দেশে-বিদেশে আওয়ামীলীগে আর ঠাঁই নয় বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের
অমরেশ রায় ।। দেশে-বিদেশে আওয়ামীলীগে আর ঠাঁই নয় বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের । আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ ঠেকানোসহ বিতর্ক এড়াতে তৃণমূল কমিটি ও বিভাগীয় উপকমিটিসহ সব পর্যায়ের কমিটি গঠন প্রশ্নে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। এসব কমিটি পূর্ণাঙ্গকরণের ক্ষেত্রেও কোনো অবস্থায় অনুপ্রবেশকারী, বিতর্কিত ও দুর্নীতি-সন্ত্রাসসহ নানা অপকর্মে যুক্তদের ঠাঁই দেওয়া হবে না। ত্যাগী ও স্বচ্ছ-পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি সম্পন্ন নেতাকর্মীদের নিয়ে এসব কমিটি গঠন করা হবে।
এরই মধ্যে জমা হওয়া পূর্ণাঙ্গ কমিটিগুলোও যাচাই-বাছাই ছাড়া ঘোষণা করবে না ক্ষমতাসীন দলটি। যাচাই-বাছাইসহ দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারে আটটি বিভাগীয় টিম গঠন করা হয়েছে। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদককে সমন্বয়ক করে গঠিত এসব টিম শিগগিরই কাজ শুরু করবে।
গতকাল শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রুদ্ধদ্বার এ বৈঠকে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি পূর্ণাঙ্গকরণ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকেও কঠোর সতর্কবার্তা আসে। বিশেষ করে তৃণমূল কমিটিগুলোতে ‘মাই ম্যান’ নেতাদের জায়গা দেওয়া যাবে না এবং কোনো অবস্থায় ‘পকেট কমিটি’ করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন দলীয় প্রধান। বৈঠক সূত্র এসব তথ্য জানায়।
পরে বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বলেন, কোনো অবস্থায়ই দলের অভ্যন্তরে বিতর্কিতদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না। কমিটিগুলোতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হলেই নিজেদের লোক দিয়ে কমিটি গঠন করা যাবে না। সম্মেলনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীদের মধ্য থেকে যোগ্যতাসম্পন্ন ও পরীক্ষিত নেতাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নিয়ে আসতে হবে।
সাম্প্রতিককালে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী ও কমিটিগুলোতে ঠাঁই পাওয়া কিছু ব্যক্তির অপকর্মে দল ও সরকারকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। এসব অপকর্মের সঙ্গে দলের কিছু লোকজনের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আবার করোনা দুর্যোগকালে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেপ্তার মোহাম্মদ সাহেদসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দলের বিভিন্ন উপকমিটির নাম ব্যবহার করে অপকর্ম চালানোর অভিযোগ দল ও সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। এসব কারণে কমিটি পূর্ণাঙ্গকরণ প্রশ্নে এমন কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে বলে দলের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন।
দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের গতকালের বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ প্রস্তুতি নিয়েও গিয়েছিলেন। তবে দলীয় প্রধানের কঠোর বার্তার পর প্রসঙ্গটি আর আলোচনায় আসেনি।
বৈঠকে শেখ হাসিনা আরও বলেন, তৃণমূলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের বেলায় দুর্দিন ও দুঃসময়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের ঠাঁই দিতে হবে। কোনো নেতা বা এমপির প্রভাবে কমিটি গঠন করা যাবে না। আওয়ামী লীগকে যারা গড়ে তুলেছেন, সেই বর্ষীয়ান জননেতাদের যেন কোনোভাবে অসম্মান করা না হয়। প্রবীণ ও ত্যাগী নেতারা যেন কমিটি থেকে বাদ না পড়েন।
নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি চাই তৃণমূলে দলের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীসহ সমাজে যারা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষজন আছেন, তাদেরও দলে টানতে হবে। তোমরা কাজ করতে গিয়ে, কমিটি করতে গিয়ে কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে, তা আমাকে জানাবে। দলের সাধারণ সম্পাদককেও জানাবে।’
দলের নাম ব্যবহার করে কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না বলে সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মানুষ সুশাসন চায়। কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। কেউ অন্যায় করলে তাকেও কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
বৈঠকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় আসন্ন শীতে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা তুলে ধরে সেটা মোকাবিলার জন্য নেতাকর্মীদের এখন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে জনগণের পাশে থাকার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। কৃষকের ধান কাটাসহ করোনাকালে মানুষের পাশে থেকে সহযোগিতা করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, করোনার কারণে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে নেতাকর্মীদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে আট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে সাতজন রিপোর্ট তুলে ধরেন। এসব রিপোর্টে বিভিন্ন জেলা কমিটিতে নেতাদের জেষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন এবং নিজেদের লোকদের জায়গা দিতে ত্যাগী পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দেওয়ার বিষয়গুলো উঠে আসে। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য গোলাম কিবরিয়া চিনু, মেরিনা জাহান কবিতা প্রমুখ বৈঠকে বক্তব্য দেন।
ওবায়দুল কাদের যা বললেন: বৈঠক শেষে সংসদ ভবনের সরকারি বাসভবন থেকে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সাংগঠনিক কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দুর্দিনের ত্যাগী, পরীক্ষিত ও নিবেদিত নেতাকর্মীরা যাতে বাদ না পড়েন, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। তৃণমূলের সব কমিটি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গঠন করতে হবে। কারণ, সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন হলে মাঠের লোকরাই নেতা হবেন। সম্মেলন ছাড়া হলে লবিং-তদবিরের লোক নেতা হন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার মাধ্যমে দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দিতে চেয়েছিলেন। সে লক্ষ্য অর্জনে শেখ হাসিনার সরকার বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
আট বিভাগীয় টিমে যারা আছেন: বৈঠকে গঠিত আটটি বিভাগীয় টিমের সমন্বয়ক, সদস্য সচিব ও সদস্যদের নামের তালিকা দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে রংপুর বিভাগীয় টিমের সমন্বয়ক করা হয়েছে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপিকে। রাজশাহীর টিম সমন্বয়ক হয়েছেন ড. হাছান মাহমুদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। খুলনার টিম সমন্বয়ক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক। বরিশালের টিম সমন্বয়ক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন।
ঢাকা বিভাগের টিম সমন্বয়ক করা হয়েছে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপিকে। ময়মনসিংহের টিম সমন্বয়ক হয়েছেন ডা. দীপু মনি ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। সিলেটের টিম সমন্বয়ক হয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের টিম সমন্বয়ক করা হয়েছে মাহবুবউল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনকে। সব টিমেই দলের সভাপতিমণ্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্যদের যুক্ত করা হয়েছে।
সিএ/এসএস
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন