জাতির জনক এর ৪৬তম শাহাদত বার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি
শোকাহত রক্তঝরা ১৫ আগস্ট । বাংলার ইতিহাসে অবিরল অশ্রুঝরার দিন । ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের এক বিভিষিকাময় রাতে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনাটি ছিলো একাধারে নৃশংস, কাপুরুষোচিত ও বীভৎস – গোটা জাতি হয়েছিলো স্তম্ভিত, দুঃখভারাক্রান্ত ও শোকাহত । বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
বাঙালি জাতির বাঁচার অধিকারের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এমন ত্যাগ, বীরত্ব, বিবেক ও সাহসীকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন যে, যিনি ২৪ বছরের পাকিস্তানি শাসনামলের প্রায় বারো বছর জেলে কাটিয়েছেন। বারো বছর জেলে এবং দশ বছর কড়া নজরদারীতে থাকার কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাছে পাকিস্তানকে নিজের স্বাধীন বাসভূমির পরিবর্তে বরং ভয়ংকর কারাগার বলেই মনে হতো। বাঙালির আত্মপরিচয়ের সংগ্রাম শুরু হয়েছিল ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই। সেই আত্মপরিচয়ের সংগ্রামকে আত্ম-আবিষ্কার ও স্বাধীন-সার্বভৌম জাতিসত্তায় উত্তরণের ক্ষেত্রে ২৪ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামে বাঙালির জাতির আত্মত্যাগ ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে অংশগ্রহণ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ছয় (৬) দফার ঘোষণা থেকেই মূলত বাঙালির আত্মপরিচয়ের সংগ্রাম আত্ম-আবিষ্কারের সুস্পষ্ট ধারায় প্রবাহিত হতে শুরু করেছিল। ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, ১৯৭১-এর ৭ই মার্চে ঐতিহাসিক ভাষণ এবং বাঙালি জাতির ওপর পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বর্বর আক্রমণকালে জাতির পিতার স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা তারই গৌরবোজ্জ্বল ও রক্তস্নাত অধ্যায় বাঙালি জাতিসত্তা দীর্ঘ পথচলায় অজস্র অগ্নি-পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। দুর্জয় মনোবল, দেশপ্রেম, অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও আত্মত্যাগের মহিমায় আদর্শ নিয়ে সেই সব অগ্নি-পরীক্ষায় বাঙালি জাতি উত্তীর্ণ হয়েছে। এই অস্তিত্ব সচেতন লক্ষ্যাভিমুখী জাতিসত্তা সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক মহান দিক নির্দেশক হিসেবে আবির্ভূত হন।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রমনার রেসকোর্সের জনসভায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে অনুপ্রাণিত হয়ে পুরো বাঙালী জাতি মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল । ১৮ মিনিট স্থায়ী এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করেছেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বঙ্গবন্ধুর এই তেজদিপ্ত-বজ্রকন্ঠের ঘোষণার মধ্যেই মূলত নিহিত ছিল আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ । ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের কালো রাতে বিশ্বাসঘাতক পাকিস্তানী হানাদারবাহিনী সব মূল্যবোধ ও ন্যায়নীতি লঙ্ঘন করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র ও নিরপরাধ বাঙালীর ওপর। সেদিন ‘যার যা আছে তাই নিয়ে’ বাংলাদেশের কৃষক,শ্রমিক ও ছাএ জনতা আমাদের প্রানপিয় মাতৃভূমিকে রক্ষাকরার বলিষঠ চেতনায় উদবুদধ হয়ে স্বাধীনতার মশাল ও অস্ত্র হাতে নিয়ে হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ভারতের সাহায্য ও সহযোগীতায় দীর্ঘ নয় মাসের নিরন্তর মুক্তির লড়াইয়ের পর বিজয়ী হয় বাঙালী জাতি। আমরা ছিনিয়ে এনেছি অামাদের মহান স্বাধীনতা, আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ । পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও ৭ মার্চের এ ঐতিহাসিক ভাষণ প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে । তাঁর এই ভাষণকে বিশ্বের ইতিহাসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণের মধ্যে একটি অন্যতম ভাষণ বলে গণ্য করা হয়।
বঙ্গবন্ধু মানেই একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, স্বাধীন পতাকা। ১৭৫৭ খ্রী: ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার দীর্ঘ ২১৪ বছর পর ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলার স্বাধীনতার নতুন সূর্য উদিত হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ভারতের সহষোগীতায় দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। দাতত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গে বাঙালী জাতি যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনেন লাল-সবুজের রক্তস্নাত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। বাংলাদেশের অভ্যূধ্যয়ে যে লোকটি তার জীবনের সর্বস্ব উজাড় করে পৃথিবীর ইতিহাসে একটি নতুন দেশ উপহার দিয়েছেন ,স্বাধীন বাংলার মহান স্থপতি বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৪৬তম শাহাদত বার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করছি । শোক দিবসের শপথ হোক জাতির জনকের স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকার । জাতীয় শোক দিবসে বাঙালী জাতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে । এদিন যেমন শোকার্ত হওয়ার দিন, তেমনি শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে সমুন্নত রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টার শপথ গ্রহণেরও দিন । বীরত্ব, সাহস ও তেজস্বীতার স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আলোকিত ভাস্বর । স্বাধীনতার মহান স্থপতি হিসাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংগালী জাতির জন্য সম্ভাবনার অসীম দিগন্ত উন্মোচন করিয়া গিয়াছেন । কিন্তু আজ বঙ্গবন্ধু নেই। তার সপ্ন এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আজ আংশিকভাবে পূরণ হয়েছে । বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা গত ১২ বছরের বেশী সময় যাবত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন । জাতীসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে ঘোষণা করেছে। বর্তমান জাতীয় ও বিশ্ব-পরিস্থিতিতে ১৯৭১ এর স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, সুগভীর দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্তর্নিহিত চেতনাই হতে পারে আগামী দিনে বাংলাদেশ ও বাঙ্গালি জাতির অগ্রগামিতার মহৎ প্রেরণা ও এগিয়ে চলার মহামন্ত্র। বাংলাদেশে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, দূনীতি দমন ও সুশাসনের পথে এগোতে পারলেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বমহিমায় জাগরূক থাকবেন বলে আমরা মনে করি।
২০০৪ সালে বিবিসি’র বাংলা রেডিও সার্ভিসের পক্ষ থেকে সারা বিশ্বে যে জরিপ চালানো হয়, তাতে মুজিব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে বিবেচিত হন।
জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে কিউবার রাষ্ট্রপতি ফিদেল ক্যাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুকে আলিঙ্গন করে বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি।’
এই শোকাহত দিনে আমরা পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি এই মহান নেতাকে। স্মরণ করি তাঁর কাজ, তাঁর অবদান, তার চেতনা ও তাঁর আদর্শকে ।
অশ্রুসজল নয়নে কানে বারংরার যেন বেঝে উঠছে:
“যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা যমুনা বহমান,
ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান ।”
বিদ্যুৎ ভৌমিক, কলামিষ্ট, লেখক ও সিবিএনএ এর উপদেষ্টা
মন্ট্র্রিয়ল. ক্যানাডা । ১৩ আগষ্ট, ২০২১ খ্রী:
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান