তাকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে আবেদনময়ী রাজনীতিক। তার রূপের প্রশংসা গেয়েছেন ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনি। তার রূপে ডুবে গিয়েছিলেন তিনি। তাই একবার বেরলুসকোনি বলেছিলেন- যদি আমি বিবাহিত না হতাম, তাহলে কালবিলম্ব না করে তাকে বিয়ে করতাম। এ নিয়ে তার তখনকার স্ত্রীর সঙ্গে তীব্র বিরোধ দেখা দেয়। বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন ইতালির এই রাজনীতিক, সাবেক শোগার্ল ও মডেল। ২০ বছর বয়সে তিনি ডাক পেয়েছিলেন পর্নো ছবি নির্মাতাদের কাছ থেকে। পর্নো ছবির ডাক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন যে রাজনীতিক তিনি হলেন মারিয়া রোজারিয়া মারা কাফাগনা।
তিনি হলেন ইতালির মারিয়া রোজারিয়া মারা কাফাগনা। সংক্ষেপে তিনি মারা কাফাগনা নামেই পরিচিত। সিলভিও বেরলুসকোনির ক্ষমতার সময়ে তিনি পালন করেছেন মন্ত্রীর দায়িত্ব।
ম্যাক্সিম ম্যাগাজিন ‘বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আবেদনময়ী রাজনীতিকদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল। তাতে মারা কাফাগনা এক নম্বরে ঠাঁই পান। তাকে বলা হয়, ‘বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী মন্ত্রী’। তিনি আইন শাস্ত্রে ডিগ্রি নেয়ার পর কয়েক বছর ইতালিতে টেলিভিশন শোতে অংশ নেন। করেন মডেলিং। এরপর প্রবেশ করেন রাজনীতিতে। ২০০৬ সালে ইতালির ফরজা ইতালিয়া দলের চেম্বার অব ডেপুটি নির্বাচিত হন। সিলভিও বেরলুসকোনির চতুর্থ মন্ত্রপরিষদে সমান অধিকার বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ২০০৮ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত। নেপলসে সর্বশেষ মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনে তিনি ইতালিতে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
বড় বর্ণিল তার জীবন। নাচ ও পিয়ানো নিয়ে কাজ করার পর ১৯৯৭ সালে মিস ইতালি প্রতিযোগিতায় অংশ নেন মারা কাফাগনা। এতে তিনি ষষ্ঠ স্থান অর্জন করেন। পরে এ অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, এই প্রতিযোগিতা আপনাকে নারী করে তোলে। আপনাকে পরিপক্ব করে তোলে। সব হতাশা সত্ত্বেও সেখানে বিজয়ী হওয়ার বাসনা থাকে। এতে আপনি বুঝতে পারেন, আপনি কে। এরপরে তিনি মিডিয়াসেট নামে একটি কোম্পানির হয়ে টেলিভিশনে কাজ করা শুরু করেন। এই কোম্পানিটি নিয়ন্ত্রণ করতো সিলভিও বেরলুসকোনি পরিবার। ২০০০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ‘লা ডোমেনসিয়া ডেল ভিলেজ্জিও’ নামে টেলিভিশন প্রোগ্রামে তিনি একজন শোগার্ল হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। ২০০৬ সালে ‘পিয়াজ্জা গ্রান্ডে’ নামে একটি প্রোগ্রামে নেতৃত্ব দেন তিনি। এ ছাড়া বিভিন্ন টেলিভিশন শোতে রয়েছে তার সরব উপস্থিতি। মারা কাফাগনা ম্যাক্সিম ম্যাগাজিনের ক্যালেন্ডারের জন্য পোজ দিয়েছেন। মডেলিংয়ে অতীত নিয়ে তিনি কথা বলতে আগ্রহী নন। তা সত্ত্বেও তিনি বলেছেন, এসব কাজ নিয়ে তার রক্ষণশীলতা আছে। একবার তাকে নিয়ে ছবি নির্মাণে প্রস্তাব দিয়েছিলেন পর্নো ছবি নির্মাতা টিন্তো ব্রাস। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে মারা কাফাগনা এক বিতর্কের কেন্দ্র চলে আসেন। এতে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করে। ওই সময় এক সন্ধ্যায় টেলিগাট্টো পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সিলভিও বেরলুসকোনি বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তিনি কাফাগনা সম্পর্কে বলেন, যদি আমি বিবাহিত না হতাম, তাহলে কালবিলম্ব না করে তাকে বিয়ে করতাম। বেরলুসকোনির এমন মন্তব্যে তার স্ত্রী ভেরোনিকা ল্যারিও ক্ষেপে যান। তিনি জাতীয় পত্রিকার মাধ্যমে এ মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান। পরে অবশ্য ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন বেরলুসকোনি। পরে অবশ্য বেরলুসকোনির ওই মন্তব্যকে তিনি সাহসী এবং নির্দোষ বলে বর্ণনা করেন। ভেরোনিকা ল্যারিও কেন অমন প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তিনি তার কিছুই বুঝতে পারেননি।
২০০৮ সালের ৫ই জুলাই। এদিন আর্জেন্টিনার জার্নাল ক্লারিন দুর্নীতি বিরোধী তদন্তে ফোনে আড়ি পাতার রেকর্ড নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে। সাংবাদিক জুলিও আলগানারাজ লিখেছেন, মারা কাফাগনা এবং সিলভিও বেরলুসকোনি রগরগে টেলিফোন সংলাপে মত্ত ছিলেন। তবে ওই ফোনালাপ প্রকাশ হয়নি কখনো। সিলভিও বেরলুসকোনির দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্র বিষয়ক সাবেক উপমন্ত্রী ও সমাজতান্ত্রিক নির্বাহী মার্গারিটা বোনিভারের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে লা রিপাবলিকা। এতে বোনিভার ওই সংলাপের অস্তিত্ব আছে বলে স্বীকার করেন। পরে তিনি মারা কাফাগনারের কাছে ক্ষমা চান। ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে যায়। ওদিকে মারা কাফাগনাকে মন্ত্রীপরিষদে ঠাঁই দেয়ায় সিলভিও বেরলুসকোনির তীব্র সমালোচনা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ শিরোনাম হয়। তাতে বলা হয়, শোগার্লকে, টপলেস মডেলকে মন্ত্রীপরিষদে ঠাঁই দিয়েছেন বেরলুসকোনি।
রাজনৈতিক জীবনে সুনির্দিষ্ট কিছু ইস্যুতে মারা কাফাগনা ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। যেমন তার নিজের শহর সালেরনোতে অপরাধের মাত্রা। সেখানে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তিনবার তিনি সিঁদ কাটা চুরির শিকারে পরিণত হয়েছেন। তিনি সমকামী বিয়ের বিরোধী। তিনি দাবি করেন, সন্তান জন্ম দেয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত বৈবাহিক সম্পর্ক। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি রাজপথে পতিতাবৃত্তিকে একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে একটি নতুন আইন প্রস্তাব করেন। এই আইনে পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত নারী ও তার খদ্দের উভয়কেই জরিমানা করার কথা বলা হয়। মন্ত্রী হিসেবে এটাকে তার সবচেয়ে বড় উদ্যোগ হিসেবে দেখা হয়।
তিনি তখন বলেছিলেন, বর্তমানে ইতালিতে দালালদের মাধ্যমে পতিতালয় চালানো এবং পতিতাদের বিপথগামী করা অবৈধ। কিন্তু পতিতাবৃত্তিকে অপরাধ হিসেবে ধরা হয়নি। তাই তিনি রাজপথে উন্মুক্ত পরিবেশে পতিতাবৃত্তিকে একটি লজ্জাজনক প্রবণতা বলে উল্লেখ করেন কাফাগনা। কিন্তু তার এ বিলের কড়া সমালোচনা করেন পতিতাবৃত্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি ও অন্যান্য দাতব্য সংস্থা। তবে কিছু ক্যাথলিক দাতব্য সংস্থা তাকে পতিতাবৃত্তিকে সামাজিক মারাত্মক একটি খারাপ অধ্যায় হিসেবে আখ্যায়িত করে এর বিরুদ্ধে সাহস দেখানোয় তার প্রশংসা করেছে। এই আইনটি ২০০৯ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি অনুমোদিত হয়। এর নাম দেয়া হয় ‘ডিক্রিতো মারোনি’। একই বছর তিনি ইতালিতে সমকামিতার বিরুদ্ধে প্রচারণা বিষয়ক একটি বিলে স্বাক্ষর করেন। সমকামিতার বিরুদ্ধে একটি বিল প্রস্তাব করেন। তবে এই বিলটি পরে প্রত্যাখ্যাত হয় পার্লামেন্টে।