ড. ইউনূসের সাথে মঞ্চে ওঠা কে এই আলোচিত তরুণ?
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ (সিজিআই) লিডারস স্টেজ’ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে তিনজন তরুণকে মঞ্চে ডেকে নিয়েছিলেন, তাদের একজনের পরিচয় সম্পর্কে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ওই ব্যক্তি সবার ‘অপরিচিত’ এবং গণআন্দোলনের অংশ ছিলেন না, এমন অভিযোগে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
নিউইয়র্কে ওই অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণআন্দোলনে ছাত্র-জনতার ভূমিকা নিয়ে আলাপের এক পর্যায়ে তিনজন তরুণকে মঞ্চে ডেকে, তাদেরকে গণআন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী হিসেবে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।
মঞ্চে যাদের ডাকা হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা তিথি এবং তৃতীয় তরুণ।
সামজিক মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টে জানা যাচ্ছে, ওই তরুণের নাম জাহিন রোহান রাজিন এবং তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কেউ নন।
এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক আর আলোচনা-সমালোচনার প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, সিজিআইয়ের অনুষ্ঠানে মঞ্চে উঠে পড়া ওই ব্যক্তি ‘অনুপ্রবেশকারী’ এবং ‘অসৎ লোক’। তার এ অনুপ্রবেশ নাশকতার অংশ।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ওই ব্যক্তি তার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সিজিআই ইভেন্টে যোগ দিয়েছেন। আমরাসহ ডেলিগেটরা তার উপস্থিতি ও উদ্দেশ্য জানতাম না। এমনকি সে ডেলিগেটদের কারও সঙ্গে যোগাযোগও করেনি।
তিনি লিখেছেন, স্যার আমাদের মঞ্চে ডাকলে হুড়মুড় করে আমাদের আগে মঞ্চের দিকে তিনি (আলোচিত ব্যক্তি) দৌড়ে যান। তখন আমি তাকে মঞ্চে ওঠা থেকে ঠেকাতে পারিনি, যদিও আমি সন্দিহান ছিলাম।
বিশ্বনেতা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সামনে আমি তখন অসহায় ছিলাম। মনে হচ্ছে, এটি ছিল ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর পূর্বপরিকল্পিত কাজ।
ফেসবুক পোস্টে মাহফুজ আলম আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দ, সমন্বয়কারী ও যোদ্ধাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।
ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও সতর্ক থাকবেন বলেও ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন মাহফুজ আলম।
প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন শায়ের ফেইসবুকে ওই তরুণের পরিচয় দিয়ে লিখেছেন, আওয়ামী সমর্থক ব্যবসায়ী রবিনটেক্স গ্রুপের মালিক, আবুল খায়ের মো. সাখাওয়াতের ছেলে জাহিন রোহান রাজিনকে গতকাল (২৫ সেপ্টেম্বর) ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব দরবারে সমন্বয়ক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় বেশ অবাকই হয়েছিলাম। হাজারের বেশি প্রাণের বিনিময়ে যে স্বৈরাচারকে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা ঝেটিয়ে বিদায় করলো, সেই স্বৈরাচার সমর্থক এবং ওই দলের ডোনার ব্যক্তির সন্তানকে সমন্বয়ক হিসেবে স্টেজে তোলার আসল মাজেজাটা কী?
ফেসবুকে জাহিনের একাউন্টের তথ্য বলছে, তিনি হাইড্রোকুইয়ো প্লাস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
মঞ্চে ওঠার ব্যাখ্যায় জাহিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ওই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ আমি পেয়েছিলাম সিজিআই ফেলো হিসাবে। যখন ড. ইউনূস ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে ডাকলেন, তখন আমি দর্শকসারি থেকে করতালি দিচ্ছিলাম। আমার পাশে বসেছিলেন দুই বিদেশি ভদ্রলোক। তারা আমাকে বললেন যে- তুমি তো বাংলাদেশি তরুণ, তুমিও যাও। তাই আমিও কিছু না ভেবেই স্টেজে উঠে গেছি মাহফুজ ভাইদের পেছন পেছন।
জাহিন আরও বলেন, আমি ২০২১ সালের ইউনূস অ্যান্ড ইয়ুথ ফেলো। আমার প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকুইয়ো প্লাসের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছিলাম। নিউ ইয়র্কে সিজিআইয়ের অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস আসবেন শুনে আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম যে তার কাছাকাছি যাওয়ার একটা সুযোগ হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় আমি দেশেই ছিলাম। আমি নিজেই জেন-জি। সুতরাং এই আন্দোলন সমর্থন না করার প্রশ্নই আসে না।
সূত্র: বিবিসি বাংলা, ডেইলি স্টার, বাংলাদেশ জার্নাল
-
এসএস/সিএ