দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে লাশ হয়ে ফিরলেন দাউদকান্দির শাকিল।। জীবিকার তাগিদে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়ে পোড়া লাশ হয়ে ফিরলেন কুমিল্লার দাউদকান্দির উপজেলার শাকিল মিয়া। পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে দুই বছর আগে গিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। রবিবার ভোরে উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়নের পেন্নাই গ্রামে তার মরদেহ পৌঁছলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
ছেলের বিকৃত মরদেহ দেখে রিকশাচালক বাবা হোসেন মিয়া, মা সামসুন নাহার ও স্ত্রী শান্তা বেগমের আহাজাড়িতে এলাকার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। বিকেলে পেন্নাই ঈদগাঁ মাঠে জানাজা শেষে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে স্বজনরা জানান, দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের নিকটবর্তী পামব্রিজ (কেতলেহং) এলাকায় গত সোমবার (২০ জানুয়ারি) আসরের নামাজের পর একদল সন্ত্রাসী শাকিলের দোকানে ঢুকে লুটপাট চালায়। প্রতিবাদ করলে তাকে বেধড়ক প্রহার করে শাকিলকে ভেতরে রেখেই পেট্রোল ঢেলে দোকানঘরটিতে আগুন ধরিয়ে তালা ঝুলিয়ে হামলাকারীরা চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন শাকিলকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। বুধবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাকিলের মৃত্যু হয়।
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) ভোরে শাকিলের মরদেহ পেন্নাই গ্রামে পৌঁছলে গোটা বাড়িই শোকে স্তব্দ দেখা যায়। দেড় বছরের মেয়ে সিনথিয়াকে কোলে নিয়ে শাকিলের স্ত্রী শান্তা আক্তার বিলাপ করছেন। নিহতের বাবা হোসেন মিয়া কথা বলার চেষ্টা করলে কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। মা সামছুন নাহার, একমাত্র বোন লিপি আক্তার অঝোরে কাঁদছেন।
শান্তা আক্তারের প্রশ্ন, কে দেখবে তার একমাত্র মেয়েকে? দেশে থাকতে বিআরটিসি বাসের সুপারভাইজার হিসেবে চাকরি করে যা পেতেন, তা দিয়েই সংসার চলত। এরপর শান্তা একটু থামেন। আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্বজনেরা তাকে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
শাকিলের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তাদের কোনো জায়গাজমি নেই। পারিবারিক আয় ও স্বজনদের দয়ায় ৭ লাখ টাকায় দুই বছর আগে শাকিল দক্ষিণ আফ্রিকা যান। সেখানে পৌঁছার পর দোকান কেনার জন্য সুদ আর বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ তুলে আরো ৯ লাখ টাকা আবার পাঠাতে হয়। হোসেন মিয়ার চার সন্তানের মধ্যে শাকিল সবার ছোট। শাকিলের বড় ভাই সোহেল মালয়েশিয়ায় এবং মেজো ভাই শরীফ মিয়া দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়ে খেয়ে না-খেয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। মা-বাবা আর স্ত্রী ভেবেছিলেন বিদেশে ব্যবসা করে শাকিল তাদের অভাব-অনটন দূর করবেন।
শাকিলের বাবা হোসেন মিয়া বলেন, রিকশা চালিয়ে ছেলে মেয়েদের বড় করেছি। এখন আর রিকশা চালাতে পারি না। ‘যখন যে কাজ পাই, সে কাজ করি। তার উপরে ঋণের বোঝা। কী করব বুঝতে পারছি না!
শাকিলের মা সামছুন নাহার বলেন, সাউথ আফ্রিকায় দোকান কিনার জন্য এনজিও থেকে কিস্তিতে দুই লাখ টাকা এবং স্বজনদের কাছ থেকে সাত লাখ টাকা ধার করে পাঠাই। এখন আমার সব হয়ে গেছে।
শাকিলের স্ত্রী শান্তা আক্তার বলেন, মৃত্যুর এক ঘণ্টা আগে তার সঙ্গে ফোনে কথা হয় শাকিলের। তিনি বলেছিলেন, তার ব্যবসা করতে খুবই ভয় লাগে। ঋণ শোধ হয়ে গেলে দেশে ফিরে আসবেন। আবার বাসের সুপারভাইজারের চাকরিতে যোগ দেবেন। ফিরে আসছেন ঠিকই, কিন্তু পোড়া লাশ হয়ে।