দেশের সংবাদ

ডা: মঈন উদ্দিনের জীবনী এবং কিছু আলোকচিত্র

 

ডা: মঈন উদ্দিনের জীবনী এবং কিছু আলোকচিত্র ।। করোনাযুদ্ধে চিকিৎসক সমাজের প্রথম শহীদ ডা: মো: মঈন উদ্দিন ১৯৭৩ সালের ২ মে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নাদামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের স্কুল থেকে পাঠশালা পাশের পর তিনি ধারণ নতুন বাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৮ সালে এসএসসি এবং ১৯৯০ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। একই বছর ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। সেখান থেকে ১৯৯৮ সালে কৃতিত্বের সাথে এমবিবিএস পাস করেন। এরপর তিনি এফসিপিএস ও এমডি কোর্স সম্পন্ন করেন।

এম সি কলেজের খ্যাতিমান অধ্যক্ষ প্রফেসর হাসান ওয়ায়েজের সঙ্গে ডা: মঈন উদ্দিন

২২তম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ স্বাস্থ্য ক্যাডারে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৪ সালের ২০ মে তিনি ওসমানী মেডিকেল কলেজে মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ পদে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তার মৃত্যুতে কেবল তাঁর জন্মমাটি ছাতক নয়, পুরো সিলেট বিভাগে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তার মৃত্যুর বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।

 

ডা: মঈনুদ্দিনের স্ত্রী ডা: রিফাত জাহান সিলেটের বেসরকারি পার্ক ভিউ মেডিকেল কলেজের ফিজিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও এ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (চলতি দায়িত্ব)। তার বড় ছেলে জিহাদের বয়স ১২ বছর। আর ছোট ছেলে জায়ানের বয়স ৭ বছর। তারা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করছে।

যুক্তরাজ্যে পরিবারের সদস্যদের সাথে ডা: মঈন উদ্দিন
তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ৫ম ডা: মঈন উদ্দিনের বড় ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী শফিক উদ্দিন বছর খানেক পূর্বে সেখানে মারা গেছেন। মার মেঝভাই সিরাজ উদ্দিনও মারা যান কয়েক বছর পূর্বে। তার তিনবোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।

 

ডা. মঈন উদ্দিন সিলেটে করোনা যুদ্ধে প্রথম সারির যোদ্ধা ছিলেন। ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উদ্যোগে গঠিত সিলেট করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। এর আগে তিনি এ হাসপাতালের ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটিসহ আরো কয়েকটি কমিটির দায়িত্ব পালন করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা: আবুল কালাম আজাদ তাঁকে(ডা: মঈনউদ্দিন) করোনায় চিকিৎসক সমাজের সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসাবে অভিহিত করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মহাপরিচালক নিজে তার লাশ দেখে এসেছেন এবং তার স্ত্রী চৌধুরী রিফাত জাহানের সাথে কথা বলে তাকে সান্তনা দিয়েছেন বলে জানান।

নিজ পরিবারের সাথে

জানা গেছে, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হন ডা. মঈন। তিনি সিলেটের প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী। গত ৫ এপ্রিল আইইডিসিআর থেকে তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। গত ৩০ মার্চ থেকে তিনি তার বাসায় কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। পজিটিভ রিপোর্ট আসার পর নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকা লকডাউন ঘোষণা করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ৭ এপ্রিল সিলেট নগরীর শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে করোনা আইসোলেশনে সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। ৮ এপ্রিল পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে এ্যম্বুলেন্সযোগে দ্রুত ঢাকায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালেই তার চিকিৎসা চলছিল। সোমবার সকাল থেকে তাকে আইসিইউ(ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট)-এ নেয়া হয়। আইসিইউকে থাকা অবস্থায় বুধবার সকালে পৌনে ৭টায় চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অধ্যাপক ডা: মঈন উদ্দিনের মৃত্যুতে মুষড়ে পড়েছেন তার স্বজন-শুভাকাঙ্খী-শুভার্থীরা। তাঁর সহপাঠী ওসমানী মেডিকেল কলেজের নাক, কান ও গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: নুরুল হুদা নাঈম বলেন, ‘ডা: মঈনের মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর এমন অকাল মৃত্যু হবে-আমরা তা ভাবতে পারিনি।’
এম সি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর হায়াতুল ইসলাম আকঞ্জি বলেন, ‘মঈন উদ্দিনের মতো ভদ্র ও মেধাবী ছেলে হয় না। তাকে হারিয়ে আমরা শোকাহত।’

সিলেটে যোগদানের পর প্রতি শুক্রবার তার গ্রামের বাড়ি নাদামপুরে এলাকার রোগীদের জন্য ফ্রি চিকিৎসা সেবা চালু করেন। এছাড়া সিলেটে তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখতেন সেখানেও এলাকার লোকজনকে অনেকটা ফ্রিতেই চিকিৎসা সেবা দিতেন। অত্যন্ত ধর্মভীরু মেধাবী এই চিকিৎসক সেই থেকেই সর্বমহলে ‘গরীবের ডাক্তার’ হিসাবে পরিচয় লাভ করেন।

মঈন উদ্দিনের পিতা মুনসী আহমদ উদ্দিন ছিলেন একজন পল্লী চিকিৎসক।
পল্লী চিকিৎসক পিতা মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিলেন এলাকার অসহায় রোগীদের যেন নিয়মিত সেবা দেন ছেলে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পল্লী চিকিৎসক বাবার কথা রেখেছেন ডা. মঈন উদ্দিন। প্রতি শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে সিলেট থেকে এলাকায় ছুটে

বিনামূল্যে গরিব অসহায়দের ব্যবস্থাপত্র দিতেন। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পও করেছেন তিনি। এমন মানবিক মানুষ মানুষের সেবা করতে গিয়েই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অবশেষে মারা গেছেন।

এলাকার হিন্দু মুসলিম সবাই এমন মৃত্যুর খবরে মর্মাহত হয়েছেন। তাদের অনেকেই মৃত্যুসংবাদ শুনে অঝোরে কেঁদেছেন।

এলাকার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক আছকির মিয়া বলেন, ‘এলাকার অসহায় হিন্দু-মুসলিম সবাই ডা. মইনুদ্দিনের কাছ থেকে বিনামূল্যে সেবা পেয়েছেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এসে তিনি এলাকার রোগীদের চিকিৎসা দিতেন। বিনা ফিতে দেখা দরিদ্র রোগীদের কম্পানি প্রদত্ত ওষুধও বিলিয়ে দিতেন।’

-সূত্রঃ দৈনিকসিলেটডটকম

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × five =