ফিচার্ড লেখালেখি

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ দিবসে

বিদ্রোহী কবি ও বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ দিবসে বিনম্র  শ্রদ্ধাঞ্জলি  জ্ঞাপন করছি

বিদ্যুৎ ভৌমিক ।। ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ (২৪ মে ১৮৯৯ খ্রী:)  বিদ্রোহী কবি ও আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম  ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার  চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । ধূমকেতুর মতোই আবির্ভাব ঘটেছিল বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের। কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক  যিনি নিজের সৃজনশীল সৃষ্টির মধ্য দিয়ে মানবতা ও সাম্যের কথা বলেছেন। বাংলা সাহিত্য ও কাব্যে গৌরবউজ্জল  ভূমিকা রাখার পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল প্রণোদনার কবি হিসাবে নজরুল ছিলেন খুবই পরিচিত। তিনি ছিলেন ‘বিদ্রোহী কবি’। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ ও বিকাশ হয়েছিল । তিনি নিজেই লিখেছেন, ‘আমি দুরন্ত বৈশাখী ঝড়।’ কবি কাজী নজরুল ইসলাম যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে – কাজেও “বিদ্রোহী কবি” । পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা, অত্যাচার, নিপীড়ন ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিল তাঁর বলিষ্ঠ, সোচ্চার ও প্রতিবাদী কণ্ঠ।বাংলা কাব্যে কবি নজরুল ইসলাম নূতন ধারার ইসলাম শ্যামাসঙ্গীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। চরম দারিদ্রতার মধ্যে বাস করলেও কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন আত্মবিশ্বাসী, দু: সাহসী ও প্রচন্ড মনোবলের অধিকারী একজন সৎসাহসী সুপুরুষ। তাই খুবই আত্মবিশ্বাস, দু:সাহস ও প্রচন্ড মনোবল নিয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখতে পেরেছিলেন তাঁর দারিদ্র কবিতা যেমন:

হে দারিদ্র! তুমি মোরে করেছ মহান
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান
কন্ঠক মুকুট শোভা দিয়াছ তাপস
অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস।“

১৯২২ সালে কাজী নজরুল ইসলামের  বিদ্রোহী কবিতা প্রকাশিত হয় যা  সারা ভারতের সাহিত্য সমাজে   ব্যাপক খ্যাতিলাভ করেছিল:

মহাবিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল আকাশেবাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়ুগ কৃপাণ ভীম রণ ভূমে রণিবে না
বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।………………

উপনিবেশিক ও স্বৈরাচারী বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে  বিদ্রোহী কবি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন ।তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অন্যায়, অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ – দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত ও জনপ্রিয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর কবিতা ও গান মুক্তিযোদ্ধাদের মনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রেরণা ও সাহস যুগিয়েছে। তাঁর কবিতা ও গান আমাদের দুস্তর পারাবার পেরিয়ে ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতার স্বর্ণদ্বারে পৌঁছে স্বাধীনতা অর্জনেও সহায়তা করেছে ।কবি কাজী নজরুল ইসলাম  ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ (২৯ আগস্ট ১৯৭৬ খ্রী:) সালে ৭৭ বছর বয়সে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন । বিদ্রোহী কবি, সাম্যের কবি ও বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৮তম প্রয়াণ দিবস স্মরণে কবির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করছি ।  বিংশ ও একাবিংশ শতাব্দীর পরেও বাংলা সাহিত্য ও বাংগালী মননে ও চিন্তায় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম হয়ে বিরাজ করবে ।

বিদ্যুৎ ভৌমিক: লেখক, কলামিষ্ট ও সিবিএনএ’র উপদেষ্টা। মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা, ২৮ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রী:


এসএস/সিএ
সংবাদটি শেয়ার করুন