ধর্ম ও ধর্মীয় নেতাদের ওপর বিশ্বাস হারাচ্ছেন আরবরা ।। পুরো আরব বিশ্বে ধর্মীয় রাজনৈতিক দল এবং ধর্মীয় নেতাদের বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যে ধর্মীয় নেতা অথবা রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় আসতে সহায়তা করেছে; তাদের বিরুদ্ধেও সাধারণ মানুষের অবস্থান। এমনকি অনেকে ইসলাম ধর্ম ত্যাগও করছেন বলে মনে হচ্ছে।
সম্প্রতি ইরাকে বিক্ষোভকারীদের মুখে স্লোগান ছিলো ‘ধর্ম অথবা সম্প্রদায়ে না।’
একই সুর লেবাননের বিক্ষোভকারীদের মুখেও। তারাও বলছেন, ‘ইসলামে না, খ্রিস্টান ধর্মেও না; দেশের জন্য আন্দোলন করুন।’
আরব দেশগুলোতে সাধারণ জনগণের ওপর জরিপসংস্থা আরব ব্যারোমিটারের চালানো এক জরিপের নতুন তথ্যে এমন প্রবণতার চিত্র উঠে এসেছে। ধর্মীয় সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি মানুষের বিশ্বাস ব্যাপক মাত্রায় কমে এসেছে।
আরব বিশ্বের দেশগুলোতে চালানো ওই জরিপে দেখা গেছে, ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। ২০১৩ সালে ইরাকে চালানো জরিপে ৫১ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি তাদের আস্থা নেই। এই সংখ্যা বর্তমানে বেড়ে ৭৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
ইসলামি দলগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা কমে গেছে নাটকীয়ভাবে। ২০১৩ সালে ধর্মীয় দলগুলোর প্রতি ৩৫ শতাংশ মানুষের আস্থা ছিল না। ২০১৮ সালে একই প্রশ্নে আরও ২০ শতাংশ মানুষ ধর্মীয় দলগুলোর প্রতি তাদের আস্থা নেই বলে জানিয়েছে।
ধর্মীয় নেতাদের প্রতি মানুষের সন্দেহপ্রবণতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৩ সালে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৫১ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন, ধর্মীয় নেতাদের প্রতি তাদের ব্যাপক কিংবা মাঝারি মাত্রার বিশ্বাস আছে। কিন্তু গত বছর যখন একই প্রশ্ন করা হয়, তখন এই বিশ্বাসকারীদের সংখ্যা আরও কম পাওয়া যায়; ৫১ শতাংশ থেকে এই সংখ্যা ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে।
আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ধর্মীয় নেতারা প্রভাব বিস্তার করতে পারেন; এমন বিশ্বাসকারীদের সংখ্যাও কমে গেছে। আরব ব্যারোমিটারের কর্মকর্তা মাইকেল রবিনস বলেন, ধর্মীয় নেতারা প্রায়ই শাসকগোষ্ঠীর হয়ে কাজ করেন। এমন ধারণা থাকায় নাগরিকরা তাদেরকে বিশ্বাস করেন না।
২০১৩ সালে জরিপে অংশ নেয়া ৮ শতাংশ মানুষ নিজেদের ধার্মিক নন বলে পরিচয় দিলেও ২০১৮ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ শতাংশে। যা সামগ্রিকভাবে তিউনিশিয়ার অর্ধেক তরুণ, লিবিয়ার এক তৃতীয়াংশ তরুণ, আলজেরিয়ার এক চতুর্থাংশ তরুণ এবং মিসরের এক পঞ্চমাংশ তরুণের সমান।
২০১৩ সালে মাত্র ৩৯ শতাংশ ইরাকি ধার্মিক নন বলে বর্ণনা করলেও ২০১৮ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশে। ২০১৩ সালে ৩৩ শতাংশ ইরাকি শুক্রবার জুমআর নামাজে অংশ নেন না বলে জানালেও ২০১৮ সালে তা কমেছে প্রায় অর্ধেক।
সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট