খাটের ভেতর তেলের খনি!
রংপুর নগরের পার্বতীপুর এলাকায় এক ব্যবসায়ীর বাড়ির খাটের ভেতর লুকিয়ে রাখা টিসিবির ১ হাজার ২৩৮ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে এগুলো উদ্ধার করা হয়।
গতকাল রাতে পার্বতীপুর এলাকার হানিফ মিয়া বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) এসব ভোজ্যতেল উদ্ধার করে রংপুর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি)। এ সময় হানিফ মিয়া ও লাল মিয়া নামের দুজনকে আটক করা হয়েছে। রংপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (ডিবি অ্যান্ড মিডিয়া) উত্তম প্রসাদ পাঠক ভোজ্যতেল উদ্ধার করার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
খাটের ভেতর তেলের খনি!
গতকাল রাত ১১টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের পার্বতীপুর ঈদগাহ মাঠসংলগ্ন এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। এ সময় ওই বাড়ির বক্সখাটের ভেতরে রাখা টিসিবির সিল মারা ৫ লিটারের ১৪৪টি ও ২ লিটার তেলের ২৫৯টি বোতল উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া সয়াবিন তেলের আনুমানিক মূল্য ৯৯ হাজার ৪০ টাকা। এ সময় ওই বাড়ির মালিক হানিফ মিয়া (৫৮) ও মালামাল সরবরাহকারী লাল মিয়াকে (৫২) আটক করে পুলিশ। এসব ভোজ্যতেল তাঁরা অবৈধভাবে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে টিসিবির ডিলারদের কাছ থেকে কম দামে কিনে মজুত করে রেখেছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১০ মাস বেতন নেই, তারপরও করোনার ঝুঁকি নিয়ে কাজে ৫৬ জন
১০ মাস ধরে বেতন নেই। চাকরি নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা। তারপরও করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন শরীয়তপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ৫৬ যুবক।
গত বছরের জুনে শরীয়তপুর স্বাস্থ্য বিভাগে ৫৬ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁদের কোনো বেতন দিতে পারছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। বরাদ্দ ও নিয়োগ অনুমোদন না থাকায় এমন ঘটছে বলে দাবি স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের। ১০ মাস বেতন না পেয়ে ওই কর্মীরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন ওই স্বাস্থ্যকর্মীরা। গতকাল বুধবার জেলা প্রশাসকের কাছে ওই আবেদন তুলে দেওয়া হয়।
গতকাল শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ১২ জন কর্মী বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাজ করছেন। জরুরি বিভাগে পাওয়া গেল আরিফ খান ও মেহেদী হাসান নামের দুজনকে। আরিফের বাড়ি শরীয়তপুর পৌরসভায়। দরিদ্র পরিবারের সন্তান তিনি। অভাবের সংসারে পরিবারের সহায়তা হবে ভেবে আউটসোর্সিং স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে যোগ দেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাস শেষে টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরব—এমন আশা নিয়ে থাকেন পরিবারের সদস্যরা। প্রতিদিন কাজে আসি, ফিরি শূন্য হাতে। এলাকায় কৃষি শ্রমিকের কাজ করলেও দিনে ৫০০ টাকা মজুরি পেতাম। করোনার মহামারিতেও কাজ বন্ধ করিনি। ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছি।’
মেহেদী হাসান বলেন, ‘বাড়িতে টাকা দিতে পারি না। আবার করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও হাসপাতালে আসতে হয়। পরিবারের সদস্যরা আসতে বাধা দেন। করোনার ঝুঁকি আছে জেনেই কাজ করছি। আমাদের কোনো সুরক্ষা সামগ্রীও নেই। তারপরও কাজ করছি।’
শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, জনবলসংকট থাকায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী স্থানীয়ভাবে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। মন্ত্রণালয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৫৬ জন চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদে কর্মচারী নিয়োগের অনুমতি দেয়। তখন দরপত্র আহ্বান করে স্বাস্থ্য বিভাগ। স্ট্রেড সার্ভিস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান শরীয়তপুরে ওই জনবল সরবরাহ করে। দরপত্রের কার্যক্রম শেষ করে গত বছরের ১৯ জুন তাঁদের নিয়োগ দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে এই জনবল নিয়োগের অনুমোদন ছিল ওই বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। এই ৫৬ জন কর্মীকে জুন মাসের ১১ দিনের বেতন দেওয়া হয়। এরপর আর স্বাস্থ্য বিভাগে তাঁদের নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়নি এবং তাঁদের বেতন দেওয়ার কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ১০ মাস ধরে বেতন ছাড়া কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা।
চতুর্থ শ্রেণির ওই কর্মীদের প্রত্যেককে মাসে ১৬ হাজার ১৩০ টাকা বেতন দেওয়ার কথা। ওই টাকা থেকে তাঁদের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ১৩ শতাংশ টাকা দিতে হবে।
শরীয়তপুর পৌরসভার নবীবাগ এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করেন। প্রতিদিন বাড়ি থেকেই তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, ‘সকালে কাজের জন্য বাসা থেকে বের হই। সন্ধ্যায় ফিরি খালি হাতে। এভাবে আর কত দিন চলব?’
আল আমীন হোসেন কাজ করেন জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তিনি জেলা সদরের ব্যাপারীপাড়া এলাকা থেকে প্রতিদিন জাজিরায় যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ভয়ে মানুষ ঘর থেকে বের হন না। আমি বের হয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। অথচ কোনো পারিশ্রমিক নেই।’
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্টেড সার্ভিসের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী আমরা জনবল সরবরাহ করেছি। তাঁদের বেতন স্বাস্থ্য বিভাগ সরাসরি তাদের ব্যাংক হিসাবে দেবে। আমরা শুধু কিছু কমিশন পাব। স্বাস্থ্য বিভাগ পরবর্তী বছরের জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও বরাদ্দ আনতে পারছে না। এ কারণে ওই কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না।’
জানতে চাইলে শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন এস এম আবদুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, ‘ওই কর্মীদের নিয়োগ দিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষ হয়ে গেছে। পরবর্তী অর্থ বছরের বরাদ্দ ও অনুমোদন এখনো না পাওয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজ করছে। শিগগিরই একটি সমাধান আসবে। ওই স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁদের পারিশ্রমিক পাবেন। এই দুর্যোগে তাঁরা আমাদের পাশে থেকে কাজ করায় আমরা কৃতজ্ঞ।’
সূত্রঃ প্রথম আলো
বাঅ/এমএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন