প্রবাসের সংবাদ ফিচার্ড

দক্ষিণ কোরিয়া কেন বাংলাদেশি শ্রমীকদের এক নম্বর পছন্দের গন্তব্য?

দক্ষিণ-কোরিয়া

দক্ষিণ কোরিয়া কেন বাংলাদেশি শ্রমীকদের এক নম্বর পছন্দের গন্তব্য?

বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ জেলার তৌসিফ শাহারিয়ার দ্বীন ইসলাম গত চার বছর ধরে দক্ষিণ কোরিয়ায় একজন অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। নিজের জীবন এবং আয়-উপার্জনে তিনি বেশ খুশি।

তিনি বলেন ” বেতনের দিক থেকে এই দেশ সবচেয়ে এগিয়ে। জীবনমান এখানে অনেক উন্নত। আমার প্রতিমাসের বেতন এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা। আর ওভারটাইম করলে আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় হয় মাসে। এই দেশে কাজ করলে অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক ভালো পরিস্থিতিতে থাকা যায়। দেশে রেমিটেন্স পাঠানো যায়”।

দ্বীন ইসলামের মতো আরও শত শত বাংলাদেশি এখন অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে আগ্রহী। মধ্যপ্রাচ্য বা মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে যখন বাংলাদেশিরা নানা ধরণের প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে, তখন সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া এক আদর্শ শ্রমবাজার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশের সামনে।

বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন দক্ষিণ কোরিয়া এখন অনেকের পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠছে।

সরকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের কর্মীরা যেসব দেশে কাজ করছেন তার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া সেরা।

দক্ষিণ কোরিয়া যেতে যা করতে হবেঃ

কেউ যদি দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজের উদ্দেশ্যে যেতে চান তাহলে বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড বা বোয়েসেলের ওয়েবসাইটে নাম নিবন্ধন করতে হয়। এরপর লটারির মাধ্যমে আগ্রহীদের মধ্য থেকে কর্মী বাছাই করা হয়। যারা লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হন, তাদেরকে কোরিয়ান ভাষা শিখতে হয়।

সাধারণত প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল মাসে নিবন্ধন শুরু হয়। লটারিতে নাম উঠলে ভাষা শেখার জন্য গড়ে প্রায় দুই মাস সময় পান প্রার্থীরা। এরপর ভাষা পরীক্ষায় বসতে হয়। দুশো নম্বরের এই পরীক্ষার মধ্যে রিডিং টেস্টের জন্য থাকে একশো নম্বর, আর লিসেনিং টেস্টের জন্য একশো নম্বর। ভাষা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে কাজের দক্ষতার পরীক্ষা বা স্কিল টেস্ট নেয়া হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিরাই প্রার্থীদের কাজ করার দক্ষতা যাচাই করেন। এরপর প্রার্থীর নিজ জেলায় সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা দিতে হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে নিজ থানা থেকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়।

কোন খাতে কর্মী নেয়া হয়

কর্মকর্তারা বলছেন, কেউ দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী হিসেবে যাওয়ার জন্য সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও তাদেরকে চাকুরি দেয়ার ক্ষমতা বোয়েসেলের নেই। দক্ষিণ কোরিয়ার কোন ক্ষুদ্র বা মাঝারি প্রতিষ্ঠান যখন তাদের প্রতিষ্ঠানে বাইরে থেকে কর্মী এনে নিয়োগ দিতে চান, তখন তাদেরকে সেদেশের শ্রম এবং কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়। মন্ত্রণালয় তখন চাহিদা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেয়। বাৎসরিক কোটা অনুযায়ী চাহিদার ভিত্তিতে তখন দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জব রোস্টার থেকে লেবার কন্ট্রাক্ট দেয়া হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার চাকরিদাতা হলো সেখানকার ছোট ছোট বেসরকারি কোম্পানি। কোন কোম্পানি কোন কর্মীকে জব অফার প্রদান করলেই কেবল তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় চাকরি পান।

ভাষার উপর বেশি জোর দেয়া হয়

দক্ষিণ কোরিয়ার ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে আছেন ম্যাক্সিম চৌধুরি। তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য অবশ্যই ভালো দেশ। তবে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এখানে ভাষার উপর বেশি জোর দেয়া হয়।

তিনি বলেন ” আগের তুলনায় দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজের পরিবেশ ভালো। একজন বেতন-ওভারটাইম মিলিয়ে দুই লাখের মত আয় করতে পারেন। তবে যারা এখানে আসেন তারা বইয়ের ভাষা শিখে আসেন। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে দেখা যায় এখানকার প্রচলিত ভাষায় তারা সেভাবে কথা বলতে পারেন না। তাই ভাষাটা আরো ভালো করে রপ্ত করে আসলে সমস্যা কম হয়।”

দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কত খরচ হয়?

তৌসিফ শাহারিয়ার দ্বীন ইসলাম চার বছর আগে যখন দক্ষিণ কোরিয়াতে যান তখন তার খরচ হয়েছিল দুই লাখ টাকা।

এর মধ্যে এক লক্ষ জামানত রাখতে হয়েছিল বোয়েসেলের কাছে। এই এক লক্ষ টাকা ফেরত যোগ্য। কন্ট্রাক্ট শেষে বাংলাদেশে গিয়ে বোয়েসেলের কাছে আবেদন করলে টাকা ফেরত পাওয়া যায়। বাকী এক লাখ টাকা বিমান ভাড়া এবং অন্যান্য বিষয়ে খরচ হয়েছিল।

বোয়েসেলের কাছে জমা রাখা জামানতের পরিমাণ অবশ্য এখন বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হয়েছে। কেউ যদি দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে কন্ট্রাক্ট শেষ হওয়ার আগেই কোম্পানি পরিবর্তন করেন, তাহলে আবার এই জামানতের অর্থ ফেরত পাবেন না।

সুত্রঃ বিবিসি বাংলা

সংবাদটি শেয়ার করুন