⇒করোনায় আক্রান্ত কী-না ঘরে বসেই পরীক্ষা করবেন যেভাবে ⇒যুক্তরাষ্ট্রের ১২ রাজ্যে ছড়িয়েছে করোনা⇔ইতালিতে এক বাংলাদেশি আক্রান্ত চার দেশের অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ
⇒বাংলাদেশ করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে ⇒যুক্তরাষ্ট্রের ১২ রাজ্যে ছড়িয়েছে করোনা
টাকার মাধ্যমেও ছড়াতে পারে করোনাভাইরাস! টাকা বা কয়েনের মাধ্যমেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা এ জন্য বিশ্বজুড়ে স্পর্শবিহীন মাধ্যম বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কেনাকাটা বা লেনদেন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
টাকা বা ব্যাংক নোটে নানা ধরনের জীবাণুর উপস্থিতি শনাক্ত করার ঘটনা নতুন নয়। এর মাধ্যমে ছড়ায় সংক্রামক নানা রোগও। ২০১৫ সালে দিল্লির ইনস্টিটিউট অব জিনোমিকস অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির বিজ্ঞানীরা তাঁদের এক গবেষণার ফলাফলে জানিয়েছিলেন, ভারতের বাজারে চালু নোটগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করে তাতে অন্তত ৭৮ রকম বিপজ্জনক মাইক্রোবের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন, যা থেকে মারাত্মক সব রোগ ছড়াতে পারে।
বাংলাদেশের একদল গবেষক গত বছরের আগস্টে বলেছিলেন, তাঁরা ১৫টি উৎস থেকে নেওয়া কাগজের টাকার নোট ও কয়েনে ই-কোলাই জাতীয় ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পেয়েছেন, যা সাধারণত মলমূত্রের মধ্যে থাকে। এসব টাকা ও কয়েনে এক হাজারের চেয়ে আরো বেশি মাত্রায় ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ছিল, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এক হাজার মাত্রা পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়াকে সহনশীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য মনে করা হয়। এ গবেষণাটির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী।
টাকা বা কয়েনের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা কতটুকু—জানতে চাইলে ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, ‘যেহেতু আমরা গবেষণা করে টাকায় বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া পেয়েছি, যা মানুষের অন্ত্রে নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করে; তাই এর মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়াটাও অস্বাভাবিক নয়।’
তাঁর মতে, ‘টাকা বা ডলারের ব্যবহার ও আন্তর্জাতিক বিনিময়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাস শুধু একটি দেশের মধ্যে নয় বরং বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েতে পারে এবং এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। যেহেতু এটা সরাসরি মানুষ হাত দিয়ে ধরে, অনেক সময় মুখের থুতু নিয়ে কাউন্ট করে। তাই এর মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেখান থেকে এটা হতে পারে, যদি মানুষ সে হাতে খায়, মুখে দেয়।’
ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী জানান, ভাইরাস বাহকের শরীরে সক্রিয় হয়, অন্যত্র নিষ্ক্রিয় থাকে। টাকায় থাকলে সে হয়তো নিষ্ক্রিয় থাকে, কিন্তু মানুষের সংস্পর্শে এলে সেটি করোনাভাইরাসের উপসর্গ বা রোগের সৃষ্টি করতে পারে, এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এমন আশঙ্কায় গত মাসে ভাইরাসের উপস্থিতি নিয়ে টাকা বা ব্যাংক নোট জীবাণুমুক্ত করার একটি উদ্যোগ দেখা যায় চীনে। দেশটিতে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর সেখানে ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে বাজার থেকে ব্যাংক নোট সরিয়ে নিয়ে তা ওষুধের স্প্রের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করে আবার বাজারে ছাড়ে দেশটি।
বিশ্বজুড়ে এমন আশঙ্কার পর বিশেষজ্ঞরা, ব্যাংক নোট এড়িয়ে স্পর্শবিহীন মাধ্যম বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কেনাকাটা বা লেনদেন করার পরামর্শ দিয়েছেন। স্পর্শবিহীন লেনদেন বা প্রযুক্তি বলতে, ব্যাংক নোট ছাড়া অন্য মাধ্যম যেমন—কার্ড, বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ যেমন—বিকাশ বা নগদ অথবা অন্য কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করে লেনদেনের কথা বোঝানো হয়েছে।
তবে বাংলাদেশের মতো দেশ যেখানে প্রায় শতভাগ লেনদেন হয় ব্যাংক নোটের মাধ্যমে, সেখানে কিভাবে এই পরামর্শ বাস্তবায়ন সম্ভব তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের পরামর্শ মেনে চলা কঠিন। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যাংক নোট ব্যবহারের বিষয়ে তাঁরা বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক পরিচালক মাহমুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে যেহেতু এখনো করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি, তাই এখনই এ বিষয়ে বলাটা কঠিন। তবে যদি শনাক্ত করা হয়, সে ক্ষেত্রে ভাইরাসটি যাতে অতিমাত্রায় ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য ব্যাংক নোট ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে।
এ ক্ষেত্রে মাহমুদুর রহমানের পরামর্শগুলো হলো অবশ্যই টাকা গোনার সময় হাত দিয়ে মুখের লালা নেবেন না। ব্যাংক নোট বা টাকা নাড়াচাড়ার পরপরই অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। যাঁরা অত্যধিক মুদ্রা নাড়াচাড়া করেন, যেমন—ব্যাংককর্মী বা মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীরা, তাঁদের অবশ্যই অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে; তাঁরা দস্তানা বা গ্লাভস পরে নিতে পারেন। সতর্কতা হিসেবে হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ব্যবহার করতে পারেন। টাকা ধরা বা ব্যবহারের পরপরই চোখ, নাক বা মুখে হাত দেওয়া যাবে না। সূত্র : বিবিসি বাংলা।
করোনায় আক্রান্ত কী-না ঘরে বসেই পরীক্ষা করবেন যেভাবে
বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়াচ্ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এরই মধ্যে বিশ্বের কমপক্ষে ৬০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসটি। এসব দেশে আতঙ্কে মানুষ এখন ঘর থেকেও বের হতে চান না।
তবে বিজ্ঞানীরা, আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলছেন, কিছু নিয়ম মেনে চললেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
এছাড়া ঘরে বসেই জানা যাবে কোনও ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত কী না?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে তার দেহে এর চিহ্ন বা লক্ষণ খুঁজে পেতে অনেকদিন সময় লেগে যায়। সাধারণত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জ্বর বা কাশি নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার আগেই তার ফুসফুসের ৫০% ফাইব্রোসিস (সূক্ষ্ম অংশুসমূহের বৃদ্ধি) তৈরি হয়ে যায়, যার মানে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
তাইওয়ানের বিশেষজ্ঞরা কেউ আক্রান্ত হয়েছেন কি না, সেটা নিজে নিজেই পরীক্ষা করার একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যেটা কেউ প্রতিদিন সকালে উঠেই কয়েক সেকেন্ডে একবার পরীক্ষা করে নিশ্চিন্ত হতে পারেন। পরীক্ষাটা হলো:
পরিচ্ছন্ন পরিবেশে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে সেটাকে দশ সেকেন্ডের কিছুটা বেশি সময় ধরে আটকে রাখুন। যদি এই দম ধরে রাখার সময়ে আপনার কোনো কাশি না আসে, বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভব না হয়, মানে কোনো প্রকার অস্বস্তি না লাগে, তার মানে আপনার ফুসফুসে কোনো ফাইব্রোসিস তৈরি হয়নি অর্থাৎ কোনো ইনফেকশন হয়নি, আপনি সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত আছেন।
জাপানের ডাক্তাররা আরেকটি অত্যন্ত ভালো উপদেশ দিয়েছেন যে, সবাই চেষ্টা করবেন যেন আপনার গলা ও মুখের ভেতরটা কখনো শুকনো না হয়ে যায়, ভেজা ভেজা থাকে। তাই প্রতি পনেরো মিনিট অন্তর একচুমুক হলেও পানি পান করুন।
কারণ, কোনোভাবে ভাইরাসটি আপনার মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করলেও সেটি পানির সাথে পাকস্থলীতে চলে যাবে, আর পাকস্থলীর এসিড মুহূর্তেই সেই ভাইরাসকে মেরে ফেলবে।
ইতালিতে এক বাংলাদেশি আক্রান্ত চার দেশের অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ
বাংলাদেশ করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে
বিশ্বব্যাপী করোনা ছড়িয়ে পড়ায় আশঙ্কা বাড়ছে। উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে দেশ। যুক্তরাষ্ট্র যে ঝুঁকিপূর্ণ ২৫ দেশের তালিকা করেছে এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। ইতালিতে বাংলাদেশি এক নাগরিক করোনা ভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত হয়েছেন
বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। করোনার কারণে চীন, ইতালি, ইরান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। স্কুল-কলেজেও কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র করার চিন্তা করছে প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল করোনা নিয়ে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, তিন দেশে মোট সাত জন বাংলাদেশির এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেল, যাদের মধ্যে দুইজন ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ডা. ফ্লোরা বলেন, এটা আমাদের জন্য একটি দুঃসংবাদ যে, ইতালিতে একজন বাংলাদেশি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
তিনি বাসাতেই আছেন, বাসায় রেখেই তার চিকিৎসা করা হচ্ছে।
আইইডিসিআরের পরিচালক জানান, করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে বাংলাদেশের বিমানবন্দরে চীন, ইরান, ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা সুবিধা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। ফলে কেউ আসতে চাইলে তাদের আগেই নিয়ম মাফিক ভিসার আবেদন করতে হবে। আমাদের দূতাবাস থেকে তাদের ভিসা নিয়ে আসতে হবে। ভিসা নেয়ার সময় তাদের যে করোনা ভাইরাস নেই বা কোয়ারেন্টিন পার করেছেন-এমন সার্টিফিকেট দাখিল করতে হবে। চলাফেরায় ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপের মাধ্যমে চীনের ভেতরে ভাইরাসের বিস্তার কমিয়ে আনা গেলেও চীনের বাইরে সংক্রমণ বাড়ছে দ্রুত গতিতে। ইতিমধ্যে ৭৩ দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে জানিয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, প্রতিদিনই উদ্বেগ আস্তে আস্তে বাড়ছে। ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও জাপানকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
তিনি বলেন, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে করোনা ভাইরাস বাইরে বেরিয়ে গেলে দুই থেকে সাত ঘণ্টা বেঁচে থাকে। সেদিক থেকে সীমান্ত দিয়ে আসা পণ্যের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই। তবে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে এমন কোনো দেশে আপাতত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া না যেতে এবং সেসব দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে না আসার আহ্বান জানান অধ্যাপক ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে কোনো তথ্য সরকার গোপন করছে না। রোগী বা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে জানানো হবে। সূত্র জানিয়েছে, করোনা সন্দেহে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। তারা ভালো আছেন। হাসপাতলটিতে ২৪ ঘণ্টায় করোনা সন্দেহে একজন ভর্তি হয়েছেন। আইইডিসিআর বলছে, এই পর্যন্ত ১০৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলেও কারো শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি। বিমান, নৌ ও স্থলবন্দর এবং একটি ট্রেসের মোট ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৯২ জন যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা হয়েছে।
করোনা প্রতিরোধে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ: আইইডিসিআর জানায়, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রলালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। জাতীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রীর নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সমূহের মন্ত্রীবর্গ ও সচিববৃন্দের সমন্বয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠিত হয়েছে। জেলা সমন্বয় কমিটিতে থাকবেন জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, পুলিশ সুপার, মেডিক্যাল কলেজ/সদর হাসপাতালের পরিচালক/তত্ত্বাবধায়ক, জেলার সকল উপজেলা চেয়ারপারসন, সদর পৌরসভার মেয়র, সরকারী বিভাগসমূহের জেলা পর্যায়ের নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ প্রমুখ। উপজেলা সমন্বয় কমিটিতে থাকবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউএফপিও, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট পৌর মেয়র, সরকারি বিভাগসমূহের উপজেলা পর্যায়ের নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ প্রমুখ। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান যথাক্রমে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটির উপদেষ্টা থাকবেন।
জেলা-উপজেলা সমন্বয় কমিটিগুলোর এ মুহূর্তে করণীয়-জেলা-উপজেলা পর্যায়ে মাল্টি সেক্টোরাল কমিটিগুলো সক্রিয় করা। পরিস্থিতির চরম পর্যায়ে যেতে পারে এটা বিবেচনায় রেখে সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতি নিয়ে রাখা। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আইসোলেশন হাসপাতাল/ইউনিট নির্ধারণ করে পূর্ণ প্রস্তুতি নিশ্চিত করা। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সকল গঠিত রেসপন্স টিমের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। এলাকায় অবস্থিত বিমান বন্দর, সমুদ্র বন্দর ও স্থল বন্দরে পরিচালিত স্ক্রিনিং কাজের তদারকি করা। জনসচেতনতার উদ্দেশ্যে প্রচার/ প্রচারণা করা, গুজব, বিভ্রান্তি দূর করতে সক্রিয় থাকতে হবে। এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যের জন্য আইইডিসিআর ওয়েবসাইট দেখুন। সরকারের অন্যান্য বিভাগের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করা বিশেষ করে নিরাপত্তা, কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থাপনা ইত্যাদিতে অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়া। কমিটি এখন থেকেই স্থানীয় স্কুল-কলেজ-অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজন হলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র করা যায় কিনা তার সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করবেন। কোনো গ্রাম/পাড়া/মহল্লায় করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটলে সেখানে সামাজিক (কমিউনিটি) কোয়ারেন্টিন করার প্রস্তুতি এখন থেকেই গ্রহণ করা। বিদেশ থেকে আগত সকল যাত্রীকে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিন মেনে চলতে সহায়তা করা।
কভিড-১৯ সংক্রান্ত যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণে পর্যায় অনুযায়ী আইইডিসিআর-এ কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, সিভিল সার্জন বা ইউএইচএফপিও-এর সিদ্ধান্ত অবহিত হওয়া। বিদেশ থেকে আগত সকলকে আবশ্যিকভাবে নিকটস্থ সিভিল সার্জন/ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে রিপোর্ট করতে হবে। রিপোর্টকালীন সময়ে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের তারিখ; সর্বশেষ ভ্রমণকৃত দেশ; দেশের সংখ্যা একাধিক হলে বিগত ১৪ দিনে যে সকল দেশ ভ্রমণ করেছেন সে সকল দেশের নাম; ভ্রমণের সময়কাল; দেশে অবস্থানকালীন ঠিকানা, ফোন নম্বর, মোবাইল ফোন নম্বর; দেশে প্রত্যাবর্তনের পরে দেশে অন্য কোন স্থানে/ জেলায় ভ্রমণ করে থাকলে সে স্থানের নাম/ঠিকানা লিখতে হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উপজেলা চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নিয়ে সভা করে এ বিষয়ে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবেন ও এ সংক্রান্ত তথ্য স্থানীয় কেবল টিভি অপারেটরদের মাধ্যমে কেবল টিভিতে প্রচার ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কাউকে করোনা আক্রান্ত বলে সন্দেহ হলে পরিচালক/ সিভিলসার্জন/ তত্ত্বাবধায়ক/ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তাৎক্ষনিকভাবে রোগতত্ত্ব রোগ নিয়স্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) কে অবহিত করবেন।
দুই মাস আগে চীনের উহান থেকে ছড়াতে শুরু করা করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ৩ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ৯৩ হাজারে। এর আগে সিঙ্গাপুরে পাঁচ প্রবাসী বাংলাদেশি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নেয়া দুজন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন বলে গত শনিবার আইইডিসিআর থেকে জানানো হয়। তবে চীনে থাকা বাংলাদেশি বা বাংলাদেশে কারও মধ্যে এ পর্যন্ত নতুন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে, বাংলাদেশ করোনা ভাইরাসের উচ্চ ঝুঁকিতে আছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ মোট ২৫ দেশ কভিড-১৯ এর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়া বাকি ২৪টি দেশ হলো: আফগানিস্তান, অ্যাঙ্গোলা, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, কাজাখস্তান, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, তাজিকিস্তান, ফিলিপাইন, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, জাম্বিয়া, জিম্বাবুয়ে, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ইথিওপিয়া, কিরঘিজ প্রজাতন্ত্র, লাও, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যে ২৫টি দেশ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের জন্য ৩ কাটি ৭০ লাখ ডলারের জরুরি তহবিল দেয়ার অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), অন্যান্য বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠান এবং ইউএসএআইডির কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী অংশীদারদের পরিচালিত প্রকল্পের জন্য এ তহবিল দেয়া হচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিশ্রুত ১০ কোটি ডলারের প্রথম কিস্তি বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কারো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ১২ রাজ্যে ছড়িয়েছে করোনা
যুক্তরাষ্ট্রের ১২টি রাজ্যে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এতে শতাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। বুধবার তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে নয়জন মারা গেছেন। এদিকে, করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ৩ মাসের বেতন দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। করোনা রোগীদের জন্য বীমা খুলছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর সিএনএন ও রয়টার্সের।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে ১০৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে ৪৫ জন প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের যাত্রী ছিলেন। এর বাইরে তিনজনকে চীনের উহান শহর থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। করোনা আতঙ্ক নিয়ে বিভিন্ন বন্দর ঘুরে ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে নোঙর করে। এ প্রমোদতরীর যাত্রীদের মাধ্যমে অনেক দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলোর মধ্যে ওয়াশিংটনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখানে ১৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন ও ছয়জন মারা গেছেন। এরপর আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া। এখানে ২০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর বাইরে ইলিনয়ে চারজন, নিউইয়র্কে দু’জন, ফ্লোরিডায় দু’জন, অ্যারিজোনায় একজন, ম্যাসাচুসেটসে দু’জন, ওরেগনে তিনজন, রোড আইল্যান্ডে দু’জন, উইসকনসিনে একজন, নিউ হ্যাম্পশায়ারে একজন এবং জর্জিয়ায় দু’জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে।
ওয়াশিংটন রাজ্যের কির্কল্যান্ডের একটি নার্সিং হোমে করোনা আক্রান্ত চারজনের মৃত্যু হয়। নার্সিং হোম লাইফ কেয়ার সেন্টারে চিকিৎসাধীন ৫০ জনের বেশি বাসিন্দা ও কর্মীর করোনাভাইরাসের লক্ষণ রয়েছে।
ওয়াশিংটনের সিনেটর প্যাটি মুরে বলেন, এ রাজ্যে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আভাস দেয়া হয়েছে। রাজ্যের বাসিন্দারা খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অসুস্থদের পরীক্ষা করার পর ফলাফল দিতে অনেক দেরি হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, নর্থ ক্যারোলিনায় এক ব্যক্তির দেহে পরীক্ষায় করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। তিনি ওয়াশিংটন সফরে গিয়ে সংক্রমিত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। একটি নার্সিং স্থাপনা থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ অবস্থায় মার্কিন নাগরিকদের বিদেশ সফরে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে মার্কিন প্রশাসন। তবে এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ সফরে কোনো বিধিনিষেধের কথা ভাবছে না প্রশাসন। নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ডু কুমো বলেন, এখানে দ্বিতীয় ব্যক্তির করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ওয়েস্টচেস্টারের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি ম্যানহাটনে কাজ করতেন। সম্প্রতি ইরান ঘুরে আসা ৩৯ বছর বয়সী একজন স্বাস্থ্যকর্মীর দেহে এ ভাইরাস ধরা পড়েছে। তবে নতুন যিনি আক্রান্ত হয়েছেন তিনি চীন বা করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো দেশে যাননি। তবে সম্প্রতি তিনি মিয়ামি গিয়েছিলেন।
করোনাভাইরাস আতঙ্কে বিদেশে অধ্যয়নরত স্পন্সরড শিক্ষার্থীদের সফর স্থগিত করেছে কলাম্বিয়া ও নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি। পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত সফরে স্থগিতাদেশ থাকবে। আক্রা, বার্লিন, বুয়েন্সআয়ার্স, লন্ডন, মাদ্রিদ, প্যারিস, প্রাগ, সিডনি ও তেলআবিবে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি। সেখানে নিজ খরচে পড়াশোনা অব্যাহত রাখা অথবা বাসায় ফিরে যেতে এবং পড়াশোনা একাকী অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
করোনা চিকিৎসায় ট্রাম্পের ৩ মাসের বেতন দান : বিশ্বজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় নিজের ৩ মাসের বেতনের অর্থ দান করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্টকে ২০১৯ সালের শেষ ৩ মাসের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দান করেছেন। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি স্টিফেনি গ্রিশাম একটি ব্যাংক চেকের ছবি পোস্ট করেছেন। ওই চেকের মাধ্যমে হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারি অ্যালেক্স আজারকে ট্রাম্প তার বেতন থেকে এক লাখ ডলার দান করেন।
এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যালেক্স আজার বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি করোনাভাইরাস প্রতিহত করতে এবং এর চিকিৎসায় নিজের ৩ মাসের বেতন দান করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এরই মধ্যে ৮০টি দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। সারা বিশ্বে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত তিন হাজার ২০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে চীনে দুই হাজার ৯৮১ জন মারা গেছেন। শুধু চীনেই আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ হাজার ২৭০।
সারা বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩ হাজার ছাড়িয়েছে। এরমধ্যে চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা দক্ষিণ কোরিয়ায়। সে দেশে পাঁচ হাজার ৩২৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তবে আশার কথা, ৫০ হাজার ৬৯১ জনেরও বেশি মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
আরও পড়ুনঃ
সর্বশেষ সংবাদ
কানাডার সংবাদ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন