রাত নামার সঙ্গে সঙ্গেই বেজে ওঠে মিউজিক। মাতাল সুরের গানের তালে মেতে ওঠে একঝাঁক উঠতি বয়সের তরুণী। শরীরে বিশেষ অংশগুলো ছাড়া কোথাও পোশাক নেই। মঞ্চে একের পর এক নাচ নিয়ে হাজির হচ্ছে তরুণীরা। কখনো একক কখনো এক যোগে চার পাঁচজন মঞ্চ মাতিয়ে রাখছে। মঞ্চের সামনে উন্মুখ হয়ে উপভোগ করছে বখে যাওয়া কিশোর তরুণরা। নাচের ফাঁকে ফাঁকে মেয়েরা দর্শকদের কাছে যায়।
দর্শকরা আদর করে শরীরের স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে হাত বুলিয়ে মজা নিচ্ছে। রাত গভীর হলে অর্থের বিনিময়ে বিছানা ভাগাভাগির সুযোগও অবাধ। রোববার, সোমবার, বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার বগুড়ার তারকা খচিত আবাসিক হোটেল সিয়েস্তায় এমন আয়োজন চলমান। শহরে বেড়ে ওঠা তরুণ-তরুণীদের বিপথগামী করছে হোটেলটির মালিকপক্ষ।
ফলে এমন অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধের জন্য মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার এসোসিয়েশন বগুড়া জেলা কমিটি। ওই কমিটির সভাপতি আরমান হোসেন ডলার গোপনে হোটেল সিয়েস্তার এমন অশ্লীল আয়োজন প্রত্যক্ষ করার জন্য গিয়ে এমন ঘটনার সত্যতা পান।
তিনি বলেন, রাতের শুরুতেই হোটেল সিয়েস্তার অডিটরিয়ামে উলঙ্গ নাচ শুরু হয়। নাচের তালে অনেকটা মাতাল হয়ে তরুণ-তরুণীরা একাকার হয়ে যায়। ওই আয়োজনে প্রবেশ করতে এক হাজার থেকে দুই হাজার পর্যন্ত টাকা গুণতে হয় দর্শকদের। মেয়েদের উলঙ্গ নাচ দেখে তাদেরকে শরীরিকভাবে উপভোগ করার জন্য আলাদাভাবে রুম ভাড়া নিয়ে ভোর পর্যন্ত মেতে থাকছে যুবকরা। ডলার আরও বলেন, ওই অশ্লীল আয়োজনের যারা দর্শক, তাদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। শহরের বিভিন্ন মেছে তারা অবস্থান করেন। এছাড়াও বখে যাওয়া কিশোর-তরুণরাও নিয়মিত ওই আয়োজনে অংশ নিচ্ছে।
বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে এই প্রতিবেদক কৌশলে প্রোগ্রামের আয়োজক হোটেলের ওয়ার্ডবয় রাকিবকে ফোন দিয়ে প্রবেশ ফি কত টাকা জানতে চাইলে সে বলে- জনপ্রতি এক হাজার টাকা। কিছু কমানো যাবে কিনা জানতে চাইলে রাকিব বলেন, বিশ পঁচিশজন মেয়ের নাচ দেখবেন আরও কত কম করতে বলেন?
হোটেলের ওই অশ্লীল আয়োজনের সাথে জড়িত আফরিন নামে উঠতি বয়সী এক মেয়ের সঙ্গেও কথা হয়। এরপর কবে এমন আয়োজন হবে জানতে চাইলে আফরিন বিষয়টা বুঝতে পেরে বলেন- আমি আর যাই না ওখানে। গতরাতেও (রোববার) শো করেছেন দেখলাম আজ রাতে করবেন না? তখন সে বলে আমি আর যাবো না ওখানে।
মাসুদ নামের অপর এক যুবক। সেও বগুড়া শহরের বাসিন্দা। মাসুদ সপ্তাহে একদিন শুধু বৃহস্পতিবার সিয়েস্তা হোটেল ভাড়া করে এমন উলঙ্গ নাচের আয়োজন করেন। তার সাথেও ফোনে কথা বললে এমন আয়োজনের কথা স্বীকার করেন। তাকে এই প্রতিবেদক অফার দেন আমরা চারজন দেখতে যাবো টাকা কমাতে হবে। মাসুদ বলেন- এসে ফোন দিয়েন আমি আপনার প্রতি সম্মান রেখে কিছু কম নিবো।
শেষে হোটেল সিয়েস্তার ম্যানেজার ইমরানের সঙ্গে কথা বললে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে ঘটনা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, অনেকে গভীর রাতে রুম চায় আমরা দিয়ে দেই। সেখানে তারা কি করলো সেটাতো আমরা দেখতে পারি না। এদিকে অনেকটা প্রকাশ্যে এমন অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনা করার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার এসোসিয়েশন বগুড়া জেলা কমিটি শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধন শেষে বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, শাজাহানপুর থানা এবং র্যাব-১২ কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার এসোসিয়েশন বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি আরমান হোসেন ডলারের নেতৃত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বগুড়া জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, মাহবুব জামান খান মিলন মোস্তফা আবু সালেক, রোকনুজ্জামান সাধারণ সম্পাদক আরমান হোসেন খোরশেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার এসএম আবু রায়হান, অনন্ত সেলিম, সাদ্দাম হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক সজল, মামুন, ইমরান তালুকদার নিপু, জাকির হোসেন, সহ-দপ্তর সম্পাদক, ইঞ্জিনিয়ার ইলিয়াস হোসেন সহ অর্থ-বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মিঠু, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রায়হান সিদ্দিক, কাহালু উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন শেখ, বগুড়া জেলা কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য মিনারুল ইসলাম, আব্দুল আলিম, দেলোয়ার হোসেন, আবু রায়হান, ডালিম, রুবেল প্রমুখ। বগুড়ার সহকারী পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার মানবজমিনকে বলেন, আমরা স্মারকলিপি পেয়েছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্রঃ প্রতীক ওমর, মানবজমিন
CBNA24 অনলাইন ডেস্ক (এফএইচ/বিডি)
আমাদের ফেসবুক পেজে যেতে ক্লিক করুন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে যেতে ক্লিক করুন