ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

দুটি অভুক্ত প্রাণের একটি বাস্তব ছোট গল্প ||| আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস

গল্পটি কিছুটা আঞ্চলিক ভাষায় রচিত ফলে শব্দ কিংবা বানান দেখলে অবাক লাগতে পারে- সম্পাদক

দুটি অভুক্ত প্রাণের একটি বাস্তব ছোট গল্প ||| আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস

পঞ্চাশ বছরেরও বেশি হবে জামালের বাপ মরা। মুড়োলি শাসন ব্যবস্থা তখন চালু ছিল দেশে।বাপের মৃত্যুটা তবু জামাল আজও ভুলতে পারেনি।
কেননা,জামাল তার বাপকে স্বচক্ষে এবং খুব কাছে থেকে মরতে দেখেছে।খুব কষ্ট পেয়ে তার বাপ মরেছে।মরার সময় কতবার যে একটু খানি পানি চেয়েছিল তার ইয়ত্তা নেই।তবু একটু খানি পানি সে পায়নি,কেউ দেয়নি।
জামাল তখন শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পদার্পণ করেছিল। তার মা রিজিয়া বিবি এইসময় ইহলোক ছেড়ে চলে গেলে তার বাপকেই সব দিক সামলাতে হতো। রান্না করে খাওয়ানো থেকে শুরু করে আরও কত কিছু! ফলে তার বাপের খুব কষ্ট হতো।তাই,ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে রোজ রাতে কাঁদত।বাপের কষ্ট আর কাঁদা দেখে জামালের একদমই ভালো লাগত না,তারও খুব কষ্ট হতো।আর তাই,তার বাপকে জামাল একদিন বলেছিল,”বাপ,তুমি আবার বিহ‍্যা করো।না হলে তুমি আরাম পাছো না,তুমার খুব কষ্ট হোচে।আবার বিহ‍্যা করলে লতুন মা আইস‍্যা আমাধের সব কাজ কইর‍্যা দিবে।তুমি ও আমি দু’জনাতেই ত‍খুন আরাম পাবো।গড়হ‍্যান‍্যা খাবারডা তো খেতি পাবো।তাই বুলছি, তুমি আবার বিহ‍্যা করো বাপ,তুমি আবার বিহ‍্যা করো।”
জামালের বাপ আজাদ আলি তার উত্তরে তখন বলেছিল,বিহ‍্যা আর করবে না সে,হাজার কষ্ট হলেও না।
মাথায় ছোট এবং দেখতে কালো ছিল আজাদ আলি।কিন্তু সে সৎ ছিল।মিথ্যা কথা বলত না,কোনো মানুষের কোনো অন‍্যায় কাজ করত না।দিন মজুরের কাজ করে যা উপার্জন হতো তাই দিয়েই সংসার চালাত এবং সৎ ভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করত।ধর্ম পালন না করলেও কোনো দিন ধর্ম বিরুদ্ধ পাপ কাজের সাথে যুক্ত ছিল না।বরং পাপ কাজে তার ঘৃণা ছিল।সেই জন্য সে মাঠে জমির আল দিয়ে যখন হাঁটত খুব সন্তর্পণে হাঁটত।যাতে কোনো ফসলে পা পড়ে ফসল নষ্ট হয়ে না যায়।ফসল নষ্ট করা তার কাছে সব চাইতে বড়ো পাপের কাজ ছিল।কারণ,ফসল তৈরি তো আর এমনি এমনি হয় না। ফসল তৈরি করতে চাষিদের খুব কষ্ট আর মেহনত করতে হয়।পয়সাও খরচ হয়। তাছাড়া চাষিদের গা থেকে প্রচুর ঘাম ঝরে।
জামাল বলেছিল,”বিহ‍্যা করব‍্যা না ক‍্যানে,বাপ?আমি তো তুমাকে বিহ‍্যা করতিই বুলছি। নিষেধ করলে না হয় করত‍্যা না।”
“তুই নিষেধ না করলে কী হবে?আমি তাও বিহ‍্যা করবো না।কারোণ কী জানিস,আবার বিহ‍্যা কইর‍্যা আমি আর বো পুষতি পারবো না।”
“তাহিলে তুমি বিহ‍্যা করব‍্যা না বুলছ!”
“হ‍্যাঁ,আমি আর বিহ‍্যা করবো না।এ্যাখুন কুনু কাম কাজ নাই দেকছিস ন‍্যা?তাহিলে বিহ‍্যা কইর‍্যা তুর লতুন মাকে আমি পুষবো কী কইর‍্যা?তাই বুলছি,তুই আমাকে আর বিহ‍্যা করতি বুলিস ন‍্যা বাপ,কুনুদিন বুলিস ন‍্যা।”
“ঠিক আছে বাপ,কুনুদিন বুলবো না।…”বলতে বলতে জামাল হঠাৎ পেট ধরে কাঁদতে লেগেছিল ও গড়াগড়ি গিয়েছিল,”আমি আর পারছি ন‍্যা বাপ,আমি আর পারছি ন‍্যা।”
জামালের কাঁদা আর গড়াগড়ি যাওয়া দেখে আজাদ খুব ব‍্যস্ত হয়ে উঠেছিল,”তুর আবার হঠাক কী হলো বাপ,তুর আবার হঠাক কী হলো!…”
“খিদ‍্যার জ্বালায় আমার প‍্যাট জ্বইল‍্যা গ‍্যালো বাপ,খিদ‍্যার জ্বলায় আমার প‍্যাট জ্বইল‍্যা গ‍্যালো!তুমি কিছু খেতি দ‍্যাও বাপ, তুমি কিছু খেতি দ‍্যাও!”
“কিন্তু কী খেতি দিব বাপ,ঘরে যে কুনু খাবার নাই।”
শুনে জামাল আরও কেঁদেছিল,”কালও তো তুমি বুলেছিলে,ঘরে কুনু খাবার নাই। আজও বুলছ নাই?তাহিলে আমি এ্যাখুন কী খাইয়‍্যা থাকবো!”
উত্তরে আজাদ বলেছিল,”ঘরে এ্যাখুন পানি ছাড়া কুনু খাবারই নাই।সুতরাং তুই পানি খাইয়‍্যাই থাক,আমি য‍্যামুন আছি।”
“কাল থিক‍্যাই তো পানি খাইয়‍্যা আছি। আজও পানি খাইয়‍্যা থাকতি বুলছ!”
“হ‍্যাঁ,আজও থাক।যতোদিন না খাবারের কুনু ব‍্যবোস্তা করতি পারি ততোদিন থাক।”
“কিন্তু শুদু পানি খাইয়‍্যা আমি যে থাকতি পারছি ন‍্যা বাপ,তুমি খাবারের কুনু ব‍্যবোস্তা করো।যিদি না পারো,দ‍্যাশে কাহুরির বাড়ি আমাকে লিইয়‍্যা চলো,খাবার চাইহ‍্যা দ‍্যাও!”
আজাদ তখন জামালকে সাথে করে রহমানের কাছে এসেছিল,”তুমার কাছে একটুকুন আনু,রহমান ভাই।”
“কী,বুল!”
“একটুকুন উপকার করব‍্যা?”
“কী উপকার করতি হবে,বুল!”
আজাদ বলেছিল,”কাল থিক্যা বাড়িতে কুনু খাবার হয়নি,রহমান ভাই।আমি শুদু পানি খাইয়‍্যা থাকলিও ছেল‍্যাডা থাকচে না।তাই, ছেল‍্যাডাকে তুমি দুইট‍্যা কিছু খেতি দ‍্যাও!” জামাল অনুরোধ করেছিল।কারণ,রহমান একটা গৃহস্থ লোক ছিল।তার বাড়িতে খাবারের কোনোদিন অভাব হয়নি।
কিন্তু রহমান বলেছিল,”বাড়িতে যে কুনু খাবার নাই রে এ্যাখুন,কী খেতি দিব!”
শুনে আজাদ তাজ্জব হয়েছিল,”তুমার বাড়িতে কুনু খাবার নাই!দ‍্যাশে তাহিলে আর কার বাড়িতে খাবার থাকবে?”
“হ‍্যাঁ রে আজাদ,সত্যি বুলছি।কারোণ,এ বচ্ছর আমারই খাবারের খুব অভাব চলছে। তিনব‍্যারের জায়গায় এ বচ্ছর আমরাই একব‍্যার-দু’ব‍্যার কইর‍্যা খাইয়‍্যা থাকচি। খরায় এ বচ্ছর ফসল ভালো হয়নি না!”
আজাদ এর কী উত্তর দেবে ভেবে না পেয়ে মন খারাপ করে উঠে পড়েছিল।তা দেখে রহমান বলেছিল,”কী রে উইঠ‍্যা পড়লি ক‍্যানে?আর বসবি ন‍্যা?”
“বসনু তো,এব‍্যার বাড়ি যাই।”
“বাড়ি যাস,আর একটুকুন বস।”
“কিছু বুলব‍্যা?”
“হ‍্যাঁ,বস।”
আজাদ বসেছিল,”কী বুলব‍্যা,বুলো।”
খুব নিচু গলায় আজাদকে তখন রহমান  বলেছিল,”জহুরের কাঁঠাল বাগানে আজ তুরা এ্যাকবার যেতি পারবি?”
“কখুন?”
“এশার নমাজের পর।”
“ক‍্যানে?”
“বাগানে পোচুর কাঁঠাল ধইর‍্যা আছে। যাইয়‍্যা দুইট‍্যা কাঁঠাল তুরা পাইড়‍্যা লিইয়‍্যা  চইল‍্যা আসবি।আইস‍্যা দুই বাপ-ব‍্যাটা প‍্যাট ভইর‍্যা খাবি।দুইট‍্যা কাঁঠালে তুধের দুই বাপ-ব‍্যাটার দু-তিন দিন চইল‍্যা যাবে।”
“কিন্তু আমি যে কাহুরির কুনু জিনিস চুরি করি ন‍্যা,রহমান ভাই।খেতি না পালেও না। তুমি তো সেডা ভালো কইর‍্যাই জানো।জেনে শুনেও তুমি আমাকে—-”
“আরে ছি-ছি!তুই তো আর কাহুরির ঘরে ঢুইক‍্যা সিঁধ কাইট‍্যা চুরি করছিস ন‍্যা।করলে সেডা পাপ হতো।এ্যামুনে এডা কুনু পাপ বা চুরির মধ্যেই পড়ে না।আর তা ছাড়া তুর এ্যাখুন উসব লিইয়‍্যা ভাববার সুমায় নাই।তুই এ্যাখুন উইপ‍্যাস আছিস।যে কুনু রুপায়ে তুর এ্যাখুন খাবার জোগাড় কইর‍্যা খাইয়‍্যা বাঁইচ‍্যা থাকতি হবে।আমি কী বুলনু,বুঝতি পারলি ন‍্যা?”
“পারনু।কিন্তু দেইখ‍্যা ফেললে কী হবে?”
“কে দেইখ‍্যা ফেলবে?”
“যার বাগান সে,জহুর।”
“তুর কি মাথা টাথা কিছু খারাপ হইয়‍্যাচে? জহুর রেতে কুনু দিন বাগানে যায়?”
“তা যায় না,তবু যিদি—- বুলা তো যায়না!”
রহমান তখন বলেছিল,”তুই অতো চিন্তা করছিস ক‍্যানে?আমি আছি না!যিদি দেইখ্যা ফ‍্যালে তো তুই শুদু আমার নাম করবি। বুলবি,তুই কিছু জানিস ন‍্যা,যা জানে রহমান জানে।অর্থাৎ আমি।হ্যাঁ,শুদু আমার নাম করবি।ব‍্যস,তাহিলেই তুকে ছাইড়্যা দিবে। আর হ‍্যাঁ,পারলে আমার লাইগ‍্যাও একটো কাঁঠাল পাইড়‍্যা আনিস।”
“যিদি ছাইড়‍্যা না দ‍্যায়?”
“আমি লিজে যাইয়‍্যা তুধের ছাইড়‍্যা আনবো।তাহিলে তো হবে?”
রহমানের সাহস পেয়ে এশার নামাজ (রাত আটটায় যে নামাজ হয়)বাদে তারা এবার বাগানে গিয়েছিল।মাঠের মধ্যে বাগান।বগলে একটা বস্তা আর ছোট একটা কাস্তে নিয়ে। বস্তাটা নিয়েছিল কাঁঠাল পেড়ে ভরে আনার জন্য।আর কাস্তেটা নিয়েছিল কাঁঠাল পাড়ার জন্য।কিন্তু যাওয়ার সময় সফি তাদের দেখে ফেলে বলেছিল,”কী গো আজাদ ভাই,এ্যাতো রেতে দুই বাপ-ব্যাটা কুনঠে চলল্যা?”সফি,জহুরের বাড়ির চাকর।
“একটুকুন মাঠে যাবো।”
“এ্যাখুন মাঠে!”
“হ‍্যাঁ।”
“এ্যাখুন মাঠে ক‍্যানে?”
“একটুকুন দরকার আছে।”
“কী দরকার আছে?”
“আছে।”
“ঠিক আছে,যাও তাহিলে।দরকার সাইর‍্যা আসো গ‍্যা।মাঠে তো এ্যাখুন কেহু নাই। সুতরাং দরকার সারা তুমাধের ভালোই হবে।” সফি এই কথা বলে চলে গেলে জামাল তার বাপকে বলেছিল,”বাপ,তুমি আজ বাড়ি ফিইর‍্যা চলো।”
“বাড়ি ফিইর‍্যা যাবো!”
“হ্যাঁ,বাড়ি ফিইর‍্যা চলো।”
“কিন্তু বাড়ি ফিইর‍্যা যাবো ক‍্যানে,বুলবি তো?”
“বাড়ি ফিইর‍্যা যাতি বুলছি কারোণ,সফি আমাধের দেইখ্যা ফেলল না!এ্যাখুন উ যিদি অর মালিকের বাড়ি যাইয়‍্যা বুলে দ‍্যায়! তাহিলে অর মালিক আইস‍্যা আমাধের ধইর‍্যা ফেলবে না!তাই,আজ আমাধের বাড়ি ফিইর‍্যা যাওয়াই ভালো।”
“কিন্তু উ জানবে কী কইর‍্যা?আমরা তো অকে আমাধের ব‍্যাপারে কিছুই বুলি নি।”
“না বুললেও উ ঠিকই ধইর‍্যা লিইয়‍্যাছে। অর শ‍্যাষের কথাডা শুইন‍্যা আমি সেডা ঠিক বুঝতি পাইর‍্যাছি।”
“না,তবু বাড়ি ফিইর‍্যা যাবোনা।বাড়ি ফিইর‍্যা গ‍্যালেই তো আমাধের আবার পানি খাইয়‍্যা থাকতি হবে।”
“থাকবো।”
“না,থাকবো না।কারোণ,শুদু পানি খাইয়‍্যা থাইক‍্যা থাইক্যা প‍্যাট খুব জ্বালা পুড়া করছে। তার থিক‍্যা কাঁঠাল পাইড়‍্যা লিইয়‍্যা যাইয়‍্যা রাইন্ধ‍্যা খাবো।”
“কিন্তু ধরা পইড়‍্যা গ‍্যালে কী হবে?”
“যা হয় হবে।মারতে মারতে না হয় মাইর‍্যা ফেলবে।এ্যার বেশি কিছু তো করবেনা। এভাবে বাঁইচ্যা থাকার চাইতে মইর‍্যা যাওয়া ঢের ভালো।”বলে আজাদ বাগানে চলে গিয়ে এক লাফ মেরে একটা গাছে উঠে পড়ে পরপর তিনটে কাঁঠাল পেড়ে ফেলেছিল। কাঁঠাল গুলো বেশ ওজনদার ছিল বলে মাটিতে পড়ার সময় “ধপ ধপ” করে শব্দ হয়েছিল।আজাদ এরপর গাছ থেকে নেমে এসে কাঁঠাল গুলো তাড়াতাড়ি করে বস্তায় ভরে ফেলেছিল।তাদের জন্য দুটো আর রহমানের জন্য একটা কাঁঠাল পেড়েছিল‌। তারপর বাড়ি চলে আসার জন্য বস্তাটা যেই ধরে মাথায় তুলেছিল অমনি জহুররা এসে তাদের ধরে ফেলেছিল,”এই হারামজাদারা,আমার গাছের কাঁঠাল পাড়লি ক‍্যানে বুল!” সঙ্গে সফি ও জহুরের ভাই মিলন ছিল।
আজাদ বলেছিল,”ভুল হইয়‍্যা গেলছে।আর কুনুদিন কাঁঠাল পাড়ব না।আমাধের এব‍্যারকার মুতোন ছাইড়‍্যা দ‍্যান,হুজুর!”
সফি ও মিলন তাদের ছাড়তে নিষেধ করেছিল,”না হুজুর,ছাড়বেন না।ছাড়লে পরে এ্যারা আবার কাঁঠাল পাড়বে।চোরের কুনু কথা বিশ্ব‍্যাস করতি নাই।”
“না না,আর কুনুদিন কাঁঠাল পাড়ব না।এই কান ধরচি।”আজাদ কান ধরেছিল।
“পাড়বি ন‍্যা তো পাড়লি যে শালা!”বলে জহুর বলেছিল,”শালা,তুর উপোর আমার রাগ আছে।গতবার তুই আমার কাজ কইর‍্যা দিবি বুলে কাজ কইর‍্যা দিস নি।বেশি খরচের আশায় অন‍্য লোকের কাজে চইল‍্যা গেইলছিলি।আর আমি তুকে ছাইড়‍্যা দিব না?কক্ষনো ছাড়ব না।”
“বেশি খরচের আশায় লয় হুজুর,আসলে আপনি কাজে বুলার আগেই উ আমাকে কাজে বুলেছিল এবং আমি অকে কথাও দিইয়‍্যাছিনু।তাই,আপনার কাজে না যাইয়‍্যা অর কাজে গেইলছিনু।”
“গেইলছিলি ভালো কইর‍্যাছিলি।এ্যাখুন আমার গাছের কাঁঠাল পাড়লি ক‍্যানে তাই বুল!”
আজাদ রহমানের শেখানো বুলিটাই তখন বলেছিল,”আমি কিছু জানি ন‍্যা হুজুর,যা জানে রহমান জানে।বিশ্ব‍্যাস না হয়,বাড়ি যাইয়‍্যা অকে শুইধ‍্যা দ‍্যাখেন!”
রাগে গর্জে উঠে জহুর তখন বলেছিল,”কী বুললি হারামজাদা,লিজে কাঁঠাল চুরি কইর‍্যা রহমানের দোষ দ‍্যাওয়া!শালা,আমি তুকে আজ মারতে মারতে মাইর‍্যাই ফেলব।”বলে অনবরত কিল,ঘুষি মারতে মারতে আজাদদের তারা ধরে এনে বাড়ির বৈঠকে থামের সঙ্গে সারারাত বেঁধে রেখে দিয়ে পরের দিন সকাল বেলায় মজলিশ ডেকেছিল।মজলিশের বিচারক হিসাবে জহুরের মামাতো ভাই রুস্তম সেখ ছিল।
আজাদকে সে জিজ্ঞেস করেছিল,”তুই কি সত্যি সত্যি কাঁঠাল পাইড়‍্যাছিস,আজাদ? সত্যি কথা বুল,তাহিলে আমরা তুকে ছাইড়‍্যা দিব।”
আজাদ বলেছিল,”আমার খুব তিইষ‍্যা পাইয়‍্যাছে হুজুর,আগে আমাকে একটুকুন পানি খেতি দিন!”
রুস্তম সেখ বলেছিল,”পানি পরে খাবি,আগে আমার পোশ্নের উত্তুর দে।সব লোক তুর উত্তুরের লাইগ্যা বইস‍্যা অপেক্ষা করছে।”
আজাদ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল,”জি হুজুর,পাইড়‍্যাছি।”
অমনি রাগে লাল হয়ে রুস্তম সেখ বলেছিল,”তা পাড়লি যে শালা,বাগান কি তুর বাপের?তুর মরা বাপ কি বাগান লাইগ্যা রাইখ্যা গেলছে,বুল শালা!” কঠিন ধমক মেরেছিল।
আজাদ বলেছিল,”খিদ‍্যার জ্বালা সইতি না পাইর‍্যা পাইড়‍্যাছি,হুজুর!বাড়িতে দু’দিন কুনু খাবার হয়নি!তা ছাড়া আমি লিজে থাইক‍্যা পাড়িনি হুজুর,রহমানের কথায় পাইড়‍্যাছি।”
“রহমানের কথায় পাইড়‍্যাছিস মানে!”
“রহমান পাড়তে বুলেছিল তাই পাইড়‍্যাছি।”
“কী রকম পাড়তে বুলেছিল?”
“কাল বিক্ক‍্যালে আমি রহমানের কাছে গেইলছিনু।যাইয়‍্যা কিছু খাবার চাহালে সে আমাকে বুলেছিল যে,এ বচ্ছর তারই  খাবারের খুব অভাব।তিনব‍্যারের জায়গায় এ বচ্ছর তারাই একব‍্যার-দু’ব‍্যার কইর‍্যা খাইয়‍্যা থাকচে।সুতরাং,সে আমাকে কুনু খাবার দিতি না পাইর‍্যা একটো পরামর্শ দিয়েছিল।”
“কী পরামর্শ দিয়েছিল?”
“জহুরের বাগান থিক‍্যা আমাকে দুইট‍্যা কাঁঠাল পাইড়‍্যা আইন‍্যা খেতি বুলেছিল এবং ধরা পইড়‍্যা গ‍্যালে তার নাম করতি বুলেছিল এবং অর লাইগ‍্যাও একটো কাঁঠাল পাইড়‍্যা আনতি বুলেছিল।সুতরাং,আমি শুদু আমার এ্যাকার লাইগ‍্যাই কাঁঠাল পাড়িনি হুজুর,অর লাইগ‍্যাও একটো কাঁঠাল পাইড়‍্যাছি।জি,হুজুর!”
“মিছে কথা!রহমানের মুতোন মানুষ এ্যামুন কথা কাহুকে বুলতেই পারেনা।তুই অযথা তার গায়ে—-”
“না হুজুর,বিশ্ব‍্যাস না হয় রহমান ভাইকে আপনি শুইধ‍্যা দ‍্যাখেন না!আপনার পিছনেই তো বইস‍্যা আছে।”
রুস্তম সেখ তখন রহমানকে বলেছিল,”তুমি এ্যাকবার উইঠ‍্যা দাঁড়াও,রহমান।”
দীর্ঘদেহী রহমান উঠে দাঁড়িয়েছিল,”কী, বুলেন!”
“তুমি যে এ্যামুন কথা কাহুকে বুলতি পারোনা সেডা আমরা জানি।তবু তুমাকে জিজ্ঞ‍্যাস করছি,তুমি কি আজাদকে এই ধরনের কুনু কথা বুলেছ?”
“আশ্চর্য!আমি ক‍্যানে এই ধরনের কথা বুলতি যাবো অকে?আমার তো অর সাথে কুনু দ‍্যাখাই নাই।আসলে ধরা পইড়‍্যা যাইয়‍্যা উ এ‌্যাখুন লিজেকে বাঁচান‍্যার লাইগ‍্যা—–”
অমনি জহুর ও তার লোকজন ধরে আজাদকে মারতে লেগেছিল,”শালা,মিছে কথা বুলার জায়গা পাস নে না!লিজে কাঁঠাল চুরি কইর‍্যা পরের দোষ দ‍্যাওয়া!”
মারের চোটে আজাদ হাগা-মুতা করে ফেলে মারা গিয়েছিল।”পানি…পানি…পানি….” করে।
কিন্তু বাচ্চা ছেলে বলে জামালের গায়ে কেউ হাত দ‍্যায় নি তারা।তৌবা,প্রতিজ্ঞা আর থুতু চেটে নিয়ে তাকে ছেড়ে দিয়েছিল।বাপের মৃত‍্যুটা সুতরাং জামাল আজও ভুলতে পারেনি,আজও না।…


লেখকঃ আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস, মুর্শিদাবাদ। পশ্চিমবঙ্গ,ভারত।



 

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন