ফিচার্ড মত-মতান্তর

গৌতম বুদ্ধ ও বুদ্ধ পূর্ণিমা  ।। বিদ্যুৎ ভৌমিক

গৌতম বুদ্ধ ও বুদ্ধ পূর্ণিমা  ।। বিদ্যুৎ ভৌমিক

বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হল শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা। গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বোধিজ্ঞান ও বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ লাভ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে এর অপর নাম দেওয়া হয় ত্রিস্মৃতিবিজড়িত ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’।

গৌতম বুদ্ধের শুভজন্ম, বোধিজ্ঞান ও মহাপরিনির্বাণ লাভ এই ত্রিস্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা হল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে এটি বুদ্ধপূর্ণিমা নামেই  পরিচিত।  প্রায় দুই হাজার ছয় শত বছর আগে ৫৬৩ B.C তে বৈশাখী পূর্ণিমার এক আলোকউজ্জল পবিএ দিনে বৌদ্ধ ধর্মের মহাপ্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ নেপালের লুম্বিনী কাননে পিতা শুদ্ধোধন ও মাতা  মহামায়ার ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন এক দেবশিশু সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধ । তাঁর পিতা হলেন নেপালের রাজা , নাম  শুদ্ধোধন । বুদ্ধের মাতার নাম মহামায়া। সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধ হলেন বৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠাতা, প্রধান ধর্মগুরু এবং বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক ও মহাপ্রচারক । গৌতম বুদ্ধের গৃহী নাম হল সিদ্ধার্থ এবং বোধিসত্ত্ব লাভ বা Enlightenment এর পর নাম হয়  গৌতম বুদ্ধ।  সিদ্ধার্থ বাধর্ক্য, জরা, ব্যাধী ও মৃত্যুকে জয় করার জন্য বদ্ধপরিকর হয়ে ২৯ বছর বয়সে সংসারের প্রতি বীতরাগ হয়ে সিদ্ধার্থ এক রাত্রে তাঁর ঘুমন্ত স্ত্রী যশোধরা, পুত্র রাহুলকে ছেড়ে, পরিবারকে নিঃশব্দ বিদায় জানিয়ে প্রিয় অশ্ব কন্তক ও সারথি ছন্দককে নিয়ে রাজপ্রাসাদের সকল ঐশ্বর্য্য ত্যাগ করে বের হয়ে যান। তিনি একজন সংসারত্যাগী  সৎযমী ও ত্যাগী সন্ন্যাসীর জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নেন । ৬ বছর কঠোর তপস্যার পর তিনি বোধিজ্ঞান লাভ করেন ভারতের বিহার রাজ্যের বুদ্ধগয়ায়। ৩৫ বছর বয়সে গৌতম বুদ্ধ সম্পূর্ণ বোধিসত্ত্ব বা বুদ্ধত্ব অর্জন করেছেন এবং নিজের অন্তর্দৃষ্টির কথা সকলকে জানিয়ে চেতন সত্বাদের পুনর্জন্ম ও দুঃখের সমাপ্তি ঘটাতে সাহায্য করেছেন বলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন । গৌতম বুদ্ধের জীবনকাহিনী, কথোপকথনের বিবরণ,নিয়মাবলি তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর অনুগামীরা সূত্রায়িত করেন এবং স্মরণে রাখেন।ভারতের বেনারসের সারনাথে অবস্থিত স্থানে গৌতম বুদ্ধ পাঁচজন শিষ্যকে প্রথম ধর্মশিক্ষা প্রদান করেন এবং বেনারসের সারনাথ থেকেই বুদ্ধ ধর্মের প্রচার শুরু করেন। বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা তাঁকে সেই বোধিসত্তপ্রাপ্ত  দিব্য শিক্ষক মনে করেন ।বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় গন্থের নাম এিপিটক । গৌতম বুদ্ধের জীবনকাহিনী, কথোপকথনের বিবরণ,  নিয়মাবলি তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর অনুগামীরা সূত্রায়িত করেন এবং স্মরণে রাখেন। ৮০ বছর বয়সে গৌতম বুদ্ধ মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন বা দেহ ত্যাগ করেন। যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে বৌদ্ধ ধম্মাবলম্বীরা তাদের  প্রধান ধর্মীয় উৎসব সর্বত্রই পালন করছেন এ বছর ২২ মে।

গৌতম বুদ্ধের মূলমন্ত্র হল- “জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক” or “May all living beings be happy”। ভগবান বুদ্ধের জীবনদর্শন হইতেছে—অহিংসা সাম্য, মৈত্রী ও প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সহাবস্থান করা । গৌতম বুদ্ধ একটি প্রেমময়, অহিংসাময়, সৌহার্দ্যসমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন সত্য, সুন্দর, সাম্য ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করে গেছেন। ‘অহিংস পরম ধর্ম’—বুদ্ধের এই অমিয়ময় বাণী আজও সমাজে ও বিশ্বে শান্তির জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য। এ শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমায়  গৌতম বুদ্ধের প্রতি ভূলুন্ঠিত প্রণামসহ তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্ছলি জ্ঞাপন করছি ।

Online newspaper cbna24.com সিবিএনএ পরিবারের পক্ষ থেকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রাণভরা প্রীতি, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।


বিদ্যুৎ ভৌমিক, সাবেক অধ্যাপক, লেখক ও সিবিএনএ’এর উপদেষ্টা।
মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা, ২২ মে ২০২৪ খ্রী:

 

 


এসএস/সিএ

 

সংবাদটি শেয়ার করুন