জীবন-উৎসব শেষে দুই পায়ে ঠেলে, মৃৎ পাত্রের মতো যাও ফেলে
সত্যি তাই, জীবন উৎসব শেষে অর্চি পাড়ি জমিয়েছে অমৃত লোকে। পিছে রেখে গেছে তার অবিরাম যুদ্ধের শত চিনহ। সেই চিনহ, সেই স্পর্শ, সেই হাসি আর তার যত না বলা কথা নিয়ে আমরা রয়ে গেলাম তার পথের সাথী হবার জন্য দুইদিন আগে আর দুই দিন পরে।
আমি যখন অর্চিকে দেখি সে তখন দশ বছরের বালিকা। যে বয়সে বালিকারা লাল ফিতে, গোলাপী জামা আর সুকুমারের আবোলতাবোল নিয়ে ব্যস্ত থাকে সেই বয়স থেকেই সুহাসিনী অর্চি একজন সুদক্ষ যোদ্ধা। অজস্র কড়া কড়া অসুধ, নানা রকমের সূঁচ আর চিকিৎসার কঠিন ব্যবস্থাপত্র ছিল তার নিত্যকার সংগী। কত কত জটিল অস্ত্র পাচার সাহসী অর্চি অবলীলায় পার করে দিয়েছে। মায়ের হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন আর বাবার স্নেহাশিস কর স্পর্শ যোদ্ধা অর্চির অবিরাম লড়াই এর অস্ত্র ছিল জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।
গত দশ বছরে অর্চিকে আমি বেড়ে উঠতে দেখেছি। যতবার দেখেছি কখনোই তাকে ব্যাথা কাতর দেখি নাই। তার মুখে সদাসর্বদা দেখেছি এক অমলিন জীবনের ছটা। কোনো জরাই তার জীবনের উচ্ছ্বাসকে কেড়ে নিতে পারেনাই। বরং সকল জরাই তার জীবনের ফল্গুধারার কাছে হার মেনে ছিল।
নিত্যদিনের যাপিত জীবনে অর্চিকে দেখেছি কখনো বই হাতে, কখনো টিভি পর্দায় নিবিষ্ট দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে। অর্চির ভালোলাগার বিষয় ছিল মানুষজন। যখনই তাদের ঘরে জন সমাগম হতো তখনোই তার চোখ দুটো ভরে উঠতো এক অনাবিল আনন্দ ছটায়, দীপ্ত হয়ে উঠতো তার কিশোর কোমল মন, অব্যক্ত কথায় সে জানিয়ে যেতো তার অতলান্ত খুশীর বার্তা। হরষিত চোখে মুখে ফুটে উঠতো তার দমিত প্রফুল্লতা। নিবিড় ভালোবাসায় ভাসিয়ে দিতো সেই ক্ষণ, মুহুর্ত আর ঘন্টা গুলি। নানা ভাবে সে তার ক্ষনিক জীবনের আবেগের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। নিখাদ সেই সব আবেগ আর ক্ষণ মুহূর্তের সাথে আমরা জড়িয়ে আছি নানা ভাবে।
এ অর্চির মৃত্যু নয়। অর্চি মৃত্যুঞ্জয়ী। সে আকাশের অগণিত প্রস্ফুটিত তারার আমন্ত্রণে এক জীবন থেকে আরেক শান্তিময় জীবনের উদ্দেশ্যে অন্য রথে চড়েছে মাত্র। সে এখন বিশ্বপথের এক বন্ধনহীন যাত্রী। আলোর দেশের পথিক।
যেমন বলা যায়..
” আজি তার রথ চলিয়াছে রাত্রির আহবানে
নক্ষত্রের গানে, প্রভাতের সিংহদ্বার পানে”।
মন্ট্রিয়ল
সিএ/এসএস
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন