ফিচার্ড বিশ্ব

গুমের অভিযোগে আটক সেনা কর্মকর্তাদের বেসামরিক আদালতে দ্রুত হাজির করার আহ্বান জাতিসংঘের

জাতিসংঘেও করোনা ভাইরাসের থাবা

ন্যায়সঙ্গত ও স্বচ্ছ ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়ার স্বার্থে গুমের ঘটনায় আটক সামরিক কর্মকর্তাদের দ্রুত বেসামরিক আদালতে হাজির করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। একই সঙ্গে বাংলাদেশের গুম মামলার বিচার প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক। তিনি একে ‘জবাবদিহিতার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। জাতিসংঘের নিজস্ব ওয়েবপেইজে এ খবর জানানো হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে আগের সরকারের সময় সংঘটিত গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) দুটি মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। এই মামলাগুলো টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেল এবং জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল-এ সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত।

এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সাবেক সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

এর মধ্যে আছেন সাবেক সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা (ডিজিএফআই)-এর মহাপরিচালক এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-এর সাবেক কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও জানিয়েছে, আগের প্রশাসনের আমলে সংঘটিত গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত এক ডজনেরও বেশি কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গুমের ঘটনায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন। এটি ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত।’ তিনি বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান যেন বন্দি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে ন্যায্য বিচার ও আইনি প্রক্রিয়ার নিশ্চয়তা দেয়া হয়। ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়, যেহেতু এসব ‘অত্যন্ত সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ মামলা।’

২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ‘কনভেনশন অন এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস’ বা গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধন এনে গুমকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যন্তরীণ আইনে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তবুও ভলকার তুর্ক বলেন, আগের সরকারের আমলে সংঘটিত এবং এখনো বিচারাধীন অসংখ্য মামলার নিষ্পত্তি প্রয়োজন, এবং যারা এখনো বিনা বিচারে আটক আছেন তাদের মুক্তি দিতে হবে।

গত বছরের তরুণদের নেতৃত্বে হওয়া ব্যাপক আন্দোলনের সময় প্রায় ১,৪০০ মানুষ, অনেক শিশু সহ, নিহত হন। সেই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান ও পদত্যাগ করেন। তিনি ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে টানা ক্ষমতায় ছিলেন, এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্তও তিনি সরকার পরিচালনা করেন।

জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর-এর এক তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদনে নির্যাতন, অবৈধ আটক ও গুমের বিশ্বস্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা ‘আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।’ ওই প্রতিবেদনের মূল সুপারিশ এবার ভলকার তুর্ক পুনরায় উল্লেখ করেছেন। তা হলো- বাংলাদেশকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, যে কেউ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত, তার পদমর্যাদা যাই হোক না কেন, ন্যায়সংগত ও স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা হয় যেন। তিনি আরও আহ্বান জানান, এসব মামলায় মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োগ বন্ধ করতে, এবং এর পরিবর্তে একটি ‘সত্য উদঘাটন, ক্ষতিপূরণ, আরোগ্য ও ন্যায়বিচারের সমন্বিত প্রক্রিয়া’ শুরু করতে, যাতে অতীতের নির্যাতন ও গুমের ঘটনা আর কখনো না ঘটে।

সূত্র: মানবজমিন

এফএইচ/বিডি


CBNA24  রকমারি সংবাদের সমাহার দেখতে হলে
আমাদের ফেসবুক পেজে ভিজিট করতে ক্লিক করুন।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ভিজিট করতে পোস্ট করুন।

সংবাদটি শেয়ার করুন