইল্ড বেনেফিট বেড়েছে। এই সাহায্য বেতনের মত সরাসরি একাউন্টে যায় বা চেক আসে, এখানে রাজনীতিবিদ বা সরকারী কর্মকর্তাদের মাতব্বরী বা অনুকম্পার বা লোক দেখানোর কোন সুযোগ নেই। ওয়েলফেয়ার সিস্টেমের বাইরে উদ্ভূত  করোনা পরিস্থিতিতে করোনার কারণে চাকুরী হারালে, ব্যবসা হারালে, কোয়ারেন্টাইনে থাকলে কিংবা কোয়ারেন্টাইনে আছেন এমন কাউকে দেখাশুনা করলে, চাকুরী আছে কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে বেতন পাচ্ছেন না অথবা বাধ্য হয়ে বাসায় থেকে বাচ্চার দেখাশুনা করতে হচ্ছে  তাঁদের সবাইকে  সরকারের  করোনা সংক্রান্ত আপদকালীন তহবিল (CERD)  থেকে প্রতি মাসে দুইহাজার ডলার  দেওয়া হবে পরবর্তী চারমাস পর্যন্ত।

৪। এক চাকুরী থেকে আরেক চাকুরীর মাঝে কয়েক মাসের জন্যে কানাডায় শর্ত সাপেক্ষে বেকার ভাতার সুযোগ আছে। এই পরিস্থিতিতে  যারা ভাতার যোগ্য নয় তাঁদের জন্যে ৫ বিলিয়নের প্যাকেজ দিয়েছে সরকার। গুডস আর সার্ভিস ট্যাক্স (GST) ক্রেডিটের পরিমান বাড়ানোর ফলে কম আয়ের জনগণ আর্থিকভাবে উপকৃত হবেন। ননপ্রফিট সংস্থা এবং চ্যারিটি নির্বিশেষে ১০% বেতন ভর্তুকির  ব্যবস্থা করেছে সরকার।  ট্যাক্স  প্রদানের সময়সীমা ব্যাক্তিগত জুন পর্যন্ত আর কর্পোরেট সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ক্রেডিট কার্ডের পেমেন্ট, মরগেজ বিষয়ে উদার অবস্থানের জন্যে ব্যাংকগুলোর সাথে কথা বলছেন সরকার।

৫। করোনা মোকাবিলায় ভ্যাকসিন আর এন্টিভাইরাল মেডিসিন ইনোভেশনে জরুরী বাজেটের ব্যবস্থা করেছে সরকার, যুক্ত করেছে কানাডার ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল সহ নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে।  ডাক্তার, নার্স আর স্বাস্থ্যকর্মীদের  জরুরী পরিস্থিতি মোকাবিলার সক্ষমতায় সরকার বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে।

৬। করোনা পরিস্থিতি প্রতিদিনই বদলাচ্ছে, সরকারও পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে রণকৌশলও বদলাচ্ছেন। দক্ষ সিভিল সার্ভেন্টরা নেপথ্যে থেকে পলিসি তৈরি করে যাচ্ছেন। আজই নতুন কিছু ঘোষণা এসেছে।  বাসায় থেকে বাচ্চারা মানসিক চাপে আছেন। এই অবস্থায় তাদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায়  কাউন্সেলিং  আর ফোন হেল্প লাইনের জন্যে সরকারের বরাদ্দ  ৭.৫ মিলিয়ন ডলার।  সিনিয়র সিটিজেনরা বড় বেশী বেকায়দায়; করোনার টার্গেট গ্রুপ হওয়াতে চলাচল সীমিত, এদের বাজার সওদাই করে দেবার জন্যে ৯ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। হোমলেস আর পারিবারিক ভায়োলেন্সের  শিকার, এমন সব পরিবারের জন্যে  সম্প্রসারিত জরুরী ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।

৭।  করোনায় আক্রান্ত কানাডার প্রায় সাড়ে ছয় হাজার। এর মধ্যে তিন হাজারেরও বেশী কুবেকে, মন্ট্রিয়লে শহরে প্রায় ১৪০০ এর মত। এমন অবস্থায় কুবেকের প্রিমিয়ার প্রতিদিনই আসছেন জনগণের সামনে,  কোম্পানিগুলোকে বাঁচানোর জন্যে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ দিয়েছেন। আহবান জানিয়েছেন জনগণকে কমিনিটি’র  স্বেচ্ছাসেবায়। প্রিমিয়ারের আহবানে সাড়া দিয়ে বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছা-সেবকের  দরখাস্তের চাপে ক্রাশ করে যায় ওয়েবসাইটটি, এটাই রিয়েল টাইম দেশপ্রেম।

৮। সরকার স্থানীয় থেকে ফেডারেল, চেষ্টা করছে করোনার পাগলা ঘোড়া অর্থাৎ এক্সপোনেনসিয়াল বিস্ফোরণটাকে চেপে রাখতে। যতটুকু সম্ভব  গ্রাফটাকে  চেপে রাখতে পারলে কানাডার মেডিক্যাল সিস্টেম চাপটাকে হজম করতে পারবে। কানাডার ফ্রি মেডিক্যাল সিস্টেম স্বাভাবিক অবস্থায় প্রায় স্যাচুরেশন অবস্থায় থাকে, ফলে হঠাৎ বিপুল চাপে সিস্টেম এলোমেলো হয়ে যাবে। পিপিই, ভেন্টিলেটর, হাসপাতালের বেড ইত্যাদি বিষয়ে সরকারের প্রস্তুতি স্ফীত অবস্থাকে সামাল দিতে পারলেও পিকটাকে সামলানো মুশকিল।তাই লক্ষ্য ইতালী বা স্পেনের মত নয়, অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত অবস্থা কাম্য।

৯। গ্রাফটাকে চেপে রাখার সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে জনগণ এবং তাঁদের আচরণ। কানাডায় ফেডারেল বা প্রাদেশিক কোন পর্যায়েই লকডাউন নেই, কার্ফু নেই। সরকারের সামাজিক আর শারিরিক দূরত্বের আহবানে চলছে গোটা দেশ। এয়ারপোর্টের আগমন পোর্টে তাপমাত্রা মাপার  যন্ত্র নেই অর্থাৎ প্রয়োজন নেই, সরকারের ভরসা জনগণ নির্দেশ, সতর্কবার্তা মানবে। বিদেশ থেকে বিশেষ বিমানে আটকে পড়া কানাডিয়ানদের নিয়ে আসা হয়েছে, এসে সবাই আইসোলেশনে  গেছে। প্রথমে অভিযোজনে একটু সময় নিলেও  জনগণ আর পুলিশের সহায়তায় এখন রাস্তা-ঘাট ফাঁকা। শপিং মল, বিমান চলাচল, যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত সবই বন্ধ।   গ্রোসারী, ফার্মেসী  কিংবা জরুরী কাজে ব্যবহৃত সার্ভিসে লোকজন ৬ ফুট দূরত্বে থেকে কম সংখ্যায় বা একজন  একজন করে  প্রবেশ করে বাজার করছে। সিকিউরিটি গার্ডের উপস্থিতি সেনিটাইজার  দিয়ে  হাত পরিষ্কার করে এমনকি ক্রেডিট কার্ড জীবাণুমুক্ত করে প্রবেশ করতে হচ্ছে। তবে ইথনিক দোকানগুলোতে শারিরিক দূরত্বের বিষয়গুলো  কিছুটা শিথিল হলেও  সার্বিকভাবে জনগণ সরকার আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার  নির্দেশনা মেনেই চলছে।

১০। কানাডায় এখনো জরুরী অবস্থা জারী হয়নি তবে সরকার আর জনগণ অনেকটা জরুরী অবস্থা বা যুদ্ধকালীন অবস্থার মতই পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। ফেডারেল এবং প্রাদেশিক সরকার  প্রমান করেছে জনগণের সরকার জনগণ দ্বারাই আর জনগণের জন্যেই।  বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সরকারের জরুরী সাহায্য প্যাকেজ খরচে সংসদের অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল। অনুমোদনের জন্যে ন্যুনতম সংখ্যার সংসদ সদস্যের (অধিবেশনে শারীরিক দূরত্বের নিয়ম মেনে) উপস্থিতিতে অধিবেশন ডাকা হয়। কানাডার সংখ্যালঘু সরকারী দল লিবারেল পার্টির  বিরোধী দলের দাবী মেনে, সমঝোতা করে  সংশোধিত বিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংসদে অনুমোদনের  কঠিন অর্জনটি আমাদের তথা মানব সভ্যতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়  রাষ্ট্র, সরকার, সংসদ, সংসদীয় রীতিনীতি  আর রাজনীতি  কেবলই জনকল্যাণে, জনস্বার্থে; আর এটাই সভ্যতার রোল মডেল,   মাল্টিকালচারের কানেডিয়ানদের গর্বিত  হবারই তো কথা।

 

ডঃ  শোয়েব সাঈদ ।। মন্ট্রিয়লের বায়োটিক বিষয়ক বহুজাতিক কর্পোরেট গবেষণা পরিচালক হিসেবে কর্মরত,  বাকসু’র সাবেক সাহিত্য সম্পাদক এবং সিবিএনএ২৪ডটকমের উপদেষ্টা।

সি/এসএস

 


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন


 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 4 =