ধোঁকায় বোকা সরল মানুষ
আব্দুল খালেক ফারুক, কুড়িগ্রাম ।। সাদা মনের মানুষ দেওয়ান নজরুল ইসলাম। ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। অবসরের পর ২০১৬ সালে পেনশন ও গ্র্যাচুইটির ৩৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন আল হামীম প্রাইভেট লিমিটেডে। কম্পানিটির চাতুরির আগুনে তাঁর সেই টাকা এখন পুরোটাই ছাই! নজরুলের করুণ কাহিনির যবনিকা এখানে নয়। তিলে তিলে জমানো তাঁর সঞ্চয় পিঁপড়ে তো খেয়েছেই, জীবনের শেষবেলায় এসে সংসারে গৃহদাহের চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়ায় স্ত্রী ছাড়েন ঘর। সব কিছু খুইয়ে নজরুল এখন ফতুর। রাজ্যের সব দুঃখ যেন বাসা বেঁধেছে তাঁর পাঁজরজুড়ে। শেষমেশ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর একটি মসজিদে ইমামতি করে কষ্টবুকে দিন কাটছে তাঁর।
কাঁথা সেলাইয়ের সুঁই-সুতার ফোঁড়ে ফোঁড়ে স্বপ্ন বুনতেন কুড়িগ্রামের উলিপুরের কামালখামার গ্রামের জোসনা বেগম। অন্ধ বিশ্বাসে কাঁথা বিক্রির টাকা তুলে দিতেন আল হামীমের কর্মীদের হাতে। আর ভাঙা ঘরের চালের ফুটোয় চোখ রেখে দিন গুনতেন হতদরিদ্র জোসনা—কখন ফিরে আসবে মুনাফাসহ সঞ্চয়ের পুরো টাকা। এখন সব টাকা হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘খেতা সিলাই করি মাসে মাসে টাকা দিছি। হামাক কইছিল বড় বিজনিস হয়, গাড়িত চড়ি অফিস্যার আইসে—হামরা বুঝি নাই, এমরা ঠগাইবে।’
দেওয়ান নজরুল ইসলাম ও জোসনা বেগমের মতো অনেকেই শরিয়াভিত্তিক ব্যবসায় বিনিয়োগের টোপে পা বাড়িয়ে কম্পানিটির হাতে তুলে দিয়েছিলেন শেষ সম্বলটুকু। সেই বিনিয়োগকারীদের চোখে এখন ‘সরষে ফুল’। দেখছেন না কম্পানির মালিক ও কর্মকর্তাদের ছায়া। অফিসও হাওয়া। অভিযোগ রয়েছে, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের তিন হাজার গ্রাহকের আট কোটি ৮২ লাখ টাকা নিয়ে আড়ালে চলে গেছেন আল হামীম প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাওলানা মুহাম্মদ এনামুল কবীর কহিনুর ও তাঁর সঙ্গীরা। কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে কম্পানিটির কর্মকর্তা ও কর্মীদের বেশির ভাগই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মী। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা।
এদিকে প্রতারকচক্রের কয়েকজন কর্মী কুড়িগ্রামে প্রায় অভিন্ন নামে কম্পানি খুলে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে ফের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চাতুরি এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে আগের ভুঁইফোড় প্রকল্পের ভাগাভাগি করে নেওয়া টাকায় রাতারাতি বিত্তশালী হয়ে উঠেছেন কয়েকজন চিহ্নিত কর্মকর্তা। তাঁদের একজন কুড়িগ্রামের উলিপুরের মাওলানা আনিছুর রহমান। তিনি কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ি, গাড়ি, জমি কেনাসহ প্রায় অভিন্ন নামে কম্পানি খুলে জারি রেখেছেন প্রতারণা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কম্পানির এমডি মাওলানা এনামুল কবীর কহিনুর এই বিপুল টাকা হাতিয়ে নিতে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন। বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে তিনি শরিয়াভিত্তিক প্রকল্প পরিচালনার কথা বলে সহজ সরল মুরিদদের ধোঁকা দিয়ে তাঁদের কষ্টার্জিত টাকা লোপাটের ছক কষেন।
মাদারীপুরের শিবচরের রাজারচর মোল্লাকান্দিতে অবস্থিত আল হামীম দারুল উলুম কমপ্লেক্স মাদরাসার মহাপরিচালক ও কম্পানির এমডি মাওলানা মুহাম্মদ এনামুল কবীর কহিনুরের সভাপতিত্বে প্রতিবছর সেখানে ওয়াজ মাহফিল হতো। সেখানেই টার্গেট করা ব্যক্তিদের নিয়ে বয়ানের মাধ্যমে টাকা দিতে উদ্বুদ্ধ করতেন কহিনুর। ফুলবাড়ীর দেওয়ান নজরুলও সেখানে গিয়ে কম্পানিতে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ হন। পরে কুড়িগ্রামে এসে তিনি শেষ সম্বল ৩৬ লাখ টাকা দুই দফায় বিনিয়োগ করেন।
১৯৯৯ সালে স্থাপিত রাজধানী ঢাকার ৪৮/১ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ইউসুফ ম্যানশনের ষষ্ঠ তলায় প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা দেওয়া থাকলেও ওই ঠিকানায় এ রকম অফিসের অস্তিত্ব নেই বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। এখন এমডি মাওলানা কহিনুর ফোনও ধরেন না। তাঁকে খুঁজেও পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে ধর্মপ্রাণ মানুষকে প্রলুব্ধ করতে কম্পানির পরিচিতিপত্রে প্রতিষ্ঠানটির উপদেষ্টা হিসেবে হেফাজতে ইসলামের শীর্ষস্থানীয় একজন ধর্মীয় নেতাসহ একাধিক ইসলামী ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
কম্পানির কর্মীরা জানান, অনেক ধর্মীয় নেতা বিভিন্ন সময় সাংগঠনিক সফরে এসে ওই কম্পানিতে বিনিয়োগ ও সদস্য সংগ্রহের ব্যাপারে দলের নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করতেন। পরবর্তী সময়ে নেতাকর্মীরা প্রতারণার বিচারের দাবি তুললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো কম্পানির সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন তাঁরা।
কম্পানিটির জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সাবেক কর্মকর্তা মাওলানা রেজাউল করিম বলেন, কম্পানির এমডি কহিনুর হঠাৎ প্রতিষ্ঠানের লোকসান দেখিয়ে জমা টাকার ৩৫ শতাংশ ফেরত দেওয়ার লিখিত অঙ্গীকার করেন। তবে লিখিত অঙ্গীকার করে সেই টাকাও বিনিয়োগকারীদের এখনো ফেরত দেননি তিনি। ২০১৮ সালে তাঁর নামে আট লাখ ৩৩ হাজার টাকার চেক ডিজওনার মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও রহস্যজনক কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। কর্মী ও কর্মকর্তারা এখন বিনিয়োগকারীদের তোপের মুখে রয়েছেন।
মাঠকর্মী আসওয়াদুর রহমান আপেল বলেন, ‘অনেক ধর্মীয় নেতা জেলা অফিসে এসে কম্পানিতে যুক্ত হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করেন। কিন্তু প্রতারণার পর তাঁরা আর পাত্তা দিচ্ছেন না।’
জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত আরেক সাবেক কর্মকর্তা মাওলানা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এমডির কথা ও কাজে অমিল দেখে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও টাকা ফেরত না দেওয়ায় আমি কম্পানির দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াই। এই কম্পানি ধর্মপ্রাণ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়েছে।’
যেভাবে ফেলা হয় ফাঁদে : কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে চার ক্যাটাগরিতে সদস্য সংগ্রহ করে সরকারি অনুমোদনের [রেজিস্ট্রেশন নম্বর সি-৪৩১৮১(২৫৪০)/২০০১] লেবাস লাগানো আল হামীম পাবলিক লিমিটেড। এর মধ্যে এককালীন কমপক্ষে এক লাখ টাকা দিয়ে যৌথ অংশীদারি সদস্য, মাসিক ২০০ থেকে ১০০০ টাকা জমা করে সাধারণ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ছাড়া স্থায়ী শেয়ারহোল্ডার ও ঋণদাতা শেয়ারহোল্ডার নামে দুটি ক্যাটাগরিতে সদস্য করে টাকা সংগ্রহ করা হয়। কাগজপত্রে ইসলামী শরিয়ায় ব্যবসা পরিচালনা ও লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে মুনাফা দেওয়ার কথা বলা হলেও কর্মীরা দ্বিগুণ লাভের কথা বলে প্রলুব্ধ করেন সাধারণ মানুষকে। কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে ২০০৬ সালে কম্পানিটি কার্যক্রম শুরু করে। ১০ বছর মেয়াদ পূর্তির পরই শুরু হয় টালবাহানা।
নিঃস্ব মানুষের কান্না : ঢাকায় বাসাবাড়িতে কাজ করে মাসে ২০০ টাকা করে কিস্তি দিতেন গৃহকর্মী ফজিলাতুন। শুধু তিনি নন, তাঁর দুই ছেলে এবং এক ছেলের বউও নিয়মিত বিভিন্ন অঙ্কে কিস্তি দিতেন। ১০ বছর মেয়াদ শেষে টাকা না পেয়ে তাঁদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। ফজিলাতুন আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘আনিছুর, আপেল, নূর মোহাম্মদ, কম্পানির এমডি হামার টাকা নিয়া বড়লোক হইছে। হামরা না খায়া থাকি।’ গৃহকর্মী ফজিলাতুনের মতো কুড়িগ্রামের বিভিন্ন গ্রামের শত শত গরিব মানুষের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কম্পানিটি। ফুলবাড়ীর সোনালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী হাবিবুর রহমান ২০১৭ সালে গৃহনির্মাণ ঋণের ৪০ লাখ টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা কম্পানির কুড়িগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাওলানা রেজাউল ইসলামের হাতে তুলে দেন। এক মাস লাভও পেয়েছিলেন তিনি। এরপর শুরু হয় গড়িমসি। এখন ঋণ সুদ-আসলে ১০ লাখ টাকা গুনে রিক্ত তিনি। ফুলবাড়ীর আতিক আল সাহান মিলনের বাবা ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা। ২০১৫ সালে পেনশনের টাকা তুলে কম্পানিতে এককালীন ১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। দুই মাস লাভ হাতে ধরা দিয়েছিল। এরপর অফিস ও এমডি লাপাত্তা। ২০১৭ সালে সেই বেদনা বুকে নিয়ে হজে গিয়ে সেখানেই মারা যান তিনি। মিলন জানান, তাঁরা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এখন অনেক চেষ্টা করেও টাকা তুলতে পারছেন না।
ভাঙছে বিনিয়োগকারীর সংসার : আল হামীমের প্রতারণার কারণে বেশ কয়েকটি পরিবারে কলহের কারণে ভেঙেছে সংসার। প্রতিষ্ঠানটির প্রতারণার ফাঁদ ফুলবাড়ীর দেওয়ান নজরুলের সংসারটাও খেয়েছে। টাকা নিয়ে মনোমালিন্যে তাঁর স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদ করে চলে গেছেন। সন্তানরাও জমিজমা ভাগ করে নিয়েছেন। উলিপুরের জানজায়গীর গ্রামের হালিমা স্বামীর রোষানলে পড়ে দুটি শিশুসন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে আছেন দুই বছর ধরে। তিনি বলেন, ‘হুজুরের কতা শুনি এক লাখ ৩০ হাজার টাকা জমা দিছি। পাঁচ বছরে দুই গুণ ট্যাকা দেওয়ার কথা ছিল। এলা টাকা দেয় না। স্বামীও বাড়ির উঠপ্যার দেয় না।’ বাসনা বেগম ঢাকায় গার্মেন্টে কাজ করে মাসে এক হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, এককালীন মোটা অঙ্কের টাকা পেয়ে বাড়িঘর মেরামত করবেন। এখন টাকা না পাওয়ায় স্বামীর সঙ্গে বিরোধ চলছে।
কর্মীরা তোপের মুখে : ফুলবাড়ীর শিমুলবাড়ীর আফজাল হোসেন ২০০৮ সালে আল হামীম কম্পানির কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০১৭ সালে কম্পানিতে সমস্যা দেখা দেওয়ার আগেই ২৪ জন গ্রাহকের পাঁচ লাখ ৯২ হাজার টাকা দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে জমা দিয়েছেন। ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রথমে হাফিজুর রহমান এবং পরে রেজাউল করিমের কাছে টাকা জমা দিয়ে রশিদ নিয়েছেন অনেকেই। এখন এসব কর্মী আর সাড়া দিচ্ছেন না। আফজাল হোসেন বলেন, ‘আলেম ওলামাদের ব্যবহার করে এত বড় প্রতারণা হবে বুঝতে পারি নাই। এখন সদস্যরা টাকা দেওয়ার জন্য আমাদের চাপ দিচ্ছে। আমরা কিভাবে টাকা দেব?’
একই অবস্থা উলিপুরের কামালখামার গ্রামের মসজিদের ইমাম নূর মোহাম্মদের। তিনি জানান, রেজাউল ও আনিছুরের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কম্পানির কর্মী হিসেবে ২০০৮ সাল থেকে তিনি কাজ শুরু করেন। ৩৫০ জন সাধারণ গ্রাহকের মাসিক কিস্তির ৫০ লাখ টাকা ও ১৪ জন গ্রাহকের এককালীন বিনিয়োগ হিসেবে আট লাখ ৬৩ হাজার টাকা তুলে দেন। তিনি জানান, মেয়াদ পূর্তির পর টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করায় উলিপুর থানায় ওই দুজনের নামে একটি এজাহার করেন তিনি।
মাদরাসা শিক্ষক উলিপুরের ধরনিবাড়ী এলাকার উমর ফারুকও কাজ করেছেন কম্পানির মাঠকর্মী হিসেবে। তিনি বলেন, ‘মাঠ থেকে টাকা তুলে আসওয়াদুর রহমান আপেল ও আনিছুর রহমানের কাছে জমা দিয়েছি। ১০ বছর মেয়াদ পূর্তির দুই-তিন বছর পরও লভাংশ ও আসল টাকা সদস্যদের ফেরত না দেওয়ায় তাঁর বাড়ি প্রায়ই ঘেরাও করছেন বিনিয়োগকারীরা।’
আবার নতুন ফাঁদ : আল হামীম পাবলিক লিমিটেডের দায় নিতে নারাজ তৎকালীন জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাওলানা আনিছুর রহমান। কিন্তু প্রতারণার কৌশল হিসেবে ‘আল হামীম বিজনেস অ্যান্ড কমার্স’ নামে নতুন কম্পানি খুলে ফের প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন আনিছুর। বিনিয়োগ করার শর্তে তিন হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে এরই মধ্যে তিন কোটি টাকাও সংগ্রহ করেছেন। প্রকল্প হিসেবে পোস্টার ও অন্যান্য প্রচারপত্রে বিনিয়োগ, আবাসন, মৎস্য ও ডেইরি খামার, নার্সারি ও বনায়ন, হেলথ এন্টারপ্রাইজসহ ১৩টি চলমান প্রকল্প দেখানো হলেও বাস্তবে দু-একটি ছাড়া অন্যগুলোর কোনো অস্তিত্বই নেই।
কুড়িগ্রামের রাজারহাটের উমরমজিদ ইউনিয়নের বালাকান্দি গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, একটি ছোট পুকুরে সামান্য কিছু মাছের চাষ ও তিনটি গরু ছাড়া কিছুই নেই। আনিছুরের চাচাশ্বশুর এমদাদুল হক বলেন, ‘কোনো চুক্তি নাই। কম্পানির নামেও চাষ হচ্ছে না। জামাই চেয়েছে তাই মাছ চাষ করতে দিয়েছি।’ নাজিমখান ইউনিয়নের বটতলা বাজারে ১৭ শতক জমির ওপর দ্বিতল মার্কেট নির্মাণাধীন। বর্তমানে নির্মাণকাজও বন্ধ। স্থানীয়রা জানান, প্রত্যন্ত এলাকায় মার্কেট চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। মূলত আনিছুর আগের কম্পানির জমি ও সম্পদ দখলে রাখা এবং গ্রাহকদের প্রতারণা করার জন্যই এ মার্কেট নির্মাণ করেছেন।
এ ব্যাপারে আনিছুর রহমান দেন পরস্পরবিরোধী বক্তব্য। জনগণের টাকার দায় মেটানোর জন্য নতুন কম্পানি পরিচালনার কথা বললেও আগের আট কোটি ৮২ লাখ টাকার কোনো দায় নিতে নারাজ তিনি। নতুন কম্পানির এমডি হওয়ার পর বেতনের টাকা সাশ্রয় করে গাড়ি ও বাড়ির মালিক হয়েছেন জানালেও তিন বছর আগে তাঁর কিছুই ছিল না বলে স্বীকার করেন তিনি।
কোথাও মিলছে না প্রতিকার : এদিকে প্রতারণার শিকার কয়েকজন বিনিয়োগকারী থানা ও উপজেলা পরিষদে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না।
উলিপুর থানার ওসি ইমতিয়াজ কবীর জানান, আল হামীম কম্পানির প্রতারণা নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উলিপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-এ জান্নাত রুমি জানান, তাঁর দপ্তরে অভিযোগ এসেছে। অভিযোগটি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতারণার ব্যাপারে আল হামীম প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাওলানা মুহাম্মদ এনামুল কবীর কহিনুরের সঙ্গে সোম ও মঙ্গলবার কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় কথা বলা যায়নি।
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন