বিতর্কিত নাগারনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আজারবাইজানের বিরুদ্ধে মানবিক যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে আর্মেনিয়া। যুদ্ধবিরতি কার্যকরের মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই এ অভিযোগ তুলল দেশটি। দুই দেশ স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার মধ্যরাতে নতুন এ চুক্তিতে সম্মত হয়।
বিবিসির খবরে জানা যায়, আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, চুক্তিতে সম্মত হওয়ার মাত্র চার মিনিটের মধ্যেই আজারবাইজান আর্টিলারি শেল ও রকেট হামলা চালায়। এ অভিযোগের কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি আজারবাইজান।
নাগারনো-কারাবাখ অঞ্চল আজারবাইজানের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তবে এই অঞ্চল আর্মেনীয় আদিবাসীদের দিয়ে পরিচালিত। এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সংঘর্ষে কয়েক শ মানুষ নিহত হয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে চলা সহিংসতা শেষ হয় ১৯৯৪ সালের যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে। এরপর এটি সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা।
চুক্তিতে কী আছে
আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া মানবিক যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে এ চুক্তি নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। আজারবাইজানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের বিবৃতির ওপর ভিত্তি করে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত এসেছে। ওএসসিই মিনস্ক গ্রুপের প্রতিনিধিত্ব করে এই তিন দেশ। নাগারনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে চলা সংঘাতের মধ্যস্থতা করতে তিন দেশের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালে এই গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত হয়।
আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আনা নাগদেলিয়ান টুইটে এক বিবৃতিতে বিতর্কিত এই অঞ্চলে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে গতকাল চুক্তি কঠোরভাবে মানতে আহ্বান জানিয়েছেন।
আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সুসান স্টেপনিয়ান টুইটে জানান, শত্রুরা উত্তর দিকে স্থানীয় সময় গতকাল রাত ১২টা ৪ মিনিট থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত শেল ছোড়ে।
গতকালের আগে আর্মেনিয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে আজারবাইজান। আজারবাইজানের গাঞ্জা শহরে ওই হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৪৫ জন আহত হয়।
আর্মেনিয়ার কর্মকর্তারা এই হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আর্মেনিয়ার অভিযোগ, আজারবাইজান বেসামরিক এলাকায় হামলা চালায়।
আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সুসান স্টেপনিয়ান ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিওতে বলেন, নাগারনো-কারাবাখ অঞ্চলে আজারবাইজানের সশস্ত্র বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
নাগারনো-কারাবাখ কেমন এলাকা?
৪ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত পাহাড়ি এলাকা এই নাগারনো-কারাবাখ।
এখানে খ্রিষ্টান আর্মেনীয় ও মুসলিম তুর্কিরা বসবাস করে। সোভিয়েত আমলে এটি আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত এলাকা ছিল। আন্তর্জাতিকভাবে এই এলাকা আজারবাইজানের অংশ হিসেবে স্বীকৃত। তবে এখানকার বেশির ভাগ জনগোষ্ঠী আর্মেনীয় আদিবাসী। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে চলা সংঘর্ষে ১০ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়। নিহত হয় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। ১৯৯০–এর দশকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী আজারবাইজানের কিছু এলাকা দখল করে। ১৯৯৪ সালে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয় দুই দেশের মধ্যে। তবে এরপর অনেকটাই অচলাবস্থা রয়েছে এ অঞ্চলে। তুরস্ক প্রকাশ্যে আজারবাইজানকে সমর্থন করে। আর্মেনিয়ায় রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
সূত্রঃ প্রথম আলো
বাঅ/এমএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন