সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ে ১৪৬টি, বিপক্ষে ১৮০টি।
হাউস অব কমন্সের মোট ৩৩৮ আসনের মধ্যে রয়েছে লিবারেল পার্টি ১৫৪টি, কনজারভেটিভ পার্টি ১২১টি, ব্লক ক্যুইবেকয়া ৩২টি, নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) ২৪টি, গ্রীন পার্টি তিনটি ও স্বতন্ত্র দুইটি। এছাড়া শূন্য রয়েছে দুইটি আসন।
অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি ও সংসদে তৃতীয় বৃহত্তম দল ব্লক ক্যুইবেকয়া-র সংসদ সদস্যরা। আর প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেন ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি, এনডিপি, গ্রীন পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা।
কোভিড-১৯ মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় সরকারের নেওয়া বহু পদক্ষেপের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিক, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, বেসরকারী সংস্থার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য নানাবিধ আর্থিক সহায়তা কর্মসূচী রয়েছে।
কানাডার শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় পর্যায়ের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচীর অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকার ৯১ কোটি ২০ লাখ ডলার বিতরণের জন্য একটি দাতব্য সংস্থা ‘উই’ (WE)-কে মনোনীত করেছিল।
সেই সংস্থার সাথে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো, তাঁর স্ত্রী, মা ও ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতার কারণে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও একমাত্র সুযোগ হিসেবে মনোনয়নের মধ্য দিয়ে ‘স্বার্থের সংঘাত’ ঘটেছে বলে বিরোধী দলগুলো প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে।
চাপের মুখে লিবারেল সরকার শিক্ষার্থীদের অর্থ সহায়তা বিতরণের দায়িত্ব থেকে ‘উই’-কে অব্যাহতি দেয়।
হাউস অব কমন্সের নৈতিকতা (Ethics) বিষয়ক কমিশনার এবং সংসদের একাধিক কমিটির অনুসন্ধানে এই অভিযোগ প্রমাণ হলে অর্থ মন্ত্রী বিল মরনো পদত্যাগে বাধ্য হন।
কনজারভেটিভ পার্টি ও ব্লক ক্যুইবেকয়া প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগ দাবি করে।
পরে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকারের অর্থ ব্যয়, ‘উই’ বিতর্ক ও স্বার্থের সংঘাত সবকিছু নিয়ে লিবারেল সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তা’ তদন্তের লক্ষ্যে একটি নতুন কমিটি গঠনের জন্য প্রস্তাব করে এবং উই সংক্রান্ত নথি প্রকাশের দাবি জানায় কনজারভেটিভ পার্টি।
সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হলে তারা সংসদে লিবারেল সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করে।
অপর দুই বিরোধী দল এনডিপি ও গ্রীন পার্টি অনাস্থা প্রস্তাবের বিপক্ষে অর্থাৎ লিবারেল সরকারকে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে ভোট দিলেও বলেছে তারা সরকারকে সমর্থন করছেনা।
তারা এই কোভিড-১৯ অতিমারী মোকাবেলার মাঝপথে সরকার বদল এবং এই পরিস্থিতিতে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন চায় না বলেই অনাস্থা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে।
তবে সবচেয়ে দুর্দান্ত চালটি চেলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
সংখ্যালঘু লিবারেল সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে তাঁর দমে যাওয়াটা স্বাভাবিক হলেও তিনি ভাব দেখিয়েছেন যে তিনি এসবের পরোয়া করছেন না।
হাউস অব কমন্সে এক বক্তৃতায় জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ করেন, এই অতিমারীর কঠিন সময়ে সারা দেশে কেউ মধ্যবর্তী নির্বাচন না চাইলেও কনজারভেটিভ পার্টি ক্ষমতার জন্য মরীয়া বলেই নির্বাচন চাইছে।
প্রকৃতপক্ষে লিবারেল সরকার টিকে যাওয়ার ব্যাপারে তাঁর এই আস্থার মূল সূত্রটি ছিল মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য বিরোধী দুই দলের প্রস্তুতির অভাব।
কেননা প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা এরিন ও’টুল দলের নতুন নেতা নির্বাচিত হয়েছেন মাত্র ৫৭ দিন আগে, গত ২৪ আগস্ট ২০২০।
আর এনডিপির নেতা জগমিত সিং দলের নতুন নেতা হিসেবে হাল ধরেছেন তিন বছর আগে, ১ অক্টোবর ২০১৭।